গভীররাতে চলন্ত বাসেই সন্তান প্রসব করালেন পটিয়ার চিকিৎসকরা

ঢাকা নারায়ণগঞ্জের মোহাম্মদ আবদুল্লাহ যাচ্ছিলেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায়। সঙ্গে ছিলেন তার গর্ভবতী স্ত্রী ফারেছা। চকরিয়ার হাসের দিঘী এলাকায় ফারেছার বাড়ি। তাদের বহনকারী রিলাক্স পরিবহনের বাসটি যখন চট্টগ্রামের পটিয়া তখন গভীর রাত। ঘড়ির কাঁটা আড়াইটার ঘর ছুঁই ছুঁই করছে। ঠিক সে সময়েই প্রসব বেদনা উঠে স্ত্রী ফারেছার।

বাস চালকের কানে খবরটি যাওয়ার পরপরই বিচক্ষণ চালক নিলেন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। পটিয়ার কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চালক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরই প্রবেশ করালেন বিশাল আকৃতির বাসটি। সেখান থেকে বাস যাত্রীরাই ডেকে আনলেন জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। পরিস্থিতি তখন এমন, ফারেছাকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় নেই। বাসের ভেতরেই করতে হবে সন্তান ডেলিভারির আয়োজন।

ওই হাসপাতালের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বাসের ভেতরেই ফারেছা প্রসব করলেন ছেলে সন্তান। বাসের ভেতর নিরাপাদে প্রসূতি মায়ের সন্তান জম্মদানের মতো চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সাক্ষী হলেন বাসের সব যাত্রী। বর্তমানে মা ও সন্তান দুজনে ভালো আছেন।

সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সন্তানের পিতা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এই পুরো বিষয়টির কৃতিত্ব দেন রিলাক্স পরিবহনের বাস চালক, বাসের যাত্রী, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সহকারী সার্জন ডা. রাজিব দে, মিডওয়াইফ বিবি হালিমা ও শরিফা জেসমিনকে।

তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘স্ত্রীসহ নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এলাকা থেকে চকরিয়ায় শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। এ সময় আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে ঘাবড়ে যাই আমি। কিন্তু বাস চালক, বাসের যাত্রী ও পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় আমি সুস্থ সন্তানের পিতা হলাম। আমার স্ত্রীও সুস্থ আছেন। চিকিৎসকরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে বাসের ভেতরেই ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছেন। কারণ ওই সময় ফারেছাকে বাস থেকে নামানোর কোনো সময়-সুযোগ ছিল না।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সহকারী সার্জন ডা. রাজিব দে বলেন, ‘সোমবার দিবাগত গভীর রাত আড়াইটার দিকে হঠাৎ করে বেশ কয়েক জন লোক জরুরী বিভাগে আসে। তারা সকলেই একটি বাসের যাত্রী। তারা জানায়, এক যাত্রীর প্রসব বেদনা উঠেছে। আমরা দ্রুত বাসে উঠি। কিন্তু রোগীকে সেখান থেকে নামানোর কোনো সুযোগ ছিল না। তাই বাসেই তার সন্তান প্রসব হয় আমাদের চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে। বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। পরে হাসপাতালে এনে মা ও সন্তান দুইজনকে চিকিৎসা প্রদান করি। বর্তমানে দুইজনই ভালো আছেন। মঙ্গলবার দুপুরে তাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাদের হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে।’

হাসপাতালের মিডওয়াইফ বিবি হালিমা ও শরিফা জেসমিন বলেন, ‘এমন একটি কাজ আমরা করতে পেরেছি, যা নিয়ে আমরাই হতবাক। কীভাবে এমন সাহস পেলাম জানিনা। যদিও এ ব্যাপারে বাস যাত্রীদের সবার সহযোগিতা ছিল। ডেলিভারির সময় যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। কারণ, তখন মাকে কোথাও নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি সুন্দরভাবে সফল করার পাশাপাশি মা এবং নবজাতকের সেবা করতে পেরে আমরা সবাই আনন্দিত।’

নবজাতকের মা ফারেছা বলেন, ‘এমন হবে আমরা ভাবতে পারিনি। অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো। এ সময় যে কোনো বিপদই ঘটতে পারতো। আমি অনেক খুশি। আমি ভালো আছি। বাচ্চাও ভালো আছে।

এদিকে চলন্ত বাসে সন্তান জন্ম দেওয়ার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মা ও নবজাতককে দেখতে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মঙ্গলবার ভিড় জমায় উৎসুক মানুষ।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!