গণপরিবহন সংকটে জনদুর্ভোগ, করোনার ঝুঁকি নিয়ে গাদাগাদিতে যাতায়াত

চট্টগ্রামে গণপরিবহন সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। নগরের জনসংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি গণপরিবহন। বরং প্রতিনিয়তই কমছে। চট্টগ্রামের সড়কে বাস নামানোর কথা বলা হলেও কয়েকবছর ধরে নামেনি নতুন কোনো গণপরিবহন। ফলে সাধারণ মানুষকে করোনার ঝুঁকি নিয়ে গাধাগাধি যাতায়াত করতে হচ্ছে। গণপরিবহন সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবার অনেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করছে। ফলে পরিবহন সংকটে দিন দিন বাড়ছে যাত্রীদের দুর্ভোগ।

বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ৬০ লাখ জনসংখ্যার এই চট্টগ্রাম নগরীর ১৩টি রুটে ৯ হাজার ৩১টি গণপরিবহন চলাচল করে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৮৭টি বাস, ২ হাজার ২২১টি মিনিবাস, ৪ হাজার ৩১৩টি হিউম্যান হলার ও ১ হাজার ১১০টি টেম্পো। এছাড়া ১৩ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৩ হাজার প্রাইভেট অটোরিক্সা ও ১ লাখের বেশি রিকশা চলাচল করে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ব ব্যাংকের জরিপ মতে, নগরীর ৯২ শতাংশ যানবাহনই ছোট আকৃতির (রিকশা, অটোরিক্সা, ব্যক্তিগত গাড়ি)। এগুলো মাত্র ৩০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে থাকে।

অন্যদিকে গণপরিবহনের সংখ্যা ৮ শতাংশ। এসব গণপরিবহন বাকি ৭০ শতাংশ যাত্রী পরিবহন করে। ফলে গণপরিবহন সংকটের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর সাধারণ মানুষকে ফিটনেসবিহীন লক্কর-ঝক্কর গাড়ি গাড়ি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

বিআরটিএ’র হিসাব মতে, চট্টগ্রাম নগরীতে বাস-মিনিবাস ও হিউম্যান হলার মিলে ৯ হাজার ৩১টি গণপরিবহনের হিসেব থাকলেও বাস্তবে তা অর্ধেকের চেয়ে কিছু বেশি সড়কে চলাচল করে। এছাড়া ইপিজেড, সিপিইজেডসহ মোট ৮০০ শতাধিক পোশাক কারখানার শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য নিজস্ব কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। এসব কারখানায় মাসিক ভিত্তিতে প্রায় ৪-৫শ বাস-মিনিবাস ভাড়ায় শ্রমিকদের আনা-নেওয়া করে। এর ফলে গণপরিবহনের সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করে।

জানা গেছে, নগরের দুটি রুটে বিআরটিসির পাঁচটি বাস চলাচল করে। অভিযোগ রয়েছে মালিক-শ্রমিক নেতাদের আপত্তির কারণে নগরীতে বিআরটিসি বাস বাড়েনি। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আউটসোর্সিং বিনিয়োগের মাধ্যমে ২০০ এসি বাস নামানোর ঘোষণা দিলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। প্রাথমিকভাবে বাসগুলো কালুরঘাট থেকে পতেঙ্গা, লালদীঘি থেকে ভাটিয়ারি এবং নিউমার্কেট থেকে ফতেয়াবাদ রুটে চলাচলের কথা ছিল।

সর্বশেষ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন গত ২০ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছে নগরের অন্তত তিনটি রুটে বিআরটিসি বাস চালুর অনুরোধ করেন।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহ জালাল মিশুক বলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জনসংখ্যা ৬০ লাখেরও বেশি হলেও গণপরিবহন সংখ্যা নগন্য। চট্টগ্রামের জনসংখ্যা দিন দিন বাড়লেও বাড়ছে না গণপরিবহন। গণপরিবহন সংকটের কারণে মানুষ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছে। যাতায়াত খরচও বেড়েছে। তাই অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা পূরণের জন্য অতিদ্রুত গণপরিবহন বাড়ানোর বিষয়ে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, নগরের গণপরিবহন সংকট নিরসনে আগামী মাসের মধ্যে তিনটি রুটে বিআরটিসির ২২টি এসি-ননএসি বাস নামবে। এছাড়া এস আলম গ্রুপের সঙ্গে আগের করা চুক্তির বাসও সড়কে নামতে পারে। এসব বাস সড়কে নামলে আশাকরি গণপরিবহন সংকট কিছুটা কমে আসবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!