গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের ক্ষোভ

পরিবহন ধর্মঘট চলাকালীন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সারাদিন যাত্রীদের কাছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। নগরীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থানরত যাত্রীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
প্রসংগত, রোববার (২০ অক্টোবর) নগরীর বহদ্দারহাটে গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় চালাক, হেলপারসহ মালিককে কারাদণ্ড দেন বিআরটি এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম মনজুরুল হক। তার প্রতিবাদে গণপরিবহন শ্রমিক মালিকরা ধর্মঘট ডাকে।

এরই প্রতিক্রিয়ায় নগর জুড়ে গণপরিবহন সংকট। সেই সংকটকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে পরিবহন চালকেরা। নগরীর নিউ মার্কেট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি, লালখান বাজার, টাইগার পাস, দেওয়ানহাট,বাদামতলী,আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, ষোলশহর, জিইসি মোড়সহ শহর জুড়ে স্বল্প সংখ্যক গণপরিবহনের পাশাপাশি রিক্সা, সিএনজি, টমটম, ইজিবাইক, লেগুনাসহ কয়েক রকম যানবাহন চলতে দেখা যায়। এসব গাড়ির যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

নিউমার্কেট থেকে ছেড়ে যাওয়া তিন নম্বর রুটে গাড়ির কয়েকজন যাত্রী জানান, আজকে সড়কে তেমন কোন গাড়ি নাই। এ অবস্থায় আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুয়েক ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি মিলছে না। যাও এই গাড়িটি মুরাদপুর পর্যন্ত যাবে তাও আবার নির্ধারিত ভাড়া দ্বিগুণ দিতে হবে। এখন দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে ওঠা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। নাহলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে হবে। গণপরিবহনে কাছে আমরা সব সময়ই জিম্মি থাকি।

ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ মোয়াজ্জেম ক্ষোভের স্বরে বলেন, সকালে আসার সময়ও অনেক কষ্ট করে ভাড়াও দ্বিগুণ দিয়ে অফিসে আসলাম। এখন আবার যাওয়ার সময় কোন গাড়িও পাচ্ছি না। সিএনজিকে জিজ্ঞেস করলাম ৩/৪ শত টাকার নিচে যাবে না সে। নিউমার্কেট থেকে চকবাজার এত টাকা কি করে হয়! আমরা কি টাকার গাছ নাকি!

চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী আজমল হোসেন বলেন, বাসা থেকে যে টাকা দিয়েছিল কলেজে যাওয়ার সময় বাড়তি ভাড়া দিয়ে দিয়ে শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি বাসায় যাওয়ার জন্য পর্যন্ত আমার কাছে টাকা নাই। তাই হেঁটেই বাসায় যাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীরা তো আর চাকরি করি না যে যখন খুশি ভাড়া বাড়িয়ে দেবে আর আমরা দিতে থাকব।

স্কুল শিক্ষিকা রেহেনা পারভিন বলেন, শহরে কোন গণপরিবহন নাই। যে কয়েকটা গাড়ি চলাচল করছে তাও অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে। ৫ টাকার ভাড়া ১০/২০/৩০টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। রিক্সা তো একশোর নিচে যাবেই না। সিএনজির কথা আর কি বলব। সিএনজি তে উঠলেই মনে হয় ২-৩ শ টাকা গুণতে হবে এমন।

কোতোয়ালীর মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি চালক আব্দুস সোবহানকে বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে খুব বিরক্তির স্বরেই উত্তর দিলেন— ‘সব সময় তো আর আদায় করি না। আজকে আমাদের সময় আমরা একটু ইনকাম করছি আর কি তাতে সমস্যা কি?’

তিন নম্বর রুটে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাড়িচালক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আজ রাস্তায় গাড়ি নাই আপনিও দেখতে পাচ্ছেন।তাও আমরা কয়েকজন মিলে যাত্রীদের কথা চিন্তা করে রাস্তায় গাড়ি নামিয়েছি খুবই ভয়ে ভয়ে। মালিক পক্ষ থেকে আন্দোলন হচ্ছে যে কোন সময় গাড়ি ভাংচুর করতে পারে। তারপরেও একটু বাড়তি ভাড়া নিয়ে আমার গাড়ি চালাচ্ছি। আমরা ঝুঁকি নিয়েছি তাই ভাড়াও বাড়তি নিচ্ছি।

এদিকে মালিক সমিতির দাবি তারা কোন ধর্মঘট ডাকে নি। তারপরও সকাল থেকে রাস্তায় কোন গণপরিবহন দেখা যাচ্ছে না।

আরএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!