খেলার ‘অপরাধে’ চট্টগ্রামের স্কুলে কাবাডি দলকে ধরে পেটালেন প্রধান শিক্ষিকা

প্রতিবাদে মাথার চুল ফেলে ন্যাড়া কোচ নারী শিক্ষিকা

একদিকে যখন সারা বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয় উদযাপন করছে, ঠিক সেই সময় খেলতে যাওয়ার ‘অপরাধে’ চুল ধরে কাবাডি দলের ছাত্রীদের পিটিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। এমন ঘটনার পর ওই স্কুলের ক্ষুব্ধ ক্রীড়াশিক্ষক নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ছাত্রীদের পক্ষ নেওয়ায় ওই ক্রীড়াশিক্ষককে এখন স্কুলেই ঢুকতে দিচ্ছেন না সেই প্রধান শিক্ষিকা— মিলেছে এমন অভিযোগও।

গত রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে।

খেলার ‘অপরাধে’ চট্টগ্রামের স্কুলে কাবাডি দলকে ধরে পেটালেন প্রধান শিক্ষিকা 1

জানা গেছে, ৪৯তম জাতীয় গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ছাত্রীদের কাবাডি দলকে মাসখানেকেরও বেশি সময় ধরে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিলেন এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন। তিনি কাবাডি ফেডারেশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একমাত্র নারী কোচ।

জানা গেছে, প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কাবাডি দলের মেয়েরা প্রশিক্ষক জাহিদা পারভীনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রুপ ছবি তোলে। এটা দেখে ক্ষেপে যান ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী।

অভিযোগ মিলেছে, গ্রুপ ছবি তোলার পরপরই প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী এসে ছাত্রীদের ক্ষুব্ধস্বরে জিজ্ঞেস করেন কী কারণে তারা চুলে ফ্রেঞ্চ বেনী বানিয়ে জার্সি পরে ছবি তুললো? মাঠে তাদের খেলতেই বা কে বলেছে? প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী একপর্যায়ে কাবাডি দলের ছাত্রীদের কয়েকজনকে চুল ধরে মারতে থাকেন। এ সময় তিনি গালিগালাজও করেন বলে জানা গেছে।

এদিকে প্রশিক্ষণার্থী ছাত্রীদের তুচ্ছ কারণে এমন হেনস্তার শিকার হতে দেখে তার প্রতিবাদ জানান কাবাডি দলের কোচ ও ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী তাতে কর্ণপাত না করে উল্টো কাবাডি দলের মেয়েদের খেলার মাঠে খেলতে নামাই নিষিদ্ধ করে দেন। এমনকি বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্কুলে ঢুকতে বাধা দেন শিক্ষিকা জাহিদা পারভীনকেও। কাবাডি দলের মেয়েদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে জাহিদার সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে— এমন অভিযোগও করেছেন ওই শিক্ষিকা নিজেই।

কোথাও কোনো প্রতিকার না পেয়ে কাবাডি দলের কোচ শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন ক্ষোভে-অভিমানে নিজের মাথার সব চুল ফেলে ফেসবুকে সেই ছবি পোস্ট করে লিখেন— ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্রেঞ্চ বেনী করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়ার অপরাধ আমার স্কুলের হেডমাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে?’

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে জাহিদা পারভীন বলেন, ‘এখন আমাকে চাকরি থেকে বিদায় করছে আমার বকেয়া কোনো পাওনা না দিয়ে। আজকে স্কুলে মেয়েদের সাথে ক্লাস করতে দেয়নি। ভদ্র ভাষায় হেডমাস্টার বাসায় চলে আসতে বলেছেন।’

নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকার প্রতি জহিরুল আলম দোভাষের ‘প্রশ্রয়’কেও এমন ঘটনার পেছনে দায়ী বলে মনে করছেন কাবাডি দলের ওই নারী কোচ।

কাবাডি ফেডারেশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একমাত্র নারী কোচ জাহিদা পারভীন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়েরা খেলার মাঠে খেলতে নামার অনুমতি পায়নি। আমাকে এখন পাগল প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। আমি হুমকির ভেতর আছি আর খুব অসুস্থ। সুস্থ হলেই মামলা করবো।’

অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!