খেপেছেন মনোরোগের ডাক্তাররা, চেম্বারে আর রোগী দেখবেন না

এএসপি আনিসুল হত্যা মামলায় ডাক্তার গ্রেপ্তারের জের

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা প্রাইভেট চেম্বার ও অনলাইন সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বন্ধের এই ঘোষণা বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য।

বৃহস্পতিবার এক জরুরি সভায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপি) এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানে তাদের চিকিৎসাসেবা চলবে। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো ওয়াজিউল আলম চৌধুরী।

ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আগামী শনিবার থেকে লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুকে ভিডিও ফুটেজে যেভাবে দেখানো হয়েছে— সেটা অগ্রহণযোগ্য, করুণ এবং অমানবিক। তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে— যা অন্যায়, অনভিপ্রেত এবং নিন্দনীয়।’

সংগঠনটির পক্ষ থেকে ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনের নিঃশর্ত জামিন দাবি করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে হাসপাতাল সংলগ্ন বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর ওই দিনই ডা. মামুনকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। ডা. মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে আসা রোগীদের ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে পাঠাতেন।

জানা যায়, ২০১৯ সালের জুলাইয়ে রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই অবৈধ এই হাসপাতালের সঙ্গে কমিশন নিয়ে কাজ করতেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন। সর্বশেষ সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমসহ কমপক্ষে ২৫ জন রোগীকে ওই হাসপাতালে পাঠিয়েছেন ডা. মামুন। প্রতি রোগী থেকে গড়ে কমিশন বাবদ ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি। দুই দিনের রিমান্ডের প্রথম দিনে তিনি এসব তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা।

গত ৯ নভেম্বর মাইন্ড এইড হাসপাতালেই চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যান পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুল করিম। পরে হাসপাতালের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হলে তাতে দেখা যায় একদল ব্যক্তি আনিসুল করিম ওই হাসপাতালে যাওয়ার পর তাকে একটি রুমে নিয়ে মারধর করছেন। অভিযোগ ওঠে- মারধরের সময় পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুলের মৃত্যু হয়।

পুলিশ জানায়, ভিডিও ফুটেজে যারা আনিসুল করিমকে টেনেহিঁচড়ে ওই কামরাটিতে নিয়ে যায় তারা কেউই চিকিৎসক ছিলেন না। এদের মধ্যে চার জন ওয়ার্ড বয়, দুজন সমন্বয়কারী, আর কয়েকজন পরিচ্ছন্নকর্মী ছিল।

ঘটনায় সংশ্লিষ্টসহ মোট ১১ জনকে ১০ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যাদের মধ্যে হাসপাতালটির পরিচালক ডা. নিয়াজ মোর্শেদও রয়েছেন। এদের ১০ জনকে আদালতে হাজির করার পর আদালত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে আদাবর থানায় হত্যা মামলা করেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডা. মামুনের বিরুদ্ধে করা মামলাকে বেআইনি, বিদ্বেষমূলক এবং দেশের চিকিৎসক সমাজের জন্য অপমানজনক এবং মানহানিকর উল্লেখ করে অধ্যাপক ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘এএসপি আনিসুল করিম শিপনের মামলাটি পুলিশ তদন্ত করছে এবং তারাই মামলা চালাচ্ছে। তাই এ মামলা কতটা নিরপেক্ষ হবে তা নিয়ে আমরা সন্দিহান।’ তিনি এ মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলেনে সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় ডা. মামুনকে গ্রেফতার করা হলো, তা বেআইনি ও বিদ্বেষমূলক। আর এটা কেবল মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের জন্য নয়, সব চিকিৎসকের জন্য অপমানজনক ও মানহানিকর।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!