খুলশীর ‘মেয়ের দালাল’ আলম গোয়েন্দা জালে ধরা

খুলশীর হাবিব লেনে আলমের গেস্টহাউজে ইয়াবা থেকে যৌনব্যবসা সবই চলে

মরণনেশা ইয়াবার পাইকারি-খুচরা বাণিজ্য চলে এই ভবনে। সেবনের জন্যও এতে ছিল বিশেষ ব্যবস্থা। ‘দামী’ কলগার্লদের অবাধ যাতায়াত ছিল এই ভবনে। মানব পাচারের আয়োজনও হতো এই ভবন থেকে। অন্ধকার জগতের লোকজনের আনাগোনা লেগে থাকতো হরহামেশাই। চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকা খুলশীর এই ভবনের মালিক মো. আলম।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিভিন্ন আইনে আট থেকে দশ মামলার আসামী এই আলমকে পটিয়া থেকে গ্রেফতার করেছে নগর গোয়েন্দা (উত্তর) পুলিশ। সোমবার (৫ জুলাই) তাকে খুলশী থানায় হস্তান্তর করেছে।

খুলশী থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল আলমকে গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা আছে।’

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুজ্জামান বলেন, ‘মানব পাচার ৬টি মামলার হদিস মিলেছে। আর কোন থানায় মামলা রয়েছে কিনা যাচাই করা হচ্ছে।’

এর আগে নগরীর খুলশীর হাবিব লেনে ‘আলমের গেস্ট হাউজ’ নামে পরিচিত ভবনটিতে ২০১৬ সালে তিনবার অভিযান চালিয়েছিল প্রশাসন। তবুও থামেনি আইনবিরোধী ব্যবসাসহ অনৈতিক কাজ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই গেস্ট হাউজের ভেতরে চলছে ইয়াবা ব্যবসা, ইয়াবা সেবন, মাদক বিকিকিনিসহ বিভিন্ন বেআইনি কর্মকাণ্ড। এটি একসময় খুলশী থানার সাবেক ওসি মঈনুলের নামেই চলতো। ভারতীয় হাই কমিশনের ভিসা জমাদান কেন্দ্র থেকে মাত্র ১০০ গজের ব্যবধানে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা শুনে খোদ সিএমপি পুলিশ কর্মকর্তারাও বিস্মিত হয়েছেন।

সূত্র জানায়, অভিযুক্ত আলমের সাথে পুলিশের বিশেষ সখ্যতায় চলছে এ অনৈতিক কার্যক্রম। নগর পুলিশের বিশেষ নজরদারিকে ফাঁকি দিয়ে থানার ক্যাশিয়ার ও পুলিশের বিশেষ সংস্থাকে মাসোহারা দিয়ে খুলশীর ওই স্পটে দিনরাত চলে ইয়াবা ব্যবসা, নিরাপদ ইয়াবা সেবন, মাদক বিকিকিনি, ম্যাসাজ সেন্টারের নামের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড। পরপর তিনটি অভিযানেও তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। গ্রেফতার হলেও অপরাধীদের থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও তদবির করার অভিযোগও আছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, খুলশীর হাবিব লেনে অবস্থিত ওই গেস্ট হাউজ ভবনটির মালিক জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী মমতাজ বেগম। তিনশো টাকার স্ট্যাম্পে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম ও মাসিক ৮০ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি হয় আলমের সাথে। ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০৩১ সালের ১ মার্চ পর্যন্ত এ চুক্তির মেয়াদ কার্যকর থাকবে বলে উল্লেখ আছে চুক্তিতে।

২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি ওই গেস্ট হাউজে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্র্যাট তাহমিলুর রহমান বিশেষ অভিযান চালিয়ে চার বোতল ভদকা, মাদকদ্রব্যের উপকরণ, অবৈধ কাজে নিয়োজিত ১১ তরুণী, ১৫ খদ্দেরকে গ্রেফতার করে। এছাড়া ১ লাখ ৯৯০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ সময় অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে মাসুমকে ছয় মাস, পারভেজকে এক মাস, আমজাদ ও মানিককে ১৫দিন কারাদণ্ড দিয়েছিলো আদালত। ওইদিন সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গেস্ট হাউজটি সিএমপির সাবেক ওসি, মইনুল ইসলাম ভূঁইয়ার বলে উল্লেখ করা হয়। এতে পার পেয়ে যায় গেস্ট হাউজের মুল হোতা হকার আলম প্রকাশ মো.আলম। সেই ঘটনায় ওসি মাইনুলকে ক্লোজ করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশেষ নিরাপত্তার জন্য আছে প্রথমে লোহার দরজা। তারপর দেওয়া আছে কলাপসিবল গেট। বাইরে থেকে কিছু বোঝা না যাওয়ার জন্য অন্ধকার করে রাখা হয়েছে নিচতলা। দুর থেকে বোঝার উপায় নেই ভেতরে কি হচ্ছে? গেটটি সবসময় তালা দেওয়া থাকে। চাবি হাতে আশপাশে দায়িত্বে আছে একজন। গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় ভিন্ন এক পরিবেশ। নিচতলার গেটে যতটা নিরবতা ভেতরে ততটা জমজমাট। ছয়মাস সাজা খাটার পুরষ্কার হিসেবে মাসুমকে ওই গেস্ট হাউজের ম্যানেজার করা হয়েছে। গেস্ট হাউজটির অন্যতম কর্ণধার আলম ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে ম্যানেজার মাসুমকে দিয়ে পরিচালনা করছেন এ সকল অনৈতিক কর্মকাণ্ড।

সূত্র জানিয়েছে, ভবনের ছাদে বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। যাতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় মুহূর্তেই নিরাপদে সরে যেতে পারে খদ্দেররা।

গ্রেফতার হওয়া আলমের বিষয়ে জানা গেছে, নগরীর স্টেশন রোডে পকেটমার চক্রের অন্যতম হোতা আলম। তিনি পকেটমার চক্রের নেতা ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গেস্ট হাউজের চুক্তির সূত্র অনুযায়ী মো.আলম প্রকাশ হকার আলমের পিতার নাম আব্দুল হামিদ। তার গ্রামের বাড়ি সাতকানিয়া থানার কেরানীহাটের কেউচিয়া এলাকায়। হাবিব লেন ছাড়াও চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট ও ঢাকার একাধিক হোটেলের অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

জেএস/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!