খুলশীতে রেলের জায়গায় ঘর বানিয়ে ‘ইয়াবা’ বাণিজ্য, পুলিশ গেলেই লেলিয়ে দেয় কুকুর

গণধোলাইয়ের পর হঠাৎ ‘সাংবাদিক’

ছিলেন ছিঁচকে চোর। এরপর ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি হয়েছেন কোটিপতি। গড়ে তুলেছেন নিজের আলাদা সাম্রাজ্য। চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী এলাকায় রেলের জায়গা দখল করে গড়ে তুলেছেন ঘর। সেখানে আবার পোষেন কুকুর। পুলিশের নজর এড়াতে লাগিয়েছেন সিসি ক্যামেরা।

বাড়ির চারপাশে দিয়েছেন সীমানা প্রাচীর। সেই প্রাচীরের ভেতরে রয়েছে পালানোর আরও তিনটি পথ। পুলিশ অথবা অপরিচিত কেউ গেলেই লেলিয়ে দেন কুকুর। এখন তিনি নিজেকে পরিচয় দেন ‘সাংবাদিক’ হিসেবে। গাড়িতে সাঁটান সাংবাদিক লেখা স্টিকারও।

তিনি হলেন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর সেগুনবাগান ৪ নম্বর লেন (পশ্চিম) এলাকার জাবেদ ওরফে বান্দর জাবেদ (৪০)। মোক্তার আহম্মদের দ্বিতীয় ঘরের ছেলে তিনি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৫ জুন চোরাই মোবাইল ও ২০৭ পিস ইয়াবাসহ গণধোলাইয়ের পর পুলিশে দেয় স্থানীয় জনতা। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। ২০২১ সালের ৫ মার্চ আবারও গ্রেপ্তার হন ইয়াবা নিয়ে। তার নামে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তার বাইক ও প্রাইভেটকারে পুলিশ চোখে ধুলো দিতে লাগানো হয়েছে ‘সাংবাদিক’ লেখা স্টিকার।

শনিবার (১ এপ্রিল) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সেগুনবাগান ৪ নম্বর লেনে জাবেদের বাসায় ঢুকতেই লোহার মজবুত গেট। দীর্ঘক্ষণ গেটে টোকা দিলেও কেউ আসেনি। ভেতরে চিৎকার করছে দুটি কুকুর।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাউন্ডারির ভেতর ৯টি টিনশেডের ঘর আছে। ক্যামেরায় অপরিচিত লোক দেখেই তারা গেট খোলেনি। প্রতিদিন বিভিন্ন লোকজনের যাতায়াত আছে বাড়িতে। পরিচিতদের পরিবার সদস্যরা গেট খুলে দেয়। পুলিশকে নজরদারিতে রাখতে লাগানো হয়েছে ক্যামেরা। বাড়ির বাউন্ডারির ভিতর তিনটি পালানো পথও রয়েছে।

আরও জানা গেছে, পুলিশের তৎপরতা থেকে বাঁচতে তার দ্বিতীয় নিরাপদ ঠিকানা কোতোয়ালী থানার আলকরণ এলাকা। তার বাবা হাজী মোক্তার প্রথম স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করেন।

এছাড়া জাবেদের মা খুরশীদা বেগম বড় হন বিহারিদের একটি পরিবারে। তবে অবাঙালির ঘরে পালিত হলেও তিনি বাঙালি। কিন্তু সেই বিহারি পরিবারের নাম বিক্রি করে রেলের জায়গা দখল করে নিজেদের অবাঙালি পরিচয় দেন তারা।

এদিকে রেলওয়ে বিভাগীয় ভূসম্পত্ত দপ্তর থেকে জানা গেছে, রেলওয়ে জেলা প্রশাসকের অনুরোধে শুধু সর্দার বাহাদুর পুরাতন অবাঙালি বিল্ডিং ও তার আশপাশের অবাঙালিদের অস্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

কিন্তু সেগুনবাগান ৪ নম্বর লেনে অবাঙালি সাইন বোর্ড লাগিয়ে জায়গা দখল করা হয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে রেলওয়ে।

ইয়াবা ব্যবসা, রেলের জায়গা দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে জাবেদ সব অভিযোগ অস্বীকার করে নিজেকে কাঠ ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন।

খুলশী থানার এসআই খাজা এনাম এলাহি জানান, গোপন সংবাদ পেয়ে জাবেদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তখন কুকুর লেলিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় সে।

খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ চাকমা বলেন, ‘জাবেদকে ধরতে আমাদের টিম গেলেই কুকুর লেলিয়ে দেয়। তবে তাকে ধরতে চেষ্টা চলছে।’

জেএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!