খুনোখুনি, চোরাচালান, গুলি— কী নেই রোহিঙ্গা শিবিরে!

রোহিঙ্গা শিবিরে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। কখনও কথিত বন্দুকযুদ্ধ, কখনও ইয়াবা চোরাচালান, আবার কখনও গ্রুপ-উপগ্রুপে বিভক্ত হয়ে খুনোখুনিতে আলোচনা-সমালোচনায় শিরোনাম হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে।

বিভিন্ন সূত্রমতে, এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে পারস্পরিক হামলা ও পরিকল্পিত খুনের ঘটনায় নিহত হয়েছে অন্তত ৪৫ জন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে অন্তত ৩২ জন।আইন-শৃঙ্খলার এসব কথিত বন্দুক যুদ্ধের পর কোথাও উদ্ধার হয় গুলি আবার কোথাও ইয়াবা। তবে রোহিঙ্গাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়রা অস্ত্র থাকার কথা দাবি করে আসলেও এখনো পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি অস্ত্রের বড় কোন চালান।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুটি গ্রুপের গুলিবিনিময়ে অন্তত একজন নিহত হওয়ার পর ফের আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়। আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর ভাষ্যমতে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে ঘিরে গড়ে উঠা বাজার এবং বেশ কিছু দোকান থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে এসব গ্রুপ। মূলত চাঁদাবাজির এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সহিংস হয়ে উঠছে রোহিঙ্গারা।

এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ডাকাত গ্রুপ। যাদের বেশির ভাগই জড়িত ইয়াবা ব্যবসায়। তাই এসব বিষয়ে টাকা-পয়সা ভাগ-ভাটোয়ারা এবং ক্যাম্পে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই হচ্ছে খুনোখুনি।

এ ব্যাপারে র‌্যাব-১৫ এর সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ মোহাম্মদ শেখ সাদী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতি হিসেবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিক্ষিত নেই বললেই চলে। তারা আবার সম্প্রতি একটি কঠিন সময় পার করে এসেছে। সবকিছু মিলিয়ে তাদের উগ্র হয়ে উঠার অনেক কারণ রয়েছে। তবে এসব শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে মিয়ানমারের অস্ত্র কিংবা ইয়াবা পাচারকারীদের যোগসাজেশের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।’

তবে তাদের নানা অপরাধের কারণে শুধু কক্সবাজারই নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের বাসিন্দারাও আতঙ্কে রয়েছে। এদের হামলার শিকার হচ্ছেন স্থানীয় সাধারণ মানুষ থেকে পুলিশ, এনজিও কর্মকর্তা, দেশি-বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণ সহায়তা দিতে আসা বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু কক্সবাজারেই নয়, সারা দেশেই আতঙ্কের নাম এখন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে পালিয়ে গিয়ে সংগঠিত করছে নানা অপরাধ। সারা দেশে রোহিঙ্গারা এভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা ইয়াবা বেচাকেনাসহ নানা অপরাধ করছে। পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট তৈরি করে বিদেশ পাড়ি দেওয়ারও চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। দিনদিন এ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সরকার ও প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলেছে।

অন্যদিকে, দুই দফায় প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবতার বিষয়টি মাথায় রেখে আশ্রয় দিয়েছে সরকার কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

তবে সম্প্রতি সময়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মুখে রয়েছে মিয়ানমার। আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা মামলার শুনানির আগে মিয়ানমারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য বিশ্বব্যাপী একটি প্রচারণা শুরু করেছে ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনসহ বিভিন্ন দেশে সক্রিয় থাকা রোহিঙ্গাদের বেশ কিছু সংগঠন।

ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের ওয়েবসাইটের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের সমর্থনকারী মানবাধিকার কর্মীরা মিয়ানমারকে বিশ্বব্যাপী বয়কটের এ প্রচারণা শুরু করেছেন।

ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন ‘বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক বিবৃতিতে বলছে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা মামলার শুনানির প্রাক্কালে রোহিঙ্গা অধিকার কর্মীরা যে ‘গ্লোবাল বয়কট মুভমেন্ট’ শুরু করেছে তাতে কর্পোরেশন, বিদেশি বিনিয়োগকারী, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে মিয়ানমারের সঙ্গে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে।

বিবৃতি অনুযায়ী দশটি দেশের ৩০ মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী সংগঠন একযোগে এ প্রচারণা শুরু করেছে যার উদ্দেশ্য মিয়ানমারের সুচি ও সেনাবাহিনীর কোয়ালিশন সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।

গাম্বিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ওই শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। শুনানিতে মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যেই ‘দ্য হেগে’ পৌঁছেছেন অং সান সু চি।

এএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!