খুনিকে বাঁচাতে—‘হুইপপুত্র শারুনের’ বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ মুনিয়ার বোন নুসরাতের

ঢাকার গুলশানে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলার পিটিশনের বিষয়ে মুখ খুলেছেন তার বোন নুসরাত। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভও ঝেরেছেন তিনি।

যদিও রোববার (২ মে) নুসরাতের ভাই আশিকুর রহমানের দায়ের করা শারুনের বিরুদ্ধে এই পিটিশন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালত স্থগিত করে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের পটিয়ার সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর সন্তান নাজমুল করিম শারুন।

এদিকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় শারুনকে জড়িয়ে নতুন করে মামলা দায়েরের চেষ্টাকে ‘টাকার বিনিময়ে’ এবং ‘খুনিকে বাঁচাতে’ বলে উল্লেখ করেছেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত। তিনি গুলশান থানায় বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে দায়ের করা আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার বাদি।

রোববার দুপুরে ঢাকায় মুনিয়া হত্যায় জড়িত ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে শারুনের বিরুদ্ধে মামলার চেষ্টার নেপথ্যে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলেও ইঙ্গিত দেন নুসরাত। এ সময় গণমাধ্যমের সামনে নুসরাত তাদের পারিবারিক নানা বিরোধের কথাও তুলে ধরেন।

নুসরাত এ সময় বলেন, ‘বিভিন্ন মিডিয়ায় পত্র-পত্রিকায় সে (মুনিয়ার বড় ভাই আশিকুর রহমান) বলেছে, আমরা নাকি উচ্চাভিলাষী এবং সে সাধাসিধে। সে কিছুই জানেনা এই মামলার বিষয়ে, এ সম্পর্কের বিষয়ে, আমাদের বিষয়ে।’

তিনি বলেন, ‘সে (আশিকুর) কেন এটা (শারুনের বিরুদ্ধে মামলার পিটিশন) করেছে, আমার কাছে এসে, সাথে বসে, কথা বলে, সে এটা করেনি।’

নুসরাত দাবি করেন, ‘মুনিয়ার হত্যাকারী কে এটার প্রমাণও হয়ে যাচ্ছে। মুনিয়ার অভিভাবক বলতে আমি এবং আমার স্বামীই ছিলাম। কোনো আত্মীয়স্বজন, ভাই, পরিবারের কেউই তার অভিভাবক ছিলনা। এটা ইতোমধ্যে আপনারা জেনে গিয়েছেন। সুতরাং অভিভাবকের নাম করে যদি কেউ অন্যদিকে ঘুরানোর চেষ্টা করে টাকার বিনিময়ে ওটার জন্য অবশ্যই আমার কথা আছে।’

তিনি বলেন, ‘মুনিয়ার বিরুদ্ধে এবং আমার বিরুদ্ধে পারিবারিক মামলা আছ, জায়গা-সম্পত্তির মামলা। এটা গোটা কুমিল্লা শহর জানে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, খুনিকে প্রশ্রয় দেওয়া, বিচারের আওতায় না এনে তাকে সাহায্য করা, এটা কারোর কাছ থেকে কাম্য নয়।’

নুসরাত বলেন, ‘আমার আত্মীয়স্বজন যে তাদের সাথে যুক্ত হয়ে এটা করবে না এটারও কোনো গ্যারান্টি নেই। যার বিরুদ্ধে মামলা করেছে তার নামটা শুধু আমি একবার শুনতে পেয়েছি। সেদিন (ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের দিন) সকাল বেলা আমার বোন আমাকে ফোন করে বলে, আনভীর আমাকে ব্লেম দিচ্ছে যে, তার শত্রু শারুইন্নার (হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী) সাথে নাকি আমি যুক্ত। সুতরাং তাহলে শারুন এখানে কেন আসবে?’

নুসরাতের প্রশ্ন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি আনভীরের সাথে এখন আমার পরিবার, পরিবারের আত্মীয়স্বজন টাকা খেয়ে যুক্ত হয়েছে কি-না সেটা আমার জানা নেই। সেটা আপনারা ‘তদন্তাধীন’ দেখেন। আপনারা (সাংবাদিক) ফোন দিয়ে জানানোর পর আমি এটা (শারুনের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি) জেনেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারে আমাদের জন্য কেউ নেই। এটাও সত্যি কথা। ষড়যন্ত্র অবশ্যই হচ্ছে। এই মামলার মোড় ঘুরানোর জন্য, মিডিয়াকে ঘুরানোর জন্য, তদন্তকে ঘুরানোর জন্য অন্য জায়গায় নেওয়া হচ্ছে।’

জাতির কাছে বিনীত আবেদন জানিয়ে নুসরাত বলেন, ‘আপনারা আমার সাথে থাকেন। সত্যের সাথে থাকেন, সততার সাথে থাকেন। এই মামলা চলমান এবং যদি পরবর্তীতে আরও স্টেপ নিতে হয় আমার জীবন থাকতে আমি এটা নিব।’

নিজের জীবনের নিরাপত্তার শংকা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। জিডি করেছি। পুলিশ আমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এরপরও আমি জানিনা আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আমি কতটুকু কথা বলতে পারবো।’

এর আগে রোববার ঢাকার গুলশানে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলার আবেদন স্থগিত করে দিয়েছে আদালত।

রোববার (২ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান বাদি হয়ে এ মামলার আবেদন করা হয়েছিল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমানের দায়ের করা পিটিশন আদালত স্থগিত করে দিয়েছেন। আদালত উল্লেখ করেছেন, ‘আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে’ গুলশান থানায় এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এটির তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই হত্যা মামলার আবেদন স্থগিত থাকবে।

এর আগে গত ২৬ এপ্রিল ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে দায়ী করে ৩০৬ ধারায় গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!