খাস্তগীর স্কুলে সরস্বতী পূজার আগ্রহে জল ঢাললো কর্তৃপক্ষ!

চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানের খাস্তগীর স্কুলে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রাতঃ ও দিবা শাখার ১২ শিক্ষার্থী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সরস্বতী পূজা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে প্রধান শিক্ষিকা বরাবর একটি আবেদন করেন। শিক্ষার্থীদের এ আবেদনের সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কয়েকজন শিক্ষকও একাত্মতা প্রকাশ করেন কিন্তু এ আয়োজনে অনাগ্রহ দেখান বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, নিজস্ব অনুষ্ঠান ছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময় নানান অনুষ্ঠান-আয়োজনে মুখরিত থাকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সেখানে বিদ্যালয়ের হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকার পরও আয়োজনে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দাবি, দীর্ঘদিন ধরে এ আয়োজন কখনও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়নি। তাছাড়া বিদ্যালয়ের আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় পূজার আয়োজন হয় এবং সেভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি তাই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি।

জানা যায়, সরস্বতী পূজা আয়োজনের জন্য গত তিন বছর টানা আবেদন করে শিক্ষার্থীরা। তবে কোনোবারেই রাজি হয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরেও একইভাবে ২০ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষিকা বরাবর একটি আবেদন করেন। আবেদনের আট দিন পেরিয়ে গেলেও পূজা আয়োজনে সম্মতি প্রদানে আগ্রহ নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের। তবে বছরের বিভিন্ন সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হরেকরকম আয়োজনের অনুমতি থাকে। কিন্তু পূজা আয়োজনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহের বিশেষ কোনো কারণ নেই বলে দাবি করছেন প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আকতার। এদিকে, একদিন পরেই ৩০ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে সরস্বতী পূজার দিন সকল সরকারি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। যদিও সরস্বতী পূজার আয়োজন বিভিন্ন স্কুলের প্রাঙ্গণে হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, ‘ওরা গিয়েছিল এটা জানতাম। পরবর্তীতে এটার ডিটেলস বলতে পারব না। যখন ছাত্রীরা আমাদের কাছে এসেছে আমরা রাজি হয়েছিলাম। আর এটা তো ছাত্রীদের একটা আয়োজন। তারাই উদ্যোগ নিতে চেয়েছে। আমার জানামতে ছাত্রীরা হেড ম্যাডামের কাছে গিয়েছিল এরপর কী হয়েছে তা জানি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে এখানে দীর্ঘদিন হয়নি বলে হয়তো ম্যাডাম রাজি হচ্ছে না। এটা আমার ধারণা। তবে সঠিক জানি না।’

এ প্রসঙ্গে মাউশি’র সাবেক আঞ্চলিক পরিচালক ও বর্তমান শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা আমি শুনেছি। ছাত্রীরা উদ্যোগ নিলে নিষেধ করাটা ঠিক হবে না। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ পূজা হয়ে থাকে। না দেওয়ার তো কোন কারণ নেই। আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি তবে আমি শুনেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেখানে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা চিন্তা করছি, সরকার লালন করছে। এটা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে সব ধর্মের মানুষের মানা উচিত।’

এ প্রসঙ্গে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যেখানে পূজার জন্য ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন পিছিয়েছে সেখানে কেন দিচ্ছেন না সেটাই মাথায় কাজ করছে না। তাছাড়া এখানে যে প্রোগ্রাম হয় না, তা তো না। সব প্রোগ্রামই হয়, কেবল পূজার বেলায় নিষেধাজ্ঞা কেন? কেনই বা তারা রাজি হচ্ছে না। তাই মাথায় আসে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এমন তো না যে এখানে কখনও কোনো প্রোগ্রাম হয়নি। সবই হয় আর আয়োজনটা তো বাচ্চারাই করছে তাতে তাদের আপত্তি কেন?’

এ প্রসঙ্গে ডা.খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহেদা আকতার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আবেদন? নাহ তো। না আমাদের এখানে হয় না। খাস্তগীরের আশেপাশে সবখানে হয়। তাই আমাদের এখানে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয় না। অন্য কোনো কারণ নেই।’

অন্য কোনো কারণ কি আছে— এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘না না নাহ। কোন কারণ নাই। আশেপাশের সবখানে হয়। অনেকদিন থেকে এখানে হয় না তো ওইভাবে, ওইটা আমাদের আয়োজন করা হয় না। ওইটা কোন সময় হয় নাই, আবার উদ্যোগও নেয়া হয় নাই ওইভাবে। তবে আমি শুনেছিলাম একবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল আয়োজনের। পরে আশেপাশে অনেকখানে হয় তাই আমরা আয়োজন করি নাই। আশেপাশে হয় দেখে এখানে আর আয়োজন হয় না। অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই। আমাদের টিচাররাও ওরকম না যে এখানে পূজোটা হতে হবে। এরকম কোন টিচারও বলে নাই।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!