খাল কাটার পর বাঁশখালীর ৩ হাজার একর অনাবাদি জমিতে কৃষি বিপ্লব

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কাথরিয়া ইউনিয়নের সোনাইছড়ি খাল এবং মানিক পাঠান খাল দীর্ঘদিন পর খনন করার পর অনাবাদী ৩ হাজার একর জমিতে রীতিমতো ‘কৃষি বিপ্লব’ শুরু হয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নানা ফসলের চাষাবাদে ৫ হাজার কৃষক পরিবারে হাসি ফুটেছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) খাল খননের পাশাপাশি কৃষকদের বীজ সংরক্ষণের জন্য এই গ্রামে ‘বীজ গ্রাম’ এবং কৃষকদের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য ‘ফুট ব্রিজ’ স্থাপন করেছে।

খাল কাটার পর বাঁশখালীর ৩ হাজার একর অনাবাদি জমিতে কৃষি বিপ্লব 1

সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ৬০ বছর আগেও ১৩৫ ফুট প্রশস্ত সোনাইছড়ি খাল এবং মানিক পাঠান খাল হয়ে নৌকাযোগে এলাকাবাসীর জীবন-জীবিকা চলত। কালের বিবর্তনে ১৩৫ ফুট প্রশস্তের এই দুই খালের পাড় অবৈধ দখলদাররা দখল করে পাড়ের প্রশস্ততা মাত্র ৫-৬ ফুট করে রাখে। ফলে ভরাট হয়ে যাওয়া এই দুই খাল দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি জমে ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা এবং শুষ্ক মৌসুমে জমা রাখা যেতো না চাষাবাদের পানি। এ কারণে কাথরিয়া, বৈলছড়ী, কালীপুর, বাহারছড়া এলাকার প্রায় ৩ হাজার একর ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা ও পানি সেচের অভাবে চাষাবাদ করা যেতো না।

বর্তমানে খনন করা খালে শুস্ক মৌসুমে জমা বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে সেচের পানি। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, বর্ষা মৌসুমেও জলাবদ্ধতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বর্ষা মৌসুমেও চাষাবাদ করা যাবে।

এখন দেখা যাচ্ছে, নানা জাতের ফসলি ক্ষেত জুড়ে কৃষক-কিষাণির ফসল উত্তোলন ও ফসল উৎপাদনে শত শত কৃষক পরিবারে আনন্দ উৎসব চলছে। স্থানীয় কৃষক আব্দুর শুক্কুর বলেন, ‘আমার পৈত্রিক ৫ কানি জমি থাকলেও এতদিন চাষাবাদ করতে পারিনি। জমিগুলো বোঝা হিসেবে ছিলো এখন চাষাবাদ করে প্রচুর ধার-কর্জ পরিশোধ করেছি। বিএডিসি আমাদের এলাকায় বীজ সংরক্ষণ ও কৃষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ‘বীজ গ্রাম‘ করেছে। খাল পাড় হয়ে জমিতে যাবার জন্য ‘ফুট ব্রিজ’ করেছে।’

বিএডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘কাথরিয়ার কৃষি উন্নয়নে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টার মেশিনও বসানো হয়েছে।’

মানিক পাঠান গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখে যখনই শুনেছি- দেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। তখন আমি উদ্যোগী হয়ে বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর সহযোগিতায় বিএডিসির অর্থায়নে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা খরচ করে কাথরিয়ার সোনাইছড়ি খাল ও মানিক পাঠান খালের ৪ কিলোমিটার খাল খনন, বীজ সংরক্ষণ ও প্রশিক্ষণের জন্য ‘বীজ গ্রাম’ এবং কৃষকদের যাতায়তের সুবিধার জন্য ‘ফুট ব্রিজ’ স্থাপন করিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘দালিলিকভাবে খালগুলোর প্রশস্ততা ছিলো ১৩৫ ফুট, অথচ অবৈধ দখলদাররা দখল বাণিজ্য করে ৫-৬ ফুট খাল বানিয়েছিল। ১৩৫ ফুট প্রশস্ত খালে খাল খনন প্রকল্পে মাত্র ৩২ ফুট প্রশস্ত করে খননের বাজেট হয়েছে। খালের দুই পাড়ে বাকি জমি এখনও অবৈধ দখলদারদের দখলে।’

মানিক পাঠান খাল খননে নিয়োজিত ঠিকাদার আতিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘খাল খননে অসংখ্য স্থানীয় কৃষক স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে আমাকে সহযোগিতা করেছে। খাল খননের পর কৃষকদের প্রাণচাঞ্চল্য ভোলার মতো নয়।’

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘খাল খননের আগে-পরে কাথরিয়ার সোনাইছড়ি খাল ও মানিক পাঠান খাল এলাকা পরিদর্শন করেছি। খাল খননের পর ওইখানকার ৩ হাজার একর অনাবাদী জমিতে সেচ সুবিধা বেড়েছে। পাশাপাশি আমাদের চলমান অন্যান্য প্রকল্পের মাধ্যমে বীজ সংরক্ষণ ও চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষকরা প্রশিক্ষিত হয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!