ভিডিও/ ‘খালে ময়লা ফেলে সিটি কর্পোরেশন, নাম পড়ে মানুষের’

ময়লা-আবর্জনাভর্তি ভ্যান নিয়ে এসে এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী খালের পাশে থামলেন। তারপর মনের সুখে একটু একটু করে ভ্যানভর্তি ময়লা-আবর্জনা খালে ফেললেন। খালে ময়লা ফেলে মনের আনন্দে ভ্যান নিয়ে আবার চলে গেল ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী।

সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলার এমন একটি ‘মনোরম’ দৃশ্য দেখা গেল। ঘটনাস্থল বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়ার চাক্তাই খাল পশ্চিম পাড়। ফেসবুকেও ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ নজর কেড়েছে অনেকের। এলাকার বাসিন্দা রাফিজুল ইসলাম পিয়াস বলেন, ‘ময়লা ফেলে সিটি কর্পোরেশন, নাম পড়ে আমাদের।

জানা যায়, শুলকবহর ওয়ার্ডের জঙ্গি শাহ আবাসিক এলাকার নিজস্ব গাড়ি থেকেই চাক্তাই খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলছিল ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এছাড়া কেউ কেউ বলছেন, ‘এটি সিটি করপোরেশনের ভ্যান এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মীটি সিটি করপোরেশনের। তবে এর দায় নিতে রাজি নন চাক্তাই খাল সংলগ্ন দুই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আলম এবং আশরাফুল আলম। চাক্তাই খালের ওই অংশটি তাদের ওয়ার্ডে পড়েনি বলে দাবি করেছেন দুজনই।

স্থানীয়রা জানান, এভাবে প্রতিদিন চাক্তাই খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। ময়লা-আবর্জনায় ভরে গিয়ে খালের পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে ওই এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা আর জনদুর্ভোগ। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা শহরের বিভিন্ন এলাকা, বাসাবাড়ি, দোকান-অফিস থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে থাকে। তবে কিছু কিছু আবাসিক এলাকায় এলাকাবাসী নিজস্ব উদ্যোগে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণ করেন। এ ক্ষেত্রে ওই এলাকার ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ ও অপসারণে যথাযথ তদারকি ও দেখাশোনা করে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এর ফলে আবাসিক এলাকার অধিবাসীরা নিজেদের ইচ্ছেমত খালি জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলে।

সুমন আবির সৌরভ নামে একজন লিখেছেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে করে, সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মী (খালে ময়লা) ফেলতেছে। তাহলে দোষ কার?’

মো. আলী ইমরান নামে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, ‘এভাবে ময়লা ফেলে খাল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর জলাবদ্ধতার জন্য মানুষ মেয়র/সরকারকে গালি দেয়।’

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চাক্তাই খালের পশ্চিম পাড় আমার ওয়ার্ডের বাইরে। তবুও আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নেব। জঙ্গি শাহ আবাসিক এলাকা সোসাইটি যদি কাজটি করে থাকে, তাহলে তারা দায় এড়াতে পারে না। লোকচক্ষুর আড়ালে খালে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়। এ ব্যাপারে সকলকে সচেতন হতে হবে।’

চাক্তাই খালের ওই অংশটি নিজের নয় বলে দাবি করেছেন ৬ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আশরাফুল আলম। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ব্যাপারটি আমি শুনেছি। ভিডিওতে ভ্যানের গায়ে কি নাম লিখা আছে, তা দেখা যাচ্ছে না। তাই ভ্যানটি কাদের বলা যাচ্ছে না। এছাড়া চাক্তাই খালের ওই অংশ আমরা ওয়ার্ডের বাইরে। তবে যারা ময়লা-আবর্জনা খালে ফেলা কাজটি করছে, তারা ভালো করেনি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’

খালে ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপকারী পরিচ্ছন্নতা কর্মীটি সিটি করপোরেশনের নয় বলে দাবি করেছেন জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন। চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শৈবাল দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এ বিষয়ে বলেন, ‘ব্যাপারটি আমি শুনেছি। ওই পরিচ্ছন্নতা কর্মীটি আমাদের নয়। কিছু আবাসিক এলাকা কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে লোক নিয়োগ করে ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করে। আমরা তাদেরকে ডোর-টু-ডোর আবর্জনা সংগ্রহ করার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছি। অনেক সময় আবাসিক এলাকার কর্তৃপক্ষ নিয়মের বাত্যয় ঘটিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে খাল ও নালায় বর্জ্য ফেলে। এটা জঘন্য অপরাধ। সিটি করপোরেশনের কোন পরিচ্ছন্নতা কর্মী খালে ময়লা ফেলার প্রমাণ দিতে পারলে তাকেসহ তার সুপারভাইজারকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। কেউ দায় এড়াতে পারবে না।’

এদিকে বক্তব্য জানার জন্য বারবার যোগাযোগ করা হলেও মুঠোফোনে সাড়া দেননি সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা এসএম শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী যীশু।

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!