কড়াকড়ির জেরে তলানি ছুঁয়েছে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি

সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। সেপ্টেম্বরে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে মাত্র ৯৮৫ কোটি টাকা। এর আগের বছরের একই মাসে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ছিল ৪ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র কেনায় সরকারের কড়াকড়িই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নামার মূল কারণ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে অনলাইন পদ্ধতি চালুর পাশাপাশি নিয়মকানুন কঠোর করায় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নামে। অন্যদিকে ঋণের বোঝা কমাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে দেয়। চলতি অর্থবছরে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এছাড়া ১ লাখ টাকার বেশি মূল্যমানের সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। একই ব্যক্তির একাধিক জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা ঠেকাতেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

তাছাড়া আগে কালো টাকাও সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ হতো। এখন দুর্নীতি কিংবা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডাটাবেস তৈরির পর অনেকেই আর আগের মতো সঞ্চয়পত্র কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে মন্দা দেখা দিয়েছে। এখনও যেসব সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে তা মূলত সীমিত আয়ের মানুষরাই কিনছেন।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে— পাঁচ বছরমেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছরমেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পাঁচ বছরমেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র এবং তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। এগুলোর গড় সুদের হার ১১ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো অফিস ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ১৩ হাজার ৪১২ কোটি টাকার। অর্থাৎ গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৮ হাজার ৭১৪ কোটি টাকার বিক্রি কমেছে।

ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত তিন মাস ধরে অব্যাহতভাবে কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে নিট ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আগস্টে হয়েছে ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকা, আর সেপ্টেম্বরে হয়েছে মাত্র ৯৮৫ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে সরকারকে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র খাতে সুদ-আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যা ছিল ৩৮ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!