ক্ষোভ মেটাতেই রাউজানের মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা

চট্টগ্রামের রাউজানে মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশের সাবেক উপ-পরিদর্শক একেএম নুরুল আজম চৌধুরী হত্যার ঘটনায় জড়িত শেখ সোহরাব হোসেন সাদিচ (২৬) নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সোহরাবের ভাষ্যমতে, তাকে নিয়ে প্রায় ঠাট্টা- তামাশা করতেন মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আজম। এতে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ মেটাতেই মুক্তিযোদ্ধাকে খুন করেন সোহরাব।

তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা শুধুমাত্র ঠাট্টা-তামাশার ঘটনাই নয় বরঞ্চ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সোহরাবের ‘ব্রেইন ওয়াশ’ করে সূক্ষ পরিকল্পনায় খুন করানো হয় মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আজমকে। হত্যার পেছনে থাকতে পারে বেশ কয়েকটি কারণ। নুরুল আজমের পূর্বনিবাস ছিল পাশের হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নে। তবে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি হাড়পাড়া গ্রামে বসবাস করে আসছিলেন। হারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং হারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে তাঁর একটি স্টেশনারি দোকান ছিল। স্কুলের সামনেই দোকান থাকায় সেই দোকানের বেঁচা-কেনা ছিল ওই এলাকার অন্যান্য দোকানের চেয়ে চার-পাঁচ গুণ বেশি।

‘সোনার ডিম পাড়া’ এই দোকানের ব্যবসা হাতে পেতে সোহরাবের হাতে খুন করানো হতে পারে মুক্তিযোদ্ধাকে।

এদিকে স্থানীয়ভাবে নারী ঘটিত ‘কেলেঙ্কারিতে’ সোহরাবের বেশ দুর্নাম রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলমের দোকানেই বসেই স্কুল ছুটির সময়ে আড্ডা জমাতো সোহরাব। পাশে দু’টি স্কুলের ছাত্রীরা আসা-যাওয়ার পথে নানা কুমন্তব্য করতো সোহরাব। এইসব বিষয় নিয়ে প্রায় সোহরাবকে তিরস্কার করতো মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আজম। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে কথিত রয়েছে নুরুল আজম খুন হওয়ার আগের দিন রাতে স্থানীয় কোন এক অনুষ্ঠানের পর নর্তকির সঙ্গে সোহরাবের আপত্তিকর দৃশ্য দেখে ফেলেছিল নুরুল আজম।

প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, এইসব বিষয়কে পুঁজি করে কোন এক গোষ্ঠী স্বার্থ হাসিলের জন্য সোহরাবকে বলির পাঠা বানিয়ে খুন করিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আজম চৌধুরীকে।

এদিকে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চান্দগাঁওয়ে র‌্যাব-৭ সিপিসি-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার কাজী মোহাম্মদ তারেক আজিজ জানান, মুক্তিযোদ্ধাকে খুন করার পর রাউজানের পথেরহাট এলাকায় একটি নির্জন বাড়িতে গা ঢাকা দিয়েছিল সোহরাব। সেখান থেকে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তাকে গ্রেফতার করে র‍্যাব-৭। এসময় তার দেওয়া তথ্যর ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি কিরিচ ও রক্তমাখা জামা উদ্ধার করা হয়।

সোহরাবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাকে খুনের নৃসংশ্য বর্ণনায় র‍্যাব জানায়- শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে নুরুল আজমকে দোকান থেকে ডেকে বের করে এনে কিরিচ দিয়ে ঘাড়ে কোপ দেয়ার চেষ্টা করে সোহরাব।

এসময় নুরুল আজম নিজেকে রক্ষার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে কিরিচের কোপে তার হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে নুরুল আজমের ঘাড়ে কোপ দিলে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় একটি কামারের দোকান থেকে মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার জন্য ধারালো কিরিচটি ১ হাজার টাকায় কিনেছিলেন সোহরাব। হত্যাকাণ্ডের পরেই ওই কিরিচটি ধুয়ে মুছে আবার ফেরত দিয়েছিলেন তিনি।

র‍্যাবের ধারণা খুনের আলামত নিজের কাছে না রাখতেই এমনটি করেছিলেন সোহরাব।

র‌্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ সামীম সরকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, সোহরাব রাউজানে পালক পিতার-মাতার সংসারে বড় হয়েছেন। ওয়ার্কশপের একটি দোকানে কাজ করতেন তিনি। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আজম রাউজানে একা থাকতেন। ওই এলাকায় দোকান করার খাতিরে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল সোহরাবের। কিন্তু বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোহরাবের সাথে ‘ঠাট্টা’ করতেন তিনি। এসব বিষয় নিয়ে সোহরাবের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম হয় বলে দাবি করেছে সোহরাব।

তিনি বলেন, সোহরাবের দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করবে তদন্তকারী কর্মকর্তা। এর বাইরে আরও বিষয় থাকতে পারে। সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে অন্য কেউ জড়িত আছে কী না তা খুঁজে বের করা হবে।


এএ/এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!