ক্ষুদে ক্রিকেটারদের প্রশ্নের মুখোমুখি সাকিব, প্রশ্নের মুখে আয়োজকরা

উপস্থাপক যখন ঘোষণা করলেন এবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন অ্যাকাডেমির ক্ষুদে ক্রিকেটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাকিব আল হাসান, তখন স্টেডিয়ামে উপস্থিত ক্ষুদে ক্রিকেটারদের সে কী উল্লাস! নিও ক্রিকেট অ্যাকাডেমির তামিম প্রথম প্রশ্ন করার সুযোগ পান সাকিবকে। তিনি সাকিবকে জিজ্ঞেস করেন বিশ্বকাপে এতো ভালো ক্রিকেট কীভাবে খেলেন? সাকিব হেসে উত্তর দেন-‘বিশ্বকাপের জন্য আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিই, কঠোর পরিশ্রম করি। যেসব জায়গায় দুর্বলতা ছিল সেগুলো নিয়ে কাজ করেছি। আমার ভাগ্য ভালো সেগুলো ঠিকমতো কাজে লেগেছে।’

স্বাধীনতা ক্রিকেট অ্যাকাডেমির রাসেল প্রশ্ন করেন, একজন ক্রিকেটারের দৈনিক রুটিন কেমন হওয়া দরকার? সাকিব জানান, ‘একজন ক্রিকেটারকে তাই করতে হবে যা করলে তার জন্য ভালো হবে। সেই সাথে ভালো খাবার খেতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে, লেখাপড়া করতে হবে এবং জীবনকে অনেকবেশি শৃঙ্খলিত করতে হবে।’

ব্রাইট ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ইশরাক আলম সাকিবের কাছে জানতে চান ম্যাচে আশানরূপ ফল না আসলে কী করব? সাকিব বলেন, ‘পরীক্ষার হলে যাওয়ার আগে যদি নির্দিষ্ট বইটি ভালো করে পড়া থাকলে প্রশ্ন নিয়ে কোন ভয় থাকে না। একইরকমভাবে ম্যাচের আগে ভালো মতো প্রস্তুতি নিলে ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে খাপ খাওয়ানো যায়।’

সাকিবের সংবর্ধনাস্থল ঘিরে উৎসব উৎসব ভাব থাকলেও অনেক বিষয় ছিল যা খুবই দৃষ্টিকটু।
সাকিবের সংবর্ধনাস্থল ঘিরে উৎসব উৎসব ভাব থাকলেও অনেক বিষয় ছিল যা খুবই দৃষ্টিকটু।

ব্রাদার্স ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মেহরাব আহমেদ প্রশ্ন করেন, ‘মাঠে খেলাচলাকালীন সময়ে কী চিন্তা করেন? সাকিব উত্তর দেন, ‘সবসময় খেলাটা উপভোগ করি। যতক্ষণ মাঠে থাকি ততক্ষণ খেলাটাকে এনজয় করার চেষ্টা করি। এবং সবসময় মাথা ঠান্ডা রাখি।’

চিটাগাং উইমেন্স ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সাইমন আক্তার দোলা জিজ্ঞেস করেন, ‘নারী ক্রিকেটারদের জন্য আপনার কোন উপদেশ আছে?’ সাকিব উত্তরে জানান, ‘আমাদের দেশের মেয়েরা অনেক প্রতিকূল অবস্থানে থেকেও অনেক ভালো রেজাল্ট করছে। আমরা চার-পাঁচবার এশিয়া কাপের ফাইনাল খেললেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। অথচ মেয়েরা এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।’

উদীয়মান ক্রিকেট অ্যাকাডেমির আফ্রিদি জানতে চান ‘আমি আপনার মতো হতে চাই, এজন্য আমাকে কী করতে হবে?’ সাকিব হেসে জানান, ‘প্রথমেই মা-বাবার কথা শুনতে হবে। নিয়মিত মাঠে আসতে হবে, নিজের লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। স্বপ্ন যা দেখবে তার পেছনে লেগে থাকতে হবে।’

এছাড়া প্রায় একই ধরনের প্রশ্ন করেন মিলেনিয়াম ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ফয়সাল তাহিন, চিটাগাং ক্রিকেট অ্যাকাডেমির রাহুল ইসলাম। সাকিবের সাথে প্রায় আধঘণ্টাব্যাপী এই প্রশ্নোত্তর পর্বটি বেশ উপভোগ করেন স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা।

এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের ভিআইপি গ্যালারি উম্মুক্ত করে দেওয়া হয় চট্টগ্রামের ক্ষুদে ক্রিকেটারদের জন্য। নিজেদের অ্যাকাডেমির রঙিন জার্সি পড়ে এসে পুরোটায় রঙিন করে তুলেন তারা। তাদের কয়েকজনের সাথে কথা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের। তাদের সবার চোখেমুখে স্বপ্ন একজন সাকিব আল হাসান হওয়ার। সাকিবের কথা শোনার পর তাদের মনে বিশ্বাস জেগেছে চেষ্টা করতে থাকলে একদিন তারাও হতে পারবেন বিশ্বসেরা।

মিলেনিয়াম ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচ নবীন খন্দকার মতে, সাকিবের মত আন্তর্জাতিক মানের প্লেয়ার চট্টগ্রামে আসায় ক্ষুদে প্লেয়ারদের মনে সাকিবের মত প্লেয়ার হওয়ার সুপ্ত স্বপ্নটি আরও চাঙ্গা হবে। চট্টগ্রাম উইমেন ক্রিকেট অ্যাকাডেমির কোচ শামীম আহমেদ বলেন, সাকিবের মত প্লেয়ারদের অনুসরণ করে আমাদের চট্টগ্রামের মেয়েরা ক্রিকেট অনেক দূর যাবে। ক্ষুদে প্লেয়ারদের মনে সাকিবের মত দেশরত্ন হবার অনুপ্রেরণা যোগাবে।

চট্টগ্রাম উইমেন ক্রিকেট অ্যাকাডেমির খেলোয়াড় সুজিয়ার স্বপ্ন সাকিবের মত একজন আন্তর্জাতিকমানের অলরাউন্ডার হয়ে উঠা। আজকে কাছ থেকে সাকিবকে দেখে তিনি আশা করছেন সেই পথে হাঁটা তার জন্য প্রেরণা দিবে। ব্রাইট ক্রিকেট অ্যাকাডেমির মো. ফারুক বলেন, সাকিবের মত বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আমাদের মত ক্ষুদে খেলোয়াড়দের অনেক কিছু শেখার আছে, যা কিনা সাকিবের মত আর্ন্তজাতিক মানের খেলোয়াড় হয়ে উঠার জন্য সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

সংবর্ধনায় ক্ষুদে খেলোয়াড়দের অনেকের সাথে এসেছেন তাদের অভিভাবকও। একসময় মা-বাবারা সন্তাদেরকে হাত ধরে ছেলেদেরকে বিভিন্ন শিক্ষকদের কাছে নিয়ে যেতেন। এখন সেটির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রিকেট প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমিতেও নিয়ে আসেন। কথা হয় তেমনই একজন গৃহিণী ফজলে আরা বেগমের সাথে। তিনি জানান, ‘আমি চাই আমার ছেলে সাইফুলও একদিন বিশ্বসেরা হয়ে উঠুক। তাই ছেলেকে সাকিবকে কাছ থেকে দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছি।’

পাশেই ছিলেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকুরিজীবি সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, ‘সাকিব থেকে শেখার জন্য অনেক কিছু আছে। এতো কাছে এসে সাকিবকে দেখার জন্য ছেলেকে নিয়ে আসি।’ ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিকমানের খেলোয়াড় সাকিবের সংস্পর্শে হয়তো একদিন আমার ছেলেও আন্তর্জাতিকমানের খেলোয়াড় হয়ে উঠবে।

প্রশ্নের মুখে আয়োজকদের ব্যবস্থাপনা
সাকিবের সংবর্ধনাস্থল ঘিরে উৎসব উৎসব ভাব থাকলেও অনেক বিষয় ছিল যা খুবই দৃষ্টিকটু। বিশেষ করে বর্ণিলভাবে সাজানো মঞ্চে কোন ডেস্ক না করে বেখাপ্পাভাবে দুটি চেয়ার রেখে সাকিব এবং মেয়রের বসার ব্যবস্থা করা। অনেকেই এটিকেই বাইরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট বলে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। সংবর্ধনাস্থলে দর্শকদের বিনোদনের পাশাপাশি বিরক্তি না আসার জন্য গানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু বেসুরে গান এবং দূর্বল কণ্ঠস্বর সেটি দর্শকদের উল্টো বিরক্তি যুগিয়েছে।

সাংবাদিকদের বসার জন্য আলাদা করে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেসব জায়গা আগে থেকে অন্য কারও দখলে ছিল। যে কয়টি জায়গায় সাংবাদিকরা বসার সুযোগ পেয়েছেন তাদের সামনে ছিল উৎসুক জনতার ভিড়। যাতে করে খবর সংগ্রহে সাংবাদিকদের বেশ বেগ পেতে হয়। একই অবস্থা ফটোসাংবাদিকদেরও। সৌখিন মোবাইল ফটোগ্রাফার আর সেলফিবাজরে ভিড়ে তারা ছবি তোলার জায়গায় পাননি।

আয়োজক কমিটি আগেই জানিয়েছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে চেক করেই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করানো হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। স্টেডিয়ামের প্রবেশমুখে যথেষ্ট পুলিশ ছিল, কিন্তু ম্যাটাল ডিটেক্টর দিয়ে কাউকে চেক করতে দেখা যায়নি। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সংবর্ধাস্থলে ছিল অবাধে যাতায়াত। বিশেষ করে কালো গেঞ্জি পরিহিত একদল যুবক চষে বেরিয়েছে পুরো স্টেডিয়াম এলাকায়। মাঝেমধ্যে তাদেরকে দেখা গেছে পুলিশকে বিভিন্ন নির্দেশনা দিতে।

খবর নিয়ে জানা গেছে, এসব যুবকরা আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী যুবলীগ নেতা লোকমান হোসেনের কর্মী। ভাবের জন্য তাদের গেঞ্জির পেছনে বড় অক্ষরে বিসিবি লেখা হয়েছে। অথচ তারা কেউ বিসিবির নয়। তাদের ইচ্ছানুসারে লোকজন সংবর্ধনা মঞ্চের কাছাকাছি যেমনভাবে ইচ্ছে তেমনভাবে ঘুরাফিরা করেছে। এই অবাধ যাতায়াতে কোন দুষ্কৃতিকারী অনুপ্রবেশ করে কোন অঘটনের জন্ম দিলে কারও কিছু করার থাকত না।

চট্টগ্রামের ভাগ্য অনেক ভালো। বড় ধরনের কোন অঘটন থেকে বেঁচে গেল!

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!