‘ক্ষমতার দাপট’— ১ টাকা ৮০ পয়সায় পছন্দের লোককে চসিকের জায়গা ভাড়া দিলেন সুজন

চট্টগ্রাম শহরের জমি। ঠিকানা পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ড। ওই এলাকায় প্রতি বর্গফুট জমির মাসিক ভাড়া মাত্র ১ টাকা ৮০ পয়সা! বিস্ময় জাগানো এই মূল্যে এই জমি ভাড়া দিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। চসিকের সদ্য বিদায়ী প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির হাতেই নামমাত্র মূল্যে চসিকের জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এই মূল্যে জমি ভাড়া দিয়ে ১৫ বছরের ইতিহাস ভাঙলেন সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। শুধু তাই নয়, একই দিনে একই ব্যক্তি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে দরপত্রের মাধ্যমে পেয়েছেন দুইটি জায়গার ভাড়া!

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘শুধু এই জায়গাই নয়, বিদায়ী প্রশাসকের হাতে ভাড়া দেওয়া সকল জায়গার কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হবে।’

অভিযোগ রয়েছে, গত ১৫ বছরের মধ্যে এতো কমমূল্যে দরপত্রের মাধ্যমে কোনো ধরনের কোনো চুক্তি হয়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব বিভাগের। নির্দিষ্ট লোককে দরপত্র পাইয়ে দিতে সুকৌশলে দেওয়া হয়েছে নামসর্বস্ব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও। প্রায় ৪ মাস আগে এ দুইটি জায়গা ভাড়া দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

চসিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ড অফিস সংলগ্ন ৬ হাজার ৫৩৫ বর্গফুটের একটি জায়গা ভাড়া দিতে দরপত্র আহবান করা হয়। পরবর্তীতে ৬ হাজার ৫৩৪ বর্গফুটের এ জায়গাটি প্রতি বর্গফুটের একমাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় মাত্র ১ টাকা ৮০ পয়সা করে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ড অফিস সংলগ্ন অফিস জায়গা ছাড়াও আরও অনেক জায়গায় সুজন সাহেব এ ধরনের কাজ করেছেন, সেগুলো তদন্ত চলছে। যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জায়গাটি ইজারা পেয়েছেন ইসলামিয়া কলেজের সাবেক ভিপি খলিলুর রহমান নাহিদ। তিনি চসিকের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের মেয়র হজ ক্যাফেলার পরিচালক আব্দুল কাদেরের মেয়ের জামাই হিসেবে পরিচিত। নাহিদকে সুজন কথায় কথায় জামাই বলে সম্বোধন করেন বলেও জানা গেছে।

চসিকের প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর সুজন লোকসান কমাতে তার ব্যবসায়িক বন্ধু আব্দুল কাদেরের মালিকানাধীন হাক্কানী পেট্রোল পাম্প থেকে বেশি দামে তেল কিনতে গিয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশিত হলে ওই পাম্প থেকে তেল কেনা বন্ধ করেন সুজন।

জানতে চাইলে ইজারাদার খলিলুর রহমান নাহিদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে সিটি কর্পোরেশন কিভাবে কমমূল্যে জায়গা ভাড়া দিল কোথায়? পে-অর্ডারের মাধ্যমে ২৯ লাখ টাকা দিয়েছি সিটি কর্পোরেশনকে। গত ২০ থেকে ৩০ বছর আগে এ জায়গাটি আগের কাউন্সিলররা বিনা পয়সায় ব্যবহার করেছে। বরং সাবেক প্রশাসক এই জায়গা ভাড়া দিয়ে কর্পোরেশনের একটি আয়ের ব্যবস্থা করে গেছেন।’ তবে তিনি কেন ২৯ লাখ টাকা পে-অর্ডার দিয়েছেন সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আপনি (প্রতিবেদক) আমার বিরুদ্ধে যেমন ইচ্ছে লিখেন, আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না প্লিজ।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ড অফিস সংলগ্ন অফিস জায়গা ছাড়াও আরও অনেক জায়গায় সুজন সাহেব এ ধরনের কাজ করেছেন, সেগুলো তদন্ত চলছে। যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মুআ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!