ক্ষমতার দাপট—বুক ফুলিয়ে পাহাড় কাটছে যুবলীগ নেতা, দুই চোখভরে দেখছেন পুলিশ

হাসানুল ইসলাম আদর নামের কক্সবাজারের চকরিয়ায় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে বনবিভাগের রিজার্ভ পাহাড়ি বনভূমি কেটে রেলপথসহ বিভিন্ন প্রকল্পে মাটির সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। দিনে দুপুরে স্কেভেটর দিয়ে ছোট-বড় অন্তত ২০টি পাহাড়ের মাটি কাটলেও স্থানীয় প্রশাসন নিরব। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ও পাহাড় ধসের আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

হাসানুল ইসলাম আদর উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক বলে জানা গেছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যুবলীগ নেতা আদরের নেতৃত্বে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন চকরিয়ার ফুলছড়ি রেঞ্জের খুটাখালী, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ডুলাহাজারা, সুরাজপুর-মানিকপুর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নলবিলা বিটের উঁচু পাহাড়ি বনভূমির মাটি কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। আর এসব পাহাড়ের মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে বরইতলী শান্তিবাজার-কৈয়ারবিল-ছিকলঘাট-কাকারা-ইয়াংছা সড়কের নির্মাণ কাজে। রাতদিন পাহাড় কেটে অন্তত ২০-২৫টি ডাম্পার ট্রাকে মাটি সরবরাহ করা হলেও প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নিরব। তাছাড়া ডাম্পার ট্রাকে মাটি সরবরাহ করতে গিয়ে গ্রামের রাস্তাগুলো ভেঙ্গে চূড়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বগাচতর এলাকাবাসী জানান, আদর ডুলাহাজারা বগাচতর এলাকায় জেলা প্রশাসন থেকে বালু মহাল ইজারা নিয়ে কৌশলে পাশের পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে। মূলত বালু মহাল ইজারা নিয়েছে পাহাড় কাটাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। বালু মহাল ইজারা নিয়ে কৌশলে পাহাড় মাটিকে বালু দেখিয়ে রেললাইনের রাস্তা নির্মাণ কাজে প্রতি ট্রাক বালু ১ হাজার থেকে এগারশ টাকা এবং মাটি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

এদিকে, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক সীমানা প্রাচীর সংলগ্ন রংমহল এলাকায় পার্ক ঘেঁষে পাহাড়ি বনভূমি কেটে মাটি বিক্রি করায় পার্কের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, খুটাখালী ইউনিয়নের খোদার ফাঁড়ি ও মেধাকচ্ছপিয়ায় ৫-৬টি পাহাড় স্কেভেটর দিয়ে কেটে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর। ডুলাহাজারা ইউনিয়নের বাকগোলা বাগান, রংমহল ও মালুমঘাট এলাকা থেকে প্রতিদিন ২০-২৫টি ডাম্পার ট্রাক দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছে আদরের লোকজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবলীগ নেতা হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, বালু মহাল ইজারা নিয়ে আমি বালুর ব্যবসা করছি। পাহাড় কাটার সঙ্গে আমি জড়িত নই। ডুলাহাজারার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় কাটছি বলে অনেকে পরিবেশ অধিদপ্তরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। আমি পরিবেশ অধিদপ্তরকে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িত নই তা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। ফলে তারা সব অভিযোগ থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ির এসিএফ মাসুদ রানা বলেন, যারা পাহাড় কাটার সাথে সম্পৃক্ত তাদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। অনুমতি মিললে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলার সহকারী পরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনও তথ্য নেই। খবর নিয়ে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!