‘ক্লিন রোডের’ পরদিনই চকবাজার আবার পুরনো চেহারায়

‘ফ্রি রোড-ক্লিন রোড’ কর্মসূচির মধ্যেই চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে উচ্ছেদের ২৪ ঘন্টা পার না হতেই ফের দখল হচ্ছে ফুটপাত। বসছে নানা পণ্যের বাজার।

নগরের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সম্প্রতি নগরজুড়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ‘ফ্রি রোড-ক্লিন রোড’ নামে একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, অবৈধ বাজার উচ্ছেদের পর প্রশাসনের তদারকির অভাবে পুনরায় বসছে বাজার। অন্যদিকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক সূত্র বলছে, প্রশাসনের শর্ষের ভেতর ভূত লুকিয়ে থাকায় ফলপ্রসূ হচ্ছে না ‘ফ্রি রোড-ক্লিন রোড’ উদ্যোগ।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চকবাজার এলাকায় চক সুপার মার্কেট থেকে শুরু করে ধনিরপুল পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে পসরা সাজিয়ে বসেছে বাহারি পণ্যের বাজার। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওই পথে চলাচলকারী পথচারীদের।

স্থানীয়রা বলছেন, রোববার (১২ জানুয়ারি) সকাল থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ফুটপাত এবং রাস্তার ওপর অবৈধভাবে বসা এসব দোকানপাট উচ্ছেদ করে ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু উচ্ছেদের ২৪ ঘন্টা পার না হতেই ফের দখল হয়েছে চকবাজারের ফুটপাত ও সড়ক। এতে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন পথচারী ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, তিন ধাপে অর্থের বিনিময়ে বসছে চকবাজারের এই অবৈধ বাজার। প্রথম ধাপে সরকারি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট চকবাজার থানা টাকা আদায় করছে। দ্বিতীয় ধাপে আদায় করছে চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ি। চকবাজার এলাকায় চকসুপার মার্কেট থেকে ধনিরপুল পর্যন্ত প্রায় শতাধিক দোকান থেকে দৈনিক ৫০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। পাশাপাশি চকবাজার থানা ও চকবাজার পুলিশ ফাঁড়ি পৃথকভাবে নিচ্ছে দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা— জানিয়েছে স্থানীয় সূত্রগুলো।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চাইলেই চকবাজার থানার ১০০ গজের মধ্যে গড়ে উঠা অবৈধ দোকানপাট ‘কন্ট্রোল’ করতে পারে পুলিশ। কিন্তু বিভিন্ন কারণে অবৈধ দখল উচ্ছেদের পর তদারকিতে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায় না তাদের।

তবে স্বয়ং পুলিশের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চকবাজার থানার (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। চকবাজার থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরীও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ অসত্য উল্লেখ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। তবে উচ্ছেদের পর কারা আবার পুনর্দখল করছে তা খতিয়ে দেখা হবে।’

নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যদিনের এসব অসুবিধা দেখাশোনার দায়িত্ব স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের। কিন্তু চকবাজার এলাকায় সড়ক এবং ফুটপাতে উচ্ছেদ-পুনর্দখলের এমন খেলায় অসহায় দর্শকের ভূমিকায় স্বয়ং চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিজেই।

চকবাজার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চকবাজার এলাকার সড়কে এবং ফুটপাতে শুধুমাত্র অবৈধ দোকান নয়, আমি চাই স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বৈধ দোকানিরাও যেন নিজেদের সীমানার বাইরে একচুল পরিমাণ জায়গা বেদখল করে মালামাল রাখতে না পারে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এই ইচ্ছার বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’

তবে পুনর্দখলের বিষয়ে সিএমপি উত্তর বিভাগের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (প্রশাসন) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নগরজুড়ে অবৈধ দখলকার হটাতে আমাদের উচ্ছেদ অভিযান চলমান আছে। যে কোনও মূল্যে নগরীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।’

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!