ক্লাসে যৌনউত্তেজনামূলক অশালীন কথা বলেন ইউএসটিসির ইংরেজি শিক্ষক

২২ শিক্ষার্থীর অভিযোগপত্র শিক্ষা উপমন্ত্রী বরাবরে

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি)’র এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্লাস নেওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যৌনউত্তেজনামূলক কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ইংরেজি বিভাগের ২২ জন শিক্ষার্থী একটি অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে।

বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিএমপি কমিশনারের কাছে পাঠিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। এ আদেশ পেয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত করতে সিএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় কুমার বসাককে দায়িত্ব দিয়েছেন কমিশনার। তবে এসব অভিযোগ পুরোই ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক ও অবাস্তব বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত ইউএসটিসির ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মাসুদ মাহমুদ।

গত ২৭ এপ্রিল শিক্ষা উপমন্ত্রীর কাছে দেওয়া অভিযোগ একই বিভাগের ২২ শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ক্লাসে ড. মাসুদ মাহমুদ পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নয় এমন যৌনউত্তেজনামূলক কথা বলেন প্রায়ই। যৌনউত্তেজনামূলক কথাবার্তা বলার সময় ছেলেদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করে তিনি বলেন, এ সময় ছেলেরা থাকলেই বেশি মজা পেতেন। মেয়েদের পিরিয়ড ও ছেলেদের মাস্টারবেশন (হস্তমৈথুন) নিয়েও কথা বলেন তিনি। বাবার সঙ্গে মেয়ের এবং মায়ের সঙ্গে ছেলের যৌনসম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন।

বিবাহিত মেয়েদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এসব কথা বিবাহিতদের মজা লাগবে না, কেননা বিবাহিতরা সব কিছু করে আসছে। ভালো পড়া পারলে জামাইকে বেশি করে আদর করে দিতেও পরামর্শ দেন তিনি।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগে আরো বলেন, শিক্ষক মাসুদ মাহমুদ তাদের বলেন, একজন পার্টনারের সঙ্গে বেশিদিন সম্পর্ক থাকা উচিত নয়, তাই পার্টনার পরিবর্তন করা উচিত। ছেলেদের শারীরিক অক্ষমতার কারণে অনেকের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। সেজন্য বিয়ের আগে প্রত্যেকের শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা জরুরি। যেসব মেয়ের বাচ্চা আছে তাদের চোখেমুখে ক্লান্তি দেখা যায় উল্লেখ করে বাচ্চাদের দুধ না খাওয়ানোর পরামর্শও দেন তিনি।

যেসব মেয়ে তাঁর ক্লাসে অস্বস্তিবোধ করেন তাদের বিয়ে করেই ক্লাসে আসার পরামর্শ দেন এ শিক্ষক। এসব নিয়ে যদি কোনো মেয়ে প্রতিবাদ করে তাদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি। পাশাপাশি পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য মেয়ে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব দেন। খুশির ধরনটা কী সেটা মেয়েরা জানে বলে অশ্লীল ইঙ্গিত দেন ইংরেজির এ শিক্ষক। কেউ যদি বিয়ে করতে আগ্রহী না হয় তাহলে এ শিক্ষকের কাছে যেতে বলেন অনেককে। এমনকি বোনের জামাইকে অর্ধেক জামাই হিসেবেও উল্লেখ করেন ইংরেজির শিক্ষক মাসুদ মাহমুদ।

অভিযোগের বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক ও ভিত্তিহীন দাবি করে ড. মাসুদ মাহমুদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইউএসটিসি’র চেয়ারম্যান মহোদয় আপনি যে বিষয়টি জানতে চান সেই সব অভিযোগের একটি কপি আমার কাছে পাঠিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়বস্তু আর ভাষা দেখে আমি রীতিমত অবাক। আমার দীর্ঘ শিক্ষকতার ক্যারিয়ারে এই ধরনের কোনো অভিযোগ আছে কিনা আপনি খবর নিয়ে দেখতে পারেন। এখান থেকে যেসব শিক্ষক অযোগ্যতার কারণে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারাই শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে পুতুল বানিয়ে আমার চরিত্রে কালিমা লেপন করতে চাচ্ছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি শিক্ষার্থীদের পড়িয়েছি। কেউ কোনো সময়ে আমার বিরুদ্ধে অন্তত এই ধরনের যৌন সর্ম্পকিত অভিযোগ আনতে পারবে না। এখানে আসার পর একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে লেগেছে। তবে অভিযোগ উঠলেও সুষ্ঠু তদন্ত করলে এসব অভিযোগের ভিত্তি পাবে না। যেসব শিক্ষার্থী এসব অভিযোগ করেছে তারা কেন এসব করছে সেটাও আমি বুঝছি না। শিক্ষকতা জীবনের শেষের দিকে এসে এই ধরনের অপবাদ নিজের জন্যও বিব্রতকর।’

সিএমপির উপ কমিশনার (উত্তর) বিজয় কুমার বসাক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিস্তারিত জানতে হলে নিজের অফিসে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!