ক্রেতা নেই, চট্টগ্রামের নিলামে তবু একই ‘কুমির ছানা’ বারবার

চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে প্রায় ৪০টি লট গত এক বছর ধরে বারবারই নিলামে তোলা হয়, কিন্তু কেউ নেন না পণ্যগুলো। এমনকি এসব লটের বিপরীতে কোন দরপত্রই পড়ে না। এরপরও নিলামের দরপত্রে রাখা হয় লটগুলো।

জানা গেছে, সম্প্রতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর প্রতি মাসে দুইবার নিলাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাস্টমসের নিলামকে আরও গতিশীল করার জন্য মাসে দুইবার নিলামের এ উদ্যোগ নিয়েছে কাস্টমস হাউস।

কাস্টমস হাউসের কয়েকটি নিলামের দরপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর কাস্টমসের নিলাম (টেন্ডার নং ১৮/২০২১) অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮৭টি লট নিলামে তোলা হলেও ৩৮টি লটের বিপরিতে কোন ধরনের বিড হয়নি। এ ৩৮টি লটের বিপরিতে দরপত্র না পড়ায় এসব লট বন্দরে পড়ে থাকছে।

শুধু গত নিলাম নয়, এসব লট এ বছরের প্রতিটি নিলামেই রাখা হয়েছে। কিন্তু কোন বিডার এসব লট নিতে চান না। উক্ত টেন্ডারের ১নং লটে ছিল ১৫২ কেজি সালফিউরিক এসিড, ২নং লটে ২০১০ কেজি টাইলস কেমিক্যাল, ৩নং লটে ১৫ হাজার ৫০০ কেজি ড্রাগন ফ্রুট, যার কোন দরপত্র পড়েনি।

আবার ৪নং লটে ১৭৩ রোল ফেব্রিক্স এর বিপরিতে ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার দরপত্র জমা পড়ে। এরপর ৫নং লটে ১০ কার্টন হ্যাঙ্গার, ৬নং লটে ১৯ হাজার ৪৪০ কেজি জিংক কনসেন্ট্রেট, ৭নং লটে ৫২ কেজি গার্মেন্টস অ্যাক্সেসরিজ লটের বিপরীতে কোন ধরণের বিড পড়েনি।

এদিকে, একই টেন্ডারের ২৬নং লটে বই ও ২৭নং লটে প্লাস্টিক হ্যাঙ্গার রাখা হয়েছিল। কিন্তু এ দুটি লটেও কেউ বিড করেননি। ফলে এসব লট কেউ নিচ্ছেন না। একই লটগুলো এর আগের বেশ কয়েটি টেন্ডারেও রাখা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিয়মিত বিডার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, কিছু পণ্য আছে ধ্বংসযোগ্য, কিছু পণ্য আছে পচনশীল। এসব পণ্য একজন বিডার কেন নিবে?

বিডার ফেরদৌস ইসলাম বলেন, কিছু লটের পণ্য এলোমেলোভাবে রাখা, ওজনে বা পরিমাণে কম। এসব লট নিলামে নিয়ে আরও ঝামেলায় পড়তে হয়। তার চেয়ে লট বিড না করাই ভালো।

তিনি বলেন, এগুলো বারবার নিলামে রাখা হচ্ছে। কিন্তু কেউ তো নিচ্ছেন না। আবার দেখা যায়, প্রকৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য লটেই নির্ধারণ করা আছে। তাই সেগুলো নিয়ে বিপদে পড়তে হবে। সেজন্য আর্থিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করেই লটগুলো কেউ নিচ্ছে না।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান কেএম করপোরেশনের ব্যবস্থাপক মুরশেদুল আলম বলেন, ‘কাস্টমসের গত নিলামে ৮৭ লটের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৩০০ দরপত্র পড়েছে। কিন্তু কিছু লটের বিপরীতে কোন দরপত্র পড়েনি সেটি ঠিক। কেন বিডাররা এসব লটে অংশগ্রহণ করছে না— সেটি আমাদের জানা নেই।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার আলী রেজা হায়দার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ দরপত্র পায় কি-না সেটি আমাদের দেখতে হয়। তাই লটগুলো প্রতি নিলামে রাখা হচ্ছে। যে লটগুলোর কোন দরপত্র পড়ছে না সেগুলো পরবর্তীতে কয়েকটা একসাথে করে মেগা লট দেওয়া যেতে পারে। আবার যে লটগুলোর পণ্যের মেয়াদ গুণগত মান ঠিক আছে সেগুলোকে পুনরায় নিলামে রাখা যাবে।’

কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!