ক্রিকেট ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও মুনাফার লভ্যাংশ চান ক্রিকেটাররা

১৩ দফা দাবি নিয়ে বিসিবির সাথে বৈঠক রাতে

দেশের প্রথম সারির ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে ব্যস্ত সময় কাটছে ক্রীড়া সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের। এক দৌঁড়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আবার মিরপুর সেখান থেকে গুলশানে ক্রিকেটারদের সংবাদ সম্মেলন। সাংবাদিকরা অপেক্ষায় ছিলেন সাকিব-তামিমদের কেউ আসবেন সংবাদ মাধ্যমের সামনে। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হয়ে মাইক্রোফোনের সামনে এলেন তাদের আইনজীবী। বুধবার সন্ধ্যায় আইনজীবীর মাধ্যমে ক্রিকেটাররা জানালেন, নতুন দুটিসহ তাদের ১৩টি দাবি নিয়ে বোর্ডের কাছে গেছে চিঠি।

নতুন দাবিতে ক্রিকেট ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও ক্রিকেট বোর্ডের মুনাফার একটি অংশের ভাগ চেয়েছেন ক্রিকেটাররা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ম্যাচ ফি এক লাখ টাকা করার চাওয়া এসেছে। ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দাবির কথা তুলে ধরেন।

মোস্তাফিজুর জানান, ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হয়ে তার সহকারী ব্যারিস্টার আহসান ভূঁইয়া ১৩টি দাবি সম্বলিত চিঠি পাঠিয়েছেন বিসিবিতে। আগের দাবিতে ছিল ১১টি চাওয়া।

বুধবার দুপুর থেকে ক্রিকেটারদের অপেক্ষায় বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন ও অন্য বোর্ড পরিচালকরা আছেন মিরপুর কার্যালয়ে। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মিরপুরে বৈঠকে বসেননি সাকিব-তামিমরা। গুলশানের একটি হোটেলে নিজেদের মধ্যে রুদ্ধদ্বার আলোচনা করেন শীর্ষ ক্রিকেটাররা।

সাংবাদিকদের কাছে আইনজীবীর ব্রিফিংয়ের পর সাকিব জানান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড- বিসিবির সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ক্রিকেটাররা। বুধবারই বিসিবিতে যাবেন সাকিব, তামিমরা।

সিক্স সিজন্স হোটেলের সংবাদ সম্মেলনে সাকিব আল হাসান বলেন, ‘সিদ্ধান্ত যেহেতু সবাই মিলে নিয়েছি, সেক্ষেত্রে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্তও সবাই মিলে নিতে হবে। সেদিন সময় কম থাকায় আমরা ওভাবে গুছিয়ে দাবি উপস্থাপন করতে পারিনি। আর সেজন্য বিষয়টা সুন্দর করে আয়োজনের উদ্দেশ্যেই আমাদের সময় নেওয়া। বিসিবি আমাদের ডেকেছে, আমরা নিজেরাই যোগাযোগ করে আলোচনায় বসতে যাচ্ছি।’

‘আমরা কেউ কারও থেকে দূরের নই। দুপক্ষ মিলেই কিন্তু বিসিবি। বিসিবির প্রতি ব্যক্তিগত সম্মানের জায়গা আমাদের আগের মতই আছে। ক্রিকেটাররাও খেলতে চায়, সুস্থ থাকতে চায়, পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত কর‍তে চায়।’

এর আগে গুলশানের সিক্স সিজনস হোটেলে ক্রিকেটারদের মুখপাত্র হয়ে আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘সব দাবির প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবায়ন হলে আসন্ন ভারত সফরে কোনো প্রভাব পড়বে না। বিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটারদের আলোচনা হলেই সব কিছু সমাধান হয়ে যাবে আশা করি।’

১৩ দফা দাবিঃ

১. কোয়াবের বর্তমান কমিটিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। প্রফেশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

২. প্রিমিয়ার লিগ আগের মত করতে হবে। নিজেদের ডিল করতে দিতে হবে।

৩. এ বছর না হোক, তবে পরের বছর থেকে আগের মত বিপিএল হতে হবে, স্থানীয় ক্রিকেটারদের দাম বাড়াতে হবে।

৪. প্রথম শ্রেণির ম্যাচ ফি বাড়াতে হবে, বেতন বাড়াতে হবে, ১২ মাস কোচ ফিজিও দিতে হবে, প্রতি বিভাগে অনুশীলনের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫.রিমিউনারেশন বাড়াতে হবে। ভালো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা ও তাঁদের বেতন বাড়াতে হবে।

৭. দেশি সব স্টাফদের বেতন বাড়াতে হবে, কোচ থেকে গ্রাউন্ডসম্যান, আম্পায়ার সবার বেতন বাড়াতে হবে।

৮. ঘরোয়া ওয়ানডে লিগ বাড়াতে হবে, বিপিএলের আগে আরেকটি টি-টোয়েন্টি লিগ করতে হবে।

৯. ঘরোয়া ক্যালেন্ডার আগে থেকেই ঠিক করতে হবে।

১০. সব লিগে ক্রিকেটারদের পাওনা টাকা সময়ের মধ্যে দিতে হবে।

১১. ফ্রাঞ্চাইজি লিগ দুইটার বেশি খেলা যাবে না-এমন নিয়ম তুলে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে সবাই খেলবে।

১২. বিসিবির যে রেভিনিউ জেনারেট হচ্ছে তার একটা অংশ ক্রিকেটারদের দিতে হবে।

১৩. বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের জন্যও একই রকম নিয়ম প্রযোজ্য হবে। ক্রিকেটাররা মনে করে নারী ক্রিকেটাররাও সমান অধিকার ডিজার্ভ করে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!