ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির দেখা পেলেন তামিম ইকবাল

প্রথম শ্রেণির সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড, করলেন ৩৩৪* রান

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের সকল রেকর্ড ভেঙে দিয়ে নতুন রেকর্ড গড়লেন ব্যাট হাতে বেশ কিছুদিন ধরে নিষ্প্রভ তামিম ইকবাল। জাতীয় ক্রিকেট লিগের চলতি মৌসুমের প্রথম ম্যাচেই ট্রিপল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন দেশ সেরা এই ওপেনার। তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে চলছিল চুলচেরা বিশ্লেষণ আর সমালোচনা। তবে কোনো কিছুরই তোয়াক্কা ছিল না তামিম ইকবালের। সমালোচনার জবাব যিনি সব সময় ব্যাট হাতেই দিয়ে থাকেন। আর এবারেও সেটাই করলেন। পাকিস্তান সফরে ধীর গতির ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচনার শিকার হয়ে ফিরলেন দেশে। এরর বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের প্রথম ম্যাচে ইস্ট জোনের হয়ে নেমেই হাঁকালেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। আর সেই সঙ্গে দেশের ক্রিকেট লিগে গড়লেন নতুন ইতিহাস।

নিজের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যাটিং ইনিংস খেললেন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেন্ট্রাল জোনের বোলারদের যেন পাত্তায় দিলেন না। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) তুলে নিয়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেট লিগে নিজের প্রথম দ্বিশতক। তবে সেখানেই থামেনি তামিমের ব্যাট। তৃতীয় দিনে এসে তুলে নিলেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিও।

ট্রিপল সেঞ্চুরির পরেও যেন তৃপ্ত হয়নি তামিম ইকবালের ব্যাট। সামনে যে তখন হাতছানি দিচ্ছে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাস নতুন করে লেখার। সামনে হাতছানি দিচ্ছে নিজের নাম সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যাওয়ার। সেটাই করলেন তামিম। তার আগে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস খেলেছিলেন রাকিবুল হাসান। বাংলাদেশের হয়ে এতদিন পর্যন্ত কেবল একটিই ট্রিপল সেঞ্চুরি ছিল। ২০০৬-০৭ মৌসুমে বরিশালের হয়ে সিলেটের বিপক্ষে ৩১৩ রান করেছিলেন রকিবুল। এছাড়া এতদিন ধরে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে রাকিবুলের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহ ছিলেন নাসির হোসেন। ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে রংপুর বিভাগের হয়ে বরিশাল বিভাগের বিপক্ষে ২৯৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন নাসির।

প্রায় ১৪ বছর ধরে রাকিবুলের ইনিংসটিই ছিল দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস। তবে অপেক্ষার পালা এবার শেষ, রাকিবুলকে পেছনে ফেলে নতুন রেকর্ড গড়লেন তামিম। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ তো বটেই সেই সঙ্গে দেশের ক্রিকেটেরও সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেললেন দেশ সেরা ওপেনার।

ইস্ট জোনের হয়ে ব্যক্তিগত ৪২০তম বলে ৩১৩ রান করে রকিবুলের রেকর্ড স্পর্শ করেন তামিম। শুভর বল লেগ সাইডে ঠেলে দিয়ে এক রান নিয়ে স্পর্শ করেন রকিবুলের ১৪ বছরের রেকর্ড। আর ৪২১তম বলে টপকে যান রকিবুল হাসাএর ৩১৩ রানের ঘরোয়া ক্রিকেটের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। সেই সঙ্গে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান নিজের। এই রিপোর্ট লেখার সময় নিজেদের ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেয় ইস্ট জোন। তকণ তামিম ইকবাল ফরাজিত ছিলেন ৪২৬ বলে ৩৩৪ রানে। তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ৪২টি চার আর ৩টি ছয়ে। আর ইস্ট জোনের দলীয় সংগ্রহ দাঁড়ায় ২ উইকেট হারিয়ে ৫৫৫ রান।

আড়াইশ পেরিয়ে খানিক ধীর হয়েছিলেন, তবে মনোযোগ হারাননি একদম। ইনিংসের শুরু থেকে যে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে ব্যাটিং শুরু করেছিলেন, তা বজায় রেখেছেন পাঁচশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে। যা তাকে এনে দিয়েছে প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির গৌরব।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের অষ্টম আসরের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে পূর্বাঞ্চলের হয়ে মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো তিনশ রান করলেন দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। তবে দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনিই প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান নন।

বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তামিমের আগে একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি ছিলো রকিবুল হাসানের। ২০০৭ সালে জাতীয় লিগের ম্যাচে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বরিশালের হয়ে সিলেটের বিপক্ষে ৩১৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন ডানহাতি রকিবুল। ৬৬০ মিনিট ৬০৯ বলে ৩৩ বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল ঐ ট্রিপল সেঞ্চুরি।

রকিবুলের প্রায় ১৩ বছর পর, ২০২০ সালে এসে দেশের পক্ষে দ্বিতীয় ট্রিপল সেঞ্চুরি করলেন তামিম। প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টা ব্যাটিং করে ৪০৭ বলে ৪০ চারের মারে তিনশ রান পূরণ করেছেন তামিম। তার পুরো ইনিংসে নেই কোনো ছক্কা। যা প্রমাণ করে, বড় ইনিংস খেলতে কত বদ্ধ পরিকর ছিলেন এ বাঁহাতি ওপেনার।

পূর্বাঞ্চলের ইনিংসের ১৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আলতো করে কবজির মোচড়ে শর্ট মিড উইকেটের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েই ট্রিপল সেঞ্চুরি ক্লাবে প্রবেশ করেন তামিম। ৫৬০ মিনিটের এ ইনিংসটিকে তিনি সাজিয়েছেন ১০৯টি সিঙ্গেল, ১৪টি ডাবল, ১টি ট্রিপল ও ৪০টি বাউন্ডারির মাধ্যমে।

রোববার তৃতীয় দিনের শুরুতে ২৮১ বল খেলে ২২২ রানে অপরাজিত ছিলেন তামিম। খানিক রয়েসয়ে খেলে ১২৬ বল মোকাবেলা করে বাকি ৭৮ রান করেন তিনি। তবু আড়াইশ থেকে তিনশতে যেতে ৯৮টি বল লেগেছে তামিমের। যা কি না তার এ ইনিংসের প্রথম পাঁচ ফিফটির চেয়ে ধীরতম।

একনজরে তামিম ইকবালের ৩০০
পঞ্চাশ রান – ৭৬ বল, ১০৫ মিনিট, ৭ চার
একশ রান – ১২৬ বল, ১৭১ মিনিট ১৪ চার
দেড়শ রান – ১৮০ বল, ২৪৫ মিনিট, ২১ চার
দুইশ রান – ২৪২ বল, ৩০২ মিনিট, ২৯ চার
আড়াইশ রান – ৩১৫ বল, ৪৪৯ মিনিট, ৩৪ চার
তিনশ রান – ৪০৭ বল, ৫৬০ মিনিট, ৪০ চার

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস
১. তামিম ইকবাল – ৩৩৪* রান (২০১৯-২০)
২. রকিবুল হাসান – ৩১৩* রান (২০০৬-০৭)
৩. নাসির হোসেন – ২৯৫ রান (২০১৭-১৮)
৪. মার্শাল আইয়্যুব – ২৮৯ রান (২০১২-১৩)
৫. মোসাদ্দেক হোসেন – ২৮২ রান (২০১৪-১৫)

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!