ক্যান্সারের কাছে হার মানলেন হাসপাতালেই বিয়ে করা ফাহমিদা

শেষ পর্যন্ত ক্যান্সারের কাছে হার মানতে হলো হাসপাতালের বেডে বিয়ের পিঁড়িতে বসা আলোচিত চট্টগ্রামের সেই ফাহমিদাকে।

সোমবার (২১ মার্চ) সকাল সাড়ে সাতটায় চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফাহমিদার ভগ্নিপতি গোলাম রসুল নিশান। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে আজ (সোমবার) সকালে তিনি মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়ার বাসিন্দা ফাহমিদার সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল চকরিয়ার মাহামুদুল হাসান নামে এক যুবকের সঙ্গে। সেই সম্পর্ককে চূড়ান্ত রূপ দিতে দুই পরিবারের মধ্যে বিয়ের কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়। এরই মধ্যে ফাহমিদা হয়ে পড়েন অসুস্থ।

ডাক্তাররা নিশ্চিত হন, ফাহমিদা মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রেমিক মাহামুদুল ও তার পরিবারও সেই খবরটি জেনে যান। এমন অবস্থায় ক্যান্সার আক্রান্ত মেয়েটিকে বিয়ে না করে পিছিয়ে আসাটাই ছিল অনেকটা স্বাভাবিক। কিন্তু মাহামুদুল চট্টগ্রামের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা ফাহমিদাকে সেখানে গিয়েই বিয়ে করে প্রমাণ করলেন, প্রকৃত ভালোবাসা হল এটিই।

গত ৯ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ে হয়। হাসপাতালের বেডেই বর-কনে সেজে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় ফাহমিদা ও মাহামুদুলের।

মাহমুদুল হাসান চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালীর সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের ছেলে। তিনি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছেন। অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ বাকলিয়ার বাসিন্দা ফাহমিদা কামাল আইইউবি থেকে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন।

কলেজে পড়াকালেই ফাহমিদা ও মাহামুদুলের পরিচয়। একসময় সেটা প্রেমের সম্পর্কে রূপ নেয়। এরই মধ্যে হঠাৎ ফাহমিদার শরীরে মরণব্যাধি ক্যান্সার ধরা পড়ে।

উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে ঢাকায় এবং পরে ভারতে নেওয়া হয়। সেখানে দীর্ঘ একবছর চিকিৎসার পর চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন ফাহমিদার চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। এরপর থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন ছিলেন ফাহমিদা।

ফাহমিদার এমন অবস্থা জানার পরও মাহমুদুল হাসান বিয়ের ব্যাপারে অটল থাকেন। নিজের পরিবারকে নিয়ে এসে প্রস্তাব দিলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি ফাহমিদাকে বিয়ে করতে চান। মৃত্যুপথযাত্রী ফাহমিদাকে নিয়ে এমন সিদ্ধান্তে অবাক হয়ে সবাই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হাসান তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। শেষ পর্যন্ত দুটি পরিবারই সম্মত হয়।

শেষ পর্যন্ত গত ৯ মার্চ রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। কনে ফাহমিদাকে পরানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি আর গলায় সোনার হার। বর মাহমুদুল হাসানকে পরানো হয় পায়জামা ও পাঞ্জাবি। দুজনে মিলে কেক কেটে মালা বদল করেন।

আরএম/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!