ক্যান্সারের উপাদান লুকিয়ে আছে দেশের সব ডিটারজেন্টে!

কাপড়ের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডিটারজেন্টে ব্যবহৃত হয় ‘ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্ট’ নামের উপাদান। এই উপাদান চর্মরোগ, জিনগত পরিবর্তন, কিডনি রোগ ঘটায়। ক্ষেত্র বিশেষে অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে বিক্রিয়া করে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান তৈরিতেও ভূমিকা রাখে। আর বাজারে বিক্রি হওয়া সব ব্র্যান্ডের ডিটারজেন্টে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এই ‘ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্ট’ অতিমাত্রায় পাওয়া গেছে।

এটি উঠে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. নাহিন মোস্তফা নিলয়ের এক গবেষণায়। একই বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শফি মুহাম্মদ তারেক গবেষণাটি তত্ত্বাবধায়ন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অধীনে পরিচালিত এই গবেষণায় অর্থায়নও করেছে ইউজিসি।

গবেষক মো. নাহিন মোস্তফা নিলয় জানান, ‘গবেষণার জন্য বাজারের জনপ্রিয় ও বিক্রির শীর্ষে থাকা ১০টি ডিটারজেন্ট ব্র্যান্ড নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। অধিকাংশ ডিটারজেন্টেই ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্টের পরিমাণ এবং প্রবলতা আদর্শিক পরিমাণের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।’ গবেষণার পলিসির অংশ হিসিবে নিলয় ব্র্যান্ডগুলোর নাম প্রকাশ না করলেও সরকারের কোনও সংস্থা চাইলে তিনি তার গবেষণার তথ্য-উপাত্তগুলো দিয়ে সহায়তা করবেন বলে জানান।

ডিটারজেন্টে ‘ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্ট’-এর প্রবলতা কিভাবে নির্ণয় করেছেন জানতে চাইলে নিলয় বলেন, স্পেক্ট্রোফটোমিটার ও থ্রি-ডি এক্সাইটেশন এমিশন ম্যাট্রিক্সের সাহায্যে তিনি এই ফলাফল নির্ণয় করেছেন।

তিনি আরও জানান, কাপড়কে সাদা ও উজ্জ্বল করতে অধিকাংশ ডিটারজেন্ট ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্ট হিসেবে টিনোপোল নামের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে। বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় কাপড় ধোয়ার টিনোপোল যুক্ত পানি পরবর্তীতে নদীনালা ও জলাশয়ের পানিতে মিশে। পদ্মা নদী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়ের পানিতে ফ্লুরোসেন্ট হোয়াইটেনিং এজেন্টের অস্তিত্ব পাওয়ার কথাও জানান এই গবেষক।

রসায়নিক এই পদার্থ এতটাই ক্ষতিকর যে পানি শোধনাগারেও তা সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ করা যায় না। চূড়ান্ত পর্যায়ে পানি শোধনের জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গেও এটি বিক্রিয়া করে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী পদার্থ তৈরি করে ফেলে বলে জানান নিলয়।

গবেষণাটির তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. শফি মুহাম্মদ তারেক বলেন, ‘ডিটারজেন্টে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি নিয়ে আগে মানুষ ভাবেনি। সেই অর্থে গবেষণাটির প্রাথমিক ফল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে মানুষ সচেতন হবে। গবেষণা প্রতিবেদনটি ইউজিসিতে জমা দেওয়া হয়েছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!