কোরবানির আগে বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম

কোরবানির আগে বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম 1বিশেষ প্রতিবেদক : আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে গবাদি পশুর খাদ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। সারা বছর গো-খাদ্যের চাহিদা কম বেশী থাকলেও কোরবানির ঈদ আসার আগে ধানের কুঁড়া,বিভিন্ন ধরণের ভুষি, ভুট্টা, ডালের ছোবলা জাতীয় গো-খাদ্যের চাহিদা বাড়ে। চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এসব উপাদানের দামও।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সারা বছর গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও কোরবানি ঈদ আসার আগে গো-খাদ্যের দাম বাড়ে। কারণ এই সময়ে দেশের বাইরে থেকে নানা ভাবে বৈদেশিক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সীমান্ত এলাকায় অবৈধভাবে পশুর আমদানি বাড়ে। তাছাড়া এবার উত্তরাঞ্চলসহ দেশব্যাপী বন্যার কারণে গবাদিপশুর খাদ্যের কিছুটা সংকট দেখা গেছে। আর এতে করে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় এর দাম বাড়ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত জুন মাসের পর থেকেই ক্রমান্বয়ে বেড়েছে পশু খাদ্যের দাম।

দেশের বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি বস্তা ভুষির (১৮ কেজি) দাম ৭৩০ থেকে ৭৫০ টাকা টাকা। জুলাই মাসে ৬২০ টাকা এবং জুন মাসে এই ভুষি বিক্রি হয়েছে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকায়।

গত জুনে আটাকুঁড়ার বিক্রয়মূল্য ছিল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) ৭০০ টাকা, জুলাইতে ২০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৯০০ টাকা। বর্তমানে এই আটাকুঁড়ার বাজার দর চলছে ১০৩০ থেকে ১০৮০ টাকা।

পাতা ভুষি গত জুনে প্রতি বস্তা ( ৩৫ কেজি) বিক্রি হয়েছিল ৭৮০ টাকায়। জুলাইতে বিক্রি হয়েছিল মান ভেদে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। বর্তমান এই ভুষির বাজার দাম চলছে ১ হাজার ৫০ টাকা।

এদিকে মোটা কুড়া প্রতি বস্তা (৩৫ কেজি) জুনে ৩২০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা। চিড়া কুঁড়া প্রতি বস্তা (৪৫ কেজি) জুনে ৫৪০ টাকা, জুলাইতে ৬০০ টাকা হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ টাকা দরে।

এদিকে মুগডালের ছোবলার ভুষি প্রতি মণ ( ৩৭ দশমিক ২০ কেজি) জুনে ৯২০ টাকা, জুলাইয়ে ১০৩০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে এই ভুষির বাজার দর ১ হাজার ১৩০ টাকা। মুসুরি ডালের ছোবলার ভুষি জুন মাসে ৭০০ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৮৪০ টাকা। সয়াবিনের খৈল ২ মাস আগে ৩২ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে।

ভুট্টা জুনে প্রতি কেজি ১৭ টাকা বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা দরে। এছাড়া সয়াবিন ফল গুড়া জুলাই মাসে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও আজ চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা।

চাক্তাইয়ের জিলানী ট্রেডিং এর স্বত্বাধিকারী আবু বক্কর জানান, ২ মাস আগেও ভুষি, কুঁড়া, ছোবলার ভুষির দাম বেশ কম ছিল। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যা হওয়ার কারণে পশু খাদ্যের সংকট দেখা গেছে। যা বাজার ঘুরলেই দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়া হটাৎ চাহিদা বাড়ার কারণে আমাদের বেশী দামে এই খাদ্য কিনতে হচ্ছে। এজন্য বাজারে গো- খাদ্যের দাম বেশী।

এদিকে পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাকিম আলী জানান, প্রতি মাসেই এই গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে। গত বছরের কোরবানির আগ মুহূর্তে বাজারে যে দাম ছিল এই বছর কোরবানির ঈদ আসার প্রায় ২০ দিন আগে একই দামে বিক্রি হচ্ছে। যখন হাটে বাজারে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হবে তখন এই খাদ্যের দাম আরও বাড়বে।

তিনি বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে বেশী দামে গো- খাদ্য কিনছি। সেজন্য খুচরা বাজারে এই গো-খাদ্যের দাম বেশী পড়ে যাচ্ছে। সামনে আরও দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে নগরীর হালিশহরের ডেইরি ফার্মের মালিক ইশরাফিল হোসেন জানান, আমার ডেইরি ফার্মে আপাতত ৩০টির উপর গরু আছে। কোরবানি ঈদ আসার আগে আরও বেশ কিছু গরু আসবে। কিন্তু পাইকারি কিংবা খুচরা বাজারে এই পশু খাদ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকায় ডেইরি ফার্ম চালানোই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রাম ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্য মো. শাহেদ আয়েতুল্লাহ খান বলেন, গত ২ মাস ধরে গো-খাদ্যের দাম ধাপে ধাপে বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে ভেজাল তো আছেই। এতে করে গবাদি পশুর দুধ ও মাংস উৎপাদনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে খামারিদের। কিন্তু বাজারে গো-খাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে না কেউ। এতে করে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটারিংয়ের মতো এই গো-খাদ্যের উপর মনিটারিং করা হোক।- অর্থসূচক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!