কোন্দলে পুড়ছে চট্টগ্রামের বিএনপি, যুবদল সরব থাকলেও ছাত্রদল প্রাণহীন

দুই বছরেও অপূর্ণ নগর বিএনপির কমিটি, মাঠে নেই স্বেচ্ছাসেবক দল

চট্টগ্রামের বিএনপির রাজনীতি অন্তর্কোন্দল দিন দিন বেড়েই চলেছে। গ্রুপিং, সিনিয়রদের টপকে জুনিয়রদের নেতা বানানোসহ নানান অভিযোগে এখন বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএনপির রাজনীতি। বিএনপির মতো একইভাবে সহযোগী সংগঠন শ্রমিক দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদলেও দেখা দিয়েছে বিভক্তির সুর। বর্তমানে তিন বলয়ে বিভক্ত হয়েছে বিএনপির রাজনীতি। এসব কোন্দলের কারণে সভা-সমাবেশেও লোক সমাগম করতে পারছে না তারা। গত তিন বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও দিতে পারেনি নগর বিএনপি। এছাড়া অঙ্গ সংগঠনগুলোর নগরীর সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটি ঘোষণা দিতে পারেনি। এদিকে বিএনপি নেতা বলছেন, চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতি যুবদল নির্ভর হয়ে পড়েছে।

দুই বছরে পূর্ণাঙ্গ হয়নি নগর বিএনপির কমিটি

২০২০ সালের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনকে আহ্বায়ক ও আবুল হাশেম বক্করকে সদস্য সচিব করে ৩৯ সদস্যের কমিটির অনুমোদন দেয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অন্তর্কোন্দলের কারণে প্রায় দুই বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। ১৫ থানা, ৪৩ ওয়ার্ড ও ১২৯ ইউনিটেরও কমিটি হয়নি। সর্বশেষ বিএনপির তৃণমূলকে সাজাতে মার্চে স্কাইপি বৈঠকে তারেক রহমান তিন মাসের মধ্যে থানা, ওয়ার্ড, ইউনিট কমিটি গঠনের জন্য সম্মেলন ডেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে সাত সদস্যের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করেন। এই কমিটিকে সহযোগিতা করতে থানাভিত্তিক আরও পাঁচটি কমিটি গঠন করা হলেও সাত মাসে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

এর মধ্যে গত ১২ অক্টোবর আকবরশাহ বিএনপির ইউনিট কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ এনে আমীর খসরুর অনুসারীরা ঝাড়ু মিছিল করেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপি কোন্দলের কারণে সাংগঠনিক ভিত অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপি তাকিয়ে থাকে যুবদলের ওপর। নগর বিএনপি আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত ও সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর এক সময় আব্দুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী ছিলেন। তবে সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর এখন আমীর খসরুর রাজনীতি করছেন।

দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও কোন্দলের বিষয়ে জানতে চাইলে সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ৩২টি ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড, থানা কমিটি পর্যায়ক্রমে করা হবে। বিএনপির সব সমাবেশে যুবদল নেতাদের মঞ্চে ডাকা হয়। কেন্দ্রীয় সমাবেশে নির্দেশনা থাকলে সে সময় ডাকা সম্ভব হয় না।’

৮ বছর ধরে এক কমিটিতেই ঝিমাচ্ছে শ্রমিক দল

আট বছর ধরে এক কমিটি দিয়ে চলছে শ্রমিক দল। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এএম নাজিম উদ্দিন অসুস্থ থাকায় এবং সাধারণ সম্পাদক নুরুল্লা বাহার বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে সংগঠনটি।

সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি এএম নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপি অনেকটা যুবদলের ওপর ভর করেই রাজনীতি করছে। আব্দুল্লাহ আল নোমান অনুসারী হওয়ার কারণে বিএনপির ভালো কোনো পদে আমাদের রাখা হচ্ছে না।’

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ‘নেই’ স্বেচ্ছাসেবক দলের

আগের মতো কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নেই নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের। ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম রাশেদ খাঁনকে সভাপতি ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন ভুলুকে সাধারণ সম্পাদক ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সেটি ১৭১ সদস্যে উন্নীত করা হয়। রাশেদ আমীর খসরু ও ভুলু মীর হেলালের অনুসারী। কিন্তু তারা সব ওয়ার্ডে কমিটি ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে ১৫টি থানা ও ২১টি ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেন সভাপতি এইচএম রাশেদ খাঁন।

এইচএম রাশেদ খাঁন বলেন, তৃণমূল গোছানোর কাজ করছি, বিশাল শোডাউন আগামীতে অবশ্যই দেখবে নগরবাসী। রাশেদ আমীর খসরু অনুসারী ও সাধারণ সম্পাদক মীর হেলাল অনুসারী।

সভা-সমাবেশে সরব যুবদল

২০১৮ সালে ১ জুন সাবেক মহানগর ছাত্রদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সভাপতি ও মো. শাহেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫ সদস্যের কমিটির ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনই মীর হেলালের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

বিএনপির প্রায় সভা-সমাবেশে সরব উপস্থিতি দেখা যায় যুবদলের নেতাকর্মীদের। নেতাকর্মীদের মতে, যুবদলের মধ্যে কোন্দল না থাকায় এবং যোগ্য নেতৃত্বের কারণে যুবদল সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে।

মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, ইতোমধ্যে সবকটি থানা, ওয়ার্ড ও ১২৯ ইউনিটে প্রায় কমিটি গঠন ও বাদ বাকি কমিটি গঠনের কাজ চলমান রয়েছে। ছাত্রদলের ত্যাগী সাবেক কর্মী, যোগ্য নেতৃত্ব যুবদলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করেছে।

তবে সভা-সমাবেশে বিএনপির রাজনীতি যুবদলনির্ভর কিনা, জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেননি দীপ্তি।

দলীয় কর্মসূচিতে সক্রিয় নেই ছাত্রদল

চোখে পড়ার মতো তেমন কোনো কর্মসূচি দিতে পারেনি ছাত্রদল। দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে তারা।

২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর মো. সাইফুল আলম আহ্বায়ক, শরিফুল ইসলাম তুহিনকে সদস্য সচিব করে ৩৫ সদস্যের নতুন কমিটির ঘোষণা করা হয়।

চট্টগ্রামে সভা-সমাবেশে দলীয় কর্মীদের নিয়ে আশানুরূপ শোডাউন দিতে পারেনি ছাত্রদল।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম তুহিন বলেন, ‘অগোছালো ছাত্রদলের দায়িত্ব আমাদের হাতে দেওয়া হয়েছে। দলকে সাজাতে ও দমন-পীড়ন মোকাবেলা করতে ব্যস্ত ছিলাম আমরা। ছাত্রদল আগের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী।

তিনি আরও বলেন, ‘১৫টির মধ্যে ১২টির থানা কমিটি দেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে করার কথা। তবে এখনও ইউনিট কমিটি গঠন করা হয়নি।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!