কোতোয়ালী থানা রাতভর ‘কুরুক্ষেত্র’, ওসির জিডির মুখে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা কাউন্সিলরের

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কোতোয়ালী থানায় একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে মারমুখী আরচণের ঘটনা ঘটেছে। পরে সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও পুলিশ কমিশনার পর্যন্ত গড়ায় বিষয়টি। এরপর সিএমপির ডিসির (সাউথ) উপস্থিতিতে মধ্যরাতে কোতোয়ালী থানার ওসির রুমে বৈঠক করে বিষয়টি ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হয়েছে বলে ‘সরি’ বলে রেহাই পান কাউন্সিলর বিপ্লব। যদিও এ ঘটনায় জিডি আকারে থানায় রেকর্ড রেখেছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন।

hasan-murad-biplob
‘সরি’ বলে রেহাই পান কাউন্সিলর বিপ্লব
জানা গেছে, শনিবার (১১ মে) বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী থানাধীন জিপিওর সামনে সংকেত অমান্য করায় রকিবুল আলম নামে এক প্রাইভেট কারচালকের সঙ্গে ট্রাফিক কনস্টেবল আবুল কালামের বাকবিতণ্ডা হয়। সেই সময় ট্রাফিক সদস্যের ওপর ওই চালক চড়াও হলে খবর পেয়ে কোতোয়ালী থানার এসআই বাবলু কুমার পালের নেতৃত্বে একটি টিম গিয়ে রকিবুলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

এ খবর পেয়ে গতকাল ইফতারের আগে কাউন্সিলর বিপ্লব কয়েকজন অনুসারী নিয়ে কোতোয়ালী থানায় যান। সেখানে গিয়ে ট্রাফিক কনস্টেবল আবুল কালামকে জড়িয়ে ধরে বিষয়টি মিটমাট করার অনুরোধ করেন বিপ্লব। তখনই ডিউটি অফিসার পিএসআই নেলী দাশ বিষয়টি ওসির সঙ্গে কথা বলেই মীমাংসা করতে বলে ইফতারের পরে আসতে বলেন বিপ্লবকে। তখন কাউন্সিলর বিপ্লব পিএসআই নেলী দাশের কাছে জানতে চান তাকে চেনেন কিনা? এসময় পিএসআই নেলী দাশ তাকে বলেছেন, ‘আপনি যেই হোন ওসি স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। ওই প্রাইভেট কারচালককে ছাড়া হবে না।’

এ কথা শুনে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে যান কাউন্সিলর বিপ্লব। তখন কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করে নিজের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব জাহির করতে থাকেন বিপ্লব। এসব দেখে থানার অন্য অফিসাররা এসে বিপ্লবকে সেকেন্ড অফিসারের রুমে নিয়ে যান। এ খবর ওসি মহসীনকে জানানো হলে তিনি তাৎক্ষণিক ডিসি (সাউথ) এসএম মেহেদী হাসানকে ফোনে জানান। ডিসি এ খবরটি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে ফোনে জানান। ডিসি মেহেদী হাসান মেয়রের কাছে জানতে চান, থানায় গিয়ে পোশাকধারী পুলিশ অফিসারের সঙ্গে একজন কাউন্সিলর কিভাবে মারমুখী আচরণ করেন?

এ ঘটনায় মেয়র সমঝোতা বৈঠকের মাধ্যমে মীমাংসা করার প্রস্তাব দিলে রাত ১১টার পর ওসি মহসীনের রুমে ডিসি মেহেদী হাসান, এডিসি আব্দুর রউফ, এসি কোতোয়ালী নোবেল চাকমা এবং ওসি মহসীনের সঙ্গে কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের বৈঠক হয়। প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা এ বৈঠকে সব পুলিশ কর্মকর্তাই কাউন্সিলর বিপ্লবের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে মত দেন। এ সময় মেয়র ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ফোনালাপের পর বিপ্লব সেই পুলিশ কর্মকর্তা পিএসআই নেলী দাশের কাছে সরাসরি ক্ষমা চাইতে রাজি হন। পরে ওসির রুমেই নেলী দাশের কাছে ক্ষমা চান বিপ্লব। আর ওসি মহসীন এ ঘটনায় বিপ্লবের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেন।

জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ‘শনিবার বিকেলে কোতোয়ালী থানার জিপিও মোড়ে ট্রাফিক আইন না মেনে গাড়ি চালানোর কারণে রকিবুল আলম (২৬) নামে প্রাইভেটকার চালকের সঙ্গে এক ট্রাফিক কনস্টেবলের কথা কাটাকাটি হয়। রকিবুল ওই কনস্টেবলের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করায় থানা পুলিশের সহায়তা চায়। এ সময় কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি দল গিয়ে রকিবুলকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে দলবল নিয়ে কাউন্সিলর বিপ্লব রাতে থানায় গিয়ে রকিবুলকে ছেড়ে দিতে তদবির করেন। তখন বিপ্লব থানায় ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে থাকা এসআই (প্রবেশনারি) নেলী দাশের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। বিষয়টি নিয়ে পরে বিপ্লব ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও পুলিশের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’

গতকাল (শনিবার) রাত দেড়টার দিকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি বলে দাবি করেছিলেন। পরে রোববার সন্ধ্যায় জানতে চাইলে ওসি মহসীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামান্য একটি ঘটনা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে সেটি সিনিয়র স্যারদের উপস্থিতিতে কাউন্সিলর সরি বলায় মীমাংসা হয়ে গেছে।’

কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার পরিচিত এক প্রাইভেট কারচালকের সঙ্গে এক ট্রাফিক কনস্টেবলের কথা কাটাকাটি হয়। তাকে থানায় নিয়ে গেলে আমি ড্রাইভারকে ছাড়ানোর জন্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে থানায় যাই। এক পর্যায়ে সেই কনস্টেবলকে বুঝিয়ে বিষয়টি মীমাংসার পর্যায়ে নিয়ে আসি। এরই মধ্যে এক নারী অফিসার এসে কনস্টেবলকে চলে যেতে বলে আর চালককে আটকে রাখে। এসময় আমি নিজের পরিচয় দিলে তিনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। পরে সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে বসে বিষয়টি মীমাংসা করি। আমি সন্ধ্যার ঘটনার জন্য রাতের বৈঠকে দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

হাসান মুরাদ বিপ্লব ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর যুব লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বোর্ড সদস্য। তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ও সিজেকেএসের কাউন্সিলর।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!