কোণঠাসা জামায়াত শক্তি সঞ্চার করছে গোপন বৈঠকে

জামায়াত ইসলামী ভোটের রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি রাজনীতিতেও দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা। গত সংসদ নির্বাচনে সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে সারা দেশের মত চট্টগ্রামেও মাঠে নামতে পারেনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ দলটি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের মিত্র বিএনপি রয়ে সয়ে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হলেও জামায়াত একেবারেই চুপচাপ। এই ধরণের কৌশলের মাধ্যমে ভেতরে ভেতরে দলটি মাঠ গোছাচ্ছে। শক্তি সঞ্চয়ের মাধ্যমে নিজেদের শক্তি জানান দিতেও মরিয়া দলটি। সেই জানানটি দিতে চায় তারা অতীতের মত সরকারবিরোধী বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।

এরকমই সরকারবিরোধী নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার সুবর্ণা আবাসিকের ফ্ল্যাটে জড়ো হয়েছিলেন নগর জামায়াতের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক সাংগঠনিকসহ ১২ নেতাকর্মী। এ সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াতের নেতাকর্মীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা থাকা জামায়াত সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের কর্মীদের সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে। সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না রাখলেও গোপনে বিভিন্ন বিয়ে-মেজবানে অংশ নিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি সাংগঠনিক দিকনির্দেশনাও চলমান রাখছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়ে সরকারবিরোধী নাশকতার পরিকল্পনায় এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন নগর জামায়াতের শীর্ষ নেতারা

তবে পুলিশের তৎপরতায় সেই চেষ্টা ব্যাহত হয়। ওই দিন (২৯ আগস্ট) রাতে পাঁচলাইশ থানার সুর্বণা আবাসিকের ১৭/বি মেহেদিবাগ হাইটসের তৃতীয় তলায় সোহেল নামে এক জামায়াত কর্মীর ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ১২ জামায়াত নেতাকর্মীকে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে দুটি মামলা করেছেন। মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ, পাহাড়তলী থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, সিদ্দিকুর রহমান, মহানগর জামায়াতের সদস্য ফারুক আজম, আমির হোসেন, মো. তৌহিদুল আনোয়ার সোহেল, জামায়াত কর্মী আহমদ খালেক, মাহমুদুল আলম, হাজী জালাল আহমেদ ও মো. মাহফুজুল হক।

পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের নামে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিস্ফোরক মামলা এবং অপরটি অস্ত্র মামলা। আরো ১৭-১৮ জনকে পলাতক দেখিয়ে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এদের সবাইকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ আরো তথ্য উদ্ধারে আদালতে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন ওসি পাঁচলাইশ।

ওই ১২ জনকে গ্রেপ্তারের সময় ফ্ল্যাট মালিক সোহেল কৌশলে পালিয়ে গেলেও তাদের কাছ থেকে সাতটি ককটেল, তিনটি রাম দা, দুই প্যাকেট চকলেট বোমা ও গোপন নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। রিমান্ডে এনে আরো ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এর আগে গত জুনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে একটি জোট গঠন করলে তার নেপথ্যে জামায়াতের সক্রিয় ভূমিকা ছিল বলে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হয়। তবে ১ জুলাই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে ওই জোটের ডাকা আলোচনা সভায় জামায়াতের নেতাকর্মীরাও থাকবেন বলে এলডিপি যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম নিশ্চিত করলেও শেষ পর্যন্ত জামায়াত নেতাকর্মীদের সেখানে দেখা যায়নি।

অলি আহমদের ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ শুরু থেকেই সমালোচিত হচ্ছিল বিশেষ করে জামায়াতপ্রীতির কারণে। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতারা অভিযোগ করেন, ২০১১ সাল থেকে টানা আট বছর রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা জামায়াতই নিজেদের কৌশল হিসেবেই অলি আহমদকে সামনে আনার পেছনে ভূমিকা রেখেছে।

তারা বলছেন, এমনিতেই নিজেদের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে নতুন একটি সংগঠন তৈরির চিন্তাভাবনা নিয়ে গোপনে এগোচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। তার আগেই মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি বিরোধিতাকারী সংগঠনটি জাতীয় মুক্তি মঞ্চের কর্মসূচিকে সামনে রেখে নিজেদের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে চাইছে। এটাই তাদের কৌশল।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!