কোচ আফতাবের রাজসিক অভিষেক

আফতাব আহমেদ চৌধুরী। বাংলাদেশ জাতীয় দলের এক সময়কার নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। বয়সের অংক ছুঁয়েছে ত্রিশ। প্রায় দুবছর হতে চলল তুলে রেখেছেন ক্রিকেটের গ্লাভস-ব্যাট-প্যাড। নিজেরগুলো তুলে রাখলেও অন্যেরগুলোতে ধার দেয়ার কাজ শুরু করেন এর পরপরই। চট্টগ্রামে চালু করেন ক্রিকেট কোচিং অ্যাকাডেমি। সেই বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লেখান কোচিংয়ে। পর পর দু’মৌসুমে ছিলেন মোহামেডানের সহকারী কোচ। এবার লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জে হলেন প্রধান কোচ। কোনো ক্লাবের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। প্রথমবারের মতো প্রধান কোচ হয়েই বাজিমাত দেখালেন আফতাব।

সারওয়ার ইমরান কিংবা খালেদ মাহমুদ সুজনদের মতো দেশসেরা কোচদের পেছনে ফেলে আফতাব আহমদের লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জই এখনও পর্যন্ত সেরা। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের রাউন্ড রবিন লিগে ১১ ম্যাচের মধ্যে ১০টিতেই জিতেছিল আফতাবের দল। শীর্ষে থেকেই উঠেছে সুপার লিগে।

যদিও সুপার লিগে এসে এখনও পর্যন্ত তিন ম্যাচ খেলে একটিতে হেরে যেতে হয়েছে। তবুও, সর্বমোট ১৪ ম্যাচ শেষে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে এখনও পর্যন্ত লিগ টেবিলে সবার শীর্ষে আফতাবের রূপগঞ্জ। ২ পয়েন্ট কম নিয়ে, অর্থ্যাৎ ২২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে আবাহনী লিমিটেড।

সাভারের বিকেএসপিতে রোববার (২২ এপ্রিল) মুখোমুখি হতে যাচ্ছে পয়েন্ট টেবিলের সেরা দুই দল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ এবং আবাহনী লিমিটেড। এই ম্যাচেই হয়তো নিশ্চিত হয়ে যাবে এবারের চ্যাম্পিয়নশিপ। কারণ, আবাহনীকে যদি হারিয়ে দিতে পারে আফতাবের দল, তাহলে ৪ পয়েন্টের ব্যবধানে শীর্ষস্থান আরও নিরঙ্কুশ করে ফেলবে তারা। তখন, চ্যাম্পিয়নশিপের পথটাও তাদের সামনে মসৃণ হয়ে যাবে।

অন্যদিকে আবহানী যদি হারিয়ে দেয় রূপগঞ্জকে, তাহলে ধানমন্ডির দলটিই উঠে যাবে শীর্ষে। তখন, শিরোপা নিষ্পত্তির লড়াইটা লিগের শেষদিন পর্যন্তও গড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আবাহনীর সঙ্গে যখন এমন মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে রূপগঞ্জ, তখন শনিবার (২০ এপ্রিল) মিরপুরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন রূপগঞ্জের কোচ আফতাব আহমেদ। মুঠোফোনে কথা বলেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিনিধির সাথেও। তিনি জানান, প্রথমবার প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে এসে এমন সাফল্য পাওয়ার রহস্যের কথা। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ নিঃসন্দেহে এবারের প্রিমিয়ার লিগে এখনও পর্যন্ত সেরা দল। কিভাবে সম্ভব হলো এই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন? কোচ হিসেবে আফতাব আহমেদ কী পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছেন? জানতে চাইলে রহস্যটা জানিয়ে দেন তিনি। আফতাব বলেন, ‘সবথেকে বড় কথা, আমি ওদের মাঝে সবসময় বিশ্বাসটা ঢোকানোর চেষ্টা করেছি যে, যদি ভালো ক্রিকেট খেলা যায় তাহলে যে কোনো দলকে হারানো সম্ভব। ওদের মধ্যে এই বিশ্বাসটি আমি সবসময় ঢোকানোর চেষ্টা করেছি।’

শুধু তাই নয়, আফতাব চেষ্টা করেছেন দলের মধ্যে যারা জাতীয় দলের আছে কিংবা সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন, তাদের সঙ্গে জাতীয় দলের বাইরে থাকা কিংবা জুনিয়রদের মধ্যে ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে। আফতাব বলেন, ‘সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের দলে জাতীয় দলের অনেকে আছে। তবে আমাদের দলে ওরা যখন এসেছে তখন সেটি তারা মনেই রাখেনি যে তারা জাতীয় দলের খেলোয়াড়। আমরা ঠিক যেভাবে নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে আসছি ওরাও ঠিক একইভাবে মানিয়ে নিয়েছে। আমি বলবো যে, এটাই আমাদের সবথেকে বড় পার্থক্য ফলাফল ভালো করার ব্যাপারে।’

প্রথমবার কোচিং করাতে এসেই তো ঘরোয়া ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় অর্জনের সামনে দাঁড়িয়ে। আফতাব আহমদের অনুভুতির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এটি আসলে অনেক বড় একটি ব্যাপার। সত্যি কথা, যখন দলটি বানিয়েছিলাম তখন এত আশা করিনি। আলহামদুলিল্লাহ আমি যে বিশ্বাস করে নিয়েছি, তার চেয়ে অনেক বেশি আমাকে উপহার দিয়েছে। প্রত্যেকটি ম্যাচে ওরা যেভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছে তাতে আমরা ইনশাল্লাহ যে কোনো দলকে বিপদে ফেলতে পারবো। আমরা যদি এভাবে ক্রিকেট খেলে যাই তাহলে ভালো কিছু আশা করছি ইনশাল্লাহ।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!