কেন্দ্রের নজরে চট্টগ্রাম ছাত্রলীগের হাঙ্গামা, পৌর ভোট শেষের অপেক্ষা

চট্টগ্রাম মহানগরের ১৩ ইউনিটের কমিটি অনুমোদনের জের ধরে উদ্ভূত পরিস্থিতির দিকে সার্বক্ষণিক নজর রেখে চলেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক— এমন কথা নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের নেতাদের কয়েকজন। চট্টগ্রামের সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা তৃতীয় দফার পৌর নির্বাচন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।

কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা চট্টগ্রামের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখছেন জানিয়ে এসব নেতারা বলছেন তৃতীয় দফায় অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচন শেষ হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা চট্টগ্রামের সকল নেতার সঙ্গে বসে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

গত বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজসহ ১৩টি ইউনিটে একসাথে কমিটি অনুমোদন দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহাম্মেদ ইমু এবং সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটিতে মোবাইল চোর, মাদকাসক্ত, শিবির সম্পৃক্ত, হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিদের কমিটির পদে আনতে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগও উঠেছে ইমু-দস্তগীরের বিরুদ্ধে।

নগরজুড়ে হাজারো ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এই দুই নেতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে যাচ্ছে। দাহ করছে কুশপুত্তলিকা। এমনকি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে ইমু-দস্তগীরের ছবিতে জুতোপেটাও করতেও দেখা গেছে ছাত্রলীগের শত শত নেতাকর্মীকে। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় ইমু-দস্তগীরের অনুমোদিত কমিটির বিরুদ্ধে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করার মত ঘটনা ঘটছে।

এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের নেতারা কী ভাবছেন— সে বিষয়ে জানতে তাদের কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী জহির বলেন, ‘আমরা সবকিছুর খোঁজ খবর রাখছি। কিন্তু এই বিষয়ে মিডিয়ায় কিছু বলতে চাই না। দলীয় ফোরামে এসব বিষয়ে কথা বলবো।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন জানান, তিনি অসুস্থ হওয়ায় পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত নন। এসময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয় কমিটি অনুমোদন দিয়ে এরপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ফোন বন্ধ করে দেওয়াকে তিনি কিভাবে দেখেন? উত্তরে ছাত্রলীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘এটি কোনভাবেই উচিত না। কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর ফোন কেন বন্ধ করে দিতে হবে? ছাত্রলীগ একটা বড় সংগঠন। এখানে অনেকের চাওয়া পাওয়া থাকবে। সবাইকে তো এক সাথে পদ দেওয়া যাবে না। কিন্তু যেসব কমিটি অনুমোদন দেওয়া হবে সেগুলোকে ডিফেন্ড করার মানসিকতাও নেতাদের থাকতে হবে।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-অর্থ সম্পাদক তড়িৎ চৌধুরী বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের অনেকগুলো ইউনিটে একসাথে কমিটি অনুমোদন দেওয়ার পর সেখানে খানিকটা ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। এই বিষয়গুলো আমাদের নজরে আছে। আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও এই বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। শীঘ্রই সবার সাথে আলাপ করে এসব বিষয়ে আমরা একটা যৌক্তিক সমাধানে যেতে পারবো।’

দীর্ঘ সাত বছর আগে মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সম্মেলনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কিছু ভাবছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তড়িৎ চৌধুরী বলেন, ‘জেলা ইউনিটের মেয়াদই হচ্ছে এক বছরের। আমরা আগেও চট্টগ্রামে সম্মেলনের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কথা বলেছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সবাই এই বিষয়ে একমত। বাকিটা স্থানীয় নেতাদের সাথে আলাপ করে আমাদের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধান্ত নেবেন।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়বিষয়ক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বকুল বলেন, ‘আমাদের অনেকেই এখন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। যেমন আমি এখন পটিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় আছি। তবে চট্টগ্রাম নগরে ছাত্রলীগের কয়েকটি ইউনিট কমিটি নিয়ে যা হচ্ছে, তা আমরা প্রতি মুহূর্তে আমাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানাচ্ছি। উনারা কমিটি দেওয়ার আগে পরের সকল ঘটনাই জানেন। উনারা নিজ থেকেই এই বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন। পৌর নির্বাচন শেষ হলেই সবাইকে নিয়ে এই বিষয় বসার কথা রয়েছে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!