কেনা জমি নিয়ে হামলা-মামলায় হয়রানির শিকার ব্যবসায়ী

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় কেনা জমির ওপর স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে হামলা করেও ক্ষান্ত হয়নি প্রতিপক্ষ। জমির মালিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী এনে প্রতিবন্ধী আহতের কথা উল্লেখ করে জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মামলায়ও। এখন নিজের কেনা জমি দখলে না পাওয়ার শংকার মধ্যে আঘাতপ্রাপ্ত শরীর নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মিজানুর রহমান ও মোহাম্মদ নবী নামে দুই ব্যবসায়ী।

এর আগে ২ জুলাই নগরীর কোতোয়ালী থানার আন্দরকিল্লার ঘাটফরহাদবেগ এলাকায় ভূমি নিয়ে বিরোধের জেরে মারামারির ঘটনায় উভয়পক্ষ কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। দুটি মামলার একটিতে ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এতে দুই মামলায় দশজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ৪০-৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

কোতোয়ালী থানা সূত্রে জানা গেছে, ঘাটফরহাদবেগ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আবুল কালাম বাদি হয়ে মিজানুর রহমান, মো. নবী, সাইমুল নেওয়াজসহ ও ইনজামাম ইমুসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।

অপর মামলায় মুরাদপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বাদি হয়ে বেলাল, নোমান ও তাদের পিতা আবুল কালাম এবং রাসেল, মাসুদ ও জাহেদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার বাদি আবুল কালাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘২ জুলাই মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে মো. নবী, নেওয়াজ ও ইমুর নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি দখল করতে আসে। এ সময় বাধা দিলে আমাদের ছয়জনকে আহত করে। বাড়ির সীমানা প্রাচীর, আমার ভাই মরহুম আবুল কাশেমের ভাড়া ঘরও ভেঙ্গে দেয়।’

অন্যদিকে মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমার ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে আমার উপর হামলা হয়। হামলায় আমার ডান হাতে মারাত্মক জখম হয়। এমতাবস্থায় আমার সাথে ওই স্থানে যাওয়া মিস্ত্রি ও তাদের সহযোগীরা আমাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসলে উভয়পক্ষের লোকজনই আঘাত পান।

মো. নবী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, তিনি মরহুমা জালিয়া বেগম ও নাসিমা বেগম থেকে মোট এক হাজার ৫৯৮ বর্গফুট জায়গা ক্রয় করেছেন। সেই জায়গা বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণও করেছিলেন। ঋণ শোধ করতে অক্ষম হওয়ায় তিনি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। মিজানুর রহমানকে জায়গা বুঝিয়ে দিতে আসলে আবুল কালাম, তার ছেলে বেলাল, নোমান ও ভাতিজাদের নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। জারিয়া বেগম ও নাসিমা বেগম থেকে জায়গা ক্রয় করার সময় আবুল কালাম সাক্ষী ছিলেন বলেও জানান মো. নবী।

এ ব্যাপারে আবুল কালাম বলেন, ‘আমার আর আমার ছেলের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। জারিয়া বেগম ও নাসিমা বেগমের কোন সম্পত্তি এই দাগে নেই। তাদের সম্পত্তি পশ্চিম বাকলিয়ায়। জারিয়া বেগম ও নাসিমা বেগম কিংবা তার ওয়ারিশানরা কীভাবে সম্পত্তি বিক্রি করবে? তিনি অভিযোগ করেন, নবী জাল দলিল সৃজন করে জায়গা দখলের পায়তারা করছে। জাল দলিল সৃজন নিয়ে আমরা আদালতে মামলা করেছি। আদালত এসি ল্যান্ডকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। এমতাবস্থায় মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা গায়ের জোরে দখল করতে চাইছে।’

তবে ক্রয়সূত্রে এ জমির মালিক ও একটি মামলার বাদি আবুল কালামের মেয়ের জামাই প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমি যদি জাল দলিল সৃজন করি তাহলে আমার শ্বশুর কালাম সাহেব কেন ২০০৪ সালে এ জমি কেনার সময় শনাক্তকারী ও সাক্ষী হয়েছিলেন। এমনকি তার ছেলেও সাক্ষী করেছিলেন। এছাড়া ২০১৬ সালে আমাদের ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে যখন এই জায়াগায় বিল্ডিং করার কথা ছিল সেই চুক্তি কেন তিনি সই করলেন। আর জমি কিনেছি আমার ফুফী শ্বাশুড়ি থেকে জালিয়াতির মামলা করেছেন আমার শ্বশুর। আমিতো উনার জায়গা কিনিনি। আর এই মামলাটি কেন ২০১৭ সালে এসে করেছেন?’

নবীর থেকে জায়গা কিনে এখন স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে উল্টো হামলার স্বীকার হয়েছেন মিজানুর রহমান। তিনি নিজ স্থাপনার কাজ করতে গিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখমও হয়েছেন। নিতে হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাও। তিনি বলেন, ‘আমি সাফ কবলামূলে নবী থেকে জায়াগা কিনেছি। এখন সেখানে সীমানা প্রাচীরসহ স্থাপনা করতে গেলে আমাকে সহ আমার আত্মীয়-স্বজনদের হামলার করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জখম করা হয়। উল্টো আমাদের নামে মামলা দিয়েছে। নিজের হক টাকায় জায়গা কিনে হয়রানি মামলার হামলার শিকার হচ্ছি।’

জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘এ ঘটনায় দুই পক্ষই মামলা করেছেন। তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তবে কেউই আটক নেই এই মামলায়।’

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!