কেউ দিল জমি কেউ দিল অর্থ-শ্রম, তৈরি হল স্বপ্নপুরী রাস্তা

চট্টগ্রামের পটিয়ার কোলাগাঁও ইউনিয়নের লাখেরা গ্রামে তিনশ ফুটের একটি রাস্তার জন্য বহুবার ধরনা দিয়েছেন এলাকাবাসী। সবাই প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অবশেষে নিজেদের জমি, অর্থ ও স্বেচ্ছাশ্রমে ৩৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের রাস্তা বানিয়ে নজির সৃষ্টি করলেন লাখেরা গ্রামবাসী।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ৩ মাস আগে রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়। কাচা রাস্তাটিতে আরসিসি ঢালাই কাজ শুরু হয় রোববার (২৮ জুন) বিকেলে।

ঢালাই কাজ উদ্বোধন করেন রাস্তা তৈরির মূল উদ্যোক্তা ও ভূমিদাতা রমজান আলি। এসময় সাথে ছিলেন আরেক ভূমিদাতা বাবুল হক, মাবুদ আলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

জানা গেছে, দীর্ঘদিনের দাবি জানানো ও বরাদ্দ না পাওয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নিজেরাই ডোবা ভরাট করে, নিজেদের জায়গা দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এ কাজে এলাকার প্রায় কয়েক শতাধিক নারী, পুরুষ ও কিশোররা অংশগ্রহণ করেন। সকলে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে রাস্তার নির্মাণ কাজে নেমে পড়েন।

প্রথমে ডোবা ভরাট করে কাঁচারাস্তা তৈরি করা হয়। রাস্তা নির্মাণের ৩ মাসের মধ্যে রমজান আলী নামে এলাকার এক ব্যক্তির আর্থিক সহযোগিতায় ঢালাই কাজ করা হয়।

এ রাস্তাটি দিয়ে প্রতিদিন দিঘীরপাড় হতে পিডিবি, ওয়েস্টার্ন মেরিন শীপ ইয়ার্ডের শ্রমিকরা আসা যাওয়া করেন। এছাড়া স্কুলের অসংখ্যছাত্র-ছাত্রীসহ ১৫ হাজার মানুষ যাতায়াতে খুব কষ্ট পেতেন। এখন নতুন রাস্তা নির্মাণের ফলে এক কিলোমিটার দূরত্ব কমে গেছে। শিক্ষার্থীরা কম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। কৃষকরা সহজে তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে পারবেন।

কোলাগাঁও গ্রামের বাসীন্দারা জানান, রাস্তা নির্মাণের জন্য এলাকার লোকজন সরকারি দপ্তরে বহুবার আবেদন করেছেন। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিরা বার বার আশ্বাস দিলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। অবশেষে গ্রামের লোকজন সরকারি অনুদান ও কোনও বরাদ্দের আশায় না থেকে নিজেরাই রাস্তার নির্মাণ কাজ করেছেন।

তারা আরও জানান, নতুন তৈরি রাস্তাটির নাম দিয়েছেন রহমান আলী সংযোগ সড়ক। অনেকে বলেন স্বপ্নপুরী রাস্তা। সকলের সহযোগিতা নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করতে তাদের মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা (জমিসহ)। এ কাজে স্থানীয় রমজান আলীর পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা করেছেন নুরুল আবছার, কামাল উদ্দিন, রাজীব, ফরিদুল আলম, তারেক, মারুফ, মহিউদ্দীন, কাইয়ুম,শহিদুল লোকমানসহ আরও অনেকে।

এ ব্যাপারে কোলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহমদ নুর বলেন, এলাকার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীকে অনেক কষ্টে বাজারে ও কাজ আসতে হতো। এতে তাদের অনেক ভোগান্তি হতো। যার কারণে নতুন রাস্তা নির্মাণ গ্রামীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। রাস্তাটি প্রায় আট ফুট প্রশস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জমিদাতাসহ অনেকের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সফলভাবে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মূল উদ্যোক্তা রমজান আলী বলেন, এলাকাবাসী বছরের পর বছর চলাচলের অসুবিধায় ছিলেন। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন মিলে নিজের জায়গা দিয়ে এলাকাবাসীর সম্মিলিত উদ্যোগে ও সেচ্ছাশ্রমের রাস্তাটি নির্মাণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এলাকায় মানুষের চলাচলের পথ সুগম হয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে দ্রুত সময়ে যে কোন জায়গায় যাতায়াত করতে পারবে। এতে লাখেরাবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হয়েছে।

এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারহানা জাহান উপমা বলেন, সরকারের পাশাপাশি এলাকাবাসী নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য এগিয়ে আসলে বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে যাবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ রকম ভালো কাজের সহযোগিতা সব সময় থাকবে।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!