কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. মুহাম্মদ হোসেনের ২১তম প্রয়াণদিবস আজ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সফল উপাচার্য সীতাকুণ্ডের কৃতীসন্তান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হোসেন এর ২১তম প্রয়াণদিবস আজ। ২০০০ সালের এদিনেই সড়কদুর্ঘনার শিকার হয়ে জ্ঞানতাপস এ শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব অকালে আমাদের কাছ থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ হোসেন ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মাহমুদাবাদ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম মৌলভী এমদাদুল হক আর মা হাজেরা খাতুন। তিনি ছিলেন মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান। স্কুলজীবনে বায়ান্নোর ভাষাআন্দোলনে শরিক হয়ে দেশপ্রেমের দীক্ষা নিয়েছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৫৬ সালের আই.এসসি পরীক্ষার কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি স্কলারশিপ পান। ১৯৫৮ ও ৬০ সালে ফ্যাকাল্টি স্কলারশিপ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বি.এসসি ও প্রাণ-রসায়নে এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬১ সালে টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক সেরা প্রবাসী ছাত্রনেতৃত্বের জন্যে পুরস্কারে ভূষিত হন।

ড. মুহাম্মদ হোসেন ১৯৬২ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তিনমাস পরে প্রাণ-রসায়নের প্রথম শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়ন বিভাগ ছিল তাঁর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ বিভাগের উন্নয়ন ও বিকাশে তাঁর অবদান ছিল অপরিসীম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-রসায়ন বিভাগের জনক হিসেবে পরিচয় দিতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।১৯৬৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি একই বিভাগে সহকারি অধ্যাপক, ১৯৭০ সালের ২৭জুন সহযোগী অধ্যাপক এবং ১৯৭৭ সালের ২১মে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বরে ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের আগে তিনি বিভিন্নসময়ে প্রাণ-রসায়ন বিভাগের প্রধান, কৃষিঅনুষদের ডীন, শহীদ শামসুল হক হলে প্রভোস্টসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক মুহাম্মদ হোসেনের মধ্যে সাংগঠনিক নেতৃত্বদানের সহজাত প্রতিভা ছিল। তিনি দু’বার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে তাঁর অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সড়কদুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুর কারণে তাঁর সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। অধ্যাপক হোসেনের সবচে’ বড় পরিচয় ছিল, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক। শিক্ষক হিসেবে তিনি বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে, একজন সফল শিক্ষাপ্রশাসক হিসেবে, সর্বোপরি একজন সৎ, ধার্মিক ও সাহসী মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের সামনে যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন-তা আমাদের সকলের চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে। ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সড়কপথে দাপ্তরিক কাজে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজের কাছে সকাল সাড়ে ৭টায় গাড়িদুর্ঘটনায় আলোকিত এ গুণিমানুষের জীবনপ্রদীপ নিভে যায়। তাঁর এ অকাল প্রয়াণে বাংলাদেশ কৃষিবিশ্ববিদ্যালয় হারায় একজন প্রতিভাবান অত্যন্ত যোগ্যতম উপাচার্যকে,সীতাকুণ্ডবাসী হারায় তাদের সূর্যসন্তানকে আর তাঁর পরিবার হারায় যোগ্য এক অভিভাবককে।

মৃত্যুকালে অধ্যাপক মুহাম্মদ হোসেন তার স্ত্রী, একপুত্র, দু’কন্যা, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন,ছাত্রছাত্রী, গুণগ্রাহী,বন্ধু ও সহকর্মী রেখে গেছেন। তাঁর ছেলেমেয়েরা দেশ-বিদেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বর্তমানে কর্মস্থলে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর বড়মেয়ে নাহিদ হোসাইন নবেলী আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল, ছেলে ক্যাপ্টেন তানভীর মুহাম্মদ নাফিউল হোসেন সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেড এর চীফ অপারেটিং অফিসার ও ছোটমেয়ে নাফিসা হোসাইন মোনালী সেভরণ গ্যাস কোম্পানির জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ড. হোসেন এর সহধর্মিণী জোহরা হোসেন পারিবারিকভাবে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুহাম্মদ হোসেন একাডেমির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!