কৃষি জমিতে ফাটল লোহাগাড়ায়, ১৬ সেচ পাম্পে কপাল পুড়ছে কৃষকদের

শুকিয়ে গেছে পানির একমাত্র উৎস টংকাবতী নদী

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানির অভাবে কৃষি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এছাড়া পানির উৎস টংকাবতী নদীও শুকিয়ে গেছে। ফলে হতাশায় কৃষকের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

এর মধ্যে টংকাবতী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির পরিচালনায় কলাউজান, চরম্বা সীমান্তে রয়েছে একটি রাবারড্যাম। এই রাবারড্যাম এলাকায় সমিতির আওতাভুক্ত সেচ প্রকল্পের মেশিন চলে প্রায় ১৪টি, পাশাপাশি সমিতির বহির্ভূত প্রায় ১৬টি সেচ পাম্প রয়েছে। এই নদীর পানি এখন নেই বললেও চলে।
প্রতিটি সেচ পাম্পের নিকটবর্তী নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখতে দেখা গেছে। ফলে ওপরের পানি নিচে আসা দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলাকার নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, নালার পানি তলানিতে। ন্যূনতম স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে উঠেছে পরিবেশ-প্রকৃতি। একইসঙ্গে কৃষি-খামার ও জনস্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা।

টংকাবতী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রায় সবখানে বোরো আবাদ, মৌসুমী ফল ও ফসল, ক্ষেত-খামার, মাছের চাষ থেকে শুরু করে সমগ্র কৃষি খাত চরম সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পড়েছে। ব্যাহত হচ্ছে বোরো আবাদ। বোরো ধানের বীজতলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আর চাষাবাদে পানির অভাব পূরণ করতে গিয়ে সেচের বাড়তি খরচ জোগাতেও হিমশিম খাচ্ছে কৃষক।’

জানতে চাইলে টংকাবতী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখনই অত্যাধিক হারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে আরো নিচে নামছে পানির স্তর। তাতে ভয়াবহ মাত্রায় হ্রাস পাচ্ছে ভূ-উপরিভাগ ও ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ। মৌসুমের এই সময়ে স্বাভাবিক পরিমাণ বৃষ্টিও না হওয়ায় মাটির ওপরের উৎসগুলোতে এবং মাটির নিচে পানি রিচার্জ হচ্ছে না। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আরো বাড়ছে খরার ঝুঁকি। আর দীর্ঘসময় বৃষ্টি না হওয়ায় পুরো সেচনির্ভর হয়ে পড়েছে বোরো আবাদসহ অন্যান্য ফল-ফসল আবাদ।’

টংকাবতী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি রিটন কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভূ-উপরিভাগের পানির সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে কৃষিখাত। সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পানি সংরক্ষণের জন্য সেচপাম্পগুলো সাতদিন বন্ধ রেখে পরবর্তী তিনদিন চলবে। আবার সাতদিন বন্ধ রেখে তিনদিন চলবে এবং পরে প্রতিদিন ১২ ঘন্টা করে বন্ধ করে রাখার নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সমিতির বহির্ভূত সেচপাম্প মালিক সমিতির নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে পানি সংকট সৃষ্টি করছে। এই রাবারড্যামের পানি দিয়ে যতটুকু জমিয চাষ করা দরকার তার তুলনায় তিন গুণ বেশি চাষ করার কারণে পানি সরবরাহে হিমশিম খাচ্ছে সেচপাম্প মালিকরা। টংকাবতী নদীর সেচ পাম্পের সব মালিক যদি সমিতির নিয়ম নীতির আওতায় আসলে পানি বন্টনে শৃঙ্খলা আসবে। পানি সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সমিতির বহির্ভূত সেচপাম্প মালিকদের নির্দেশনা দিয়ে পনির সুষ্ঠু বণ্টন ও সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ উল্যাহ বলেন, ‘টংকাবতী নদীর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে গত ৫ মার্চ একটি লিখিত আবেদন পেয়েছি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!