কুয়াশার সঙ্গে চট্টগ্রামে বিপদ বাড়াচ্ছে রেলের ৩০০ অরক্ষিত অবৈধ লেভেল ক্রসিং

চট্টগ্রামে প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রেলের ৩০০ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিং। শীতে এমনিতেই কুয়াশার কারণে ট্রেন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এর সঙ্গে এসব অরক্ষিত ও অবৈধ রেল গেইটগুলো বিপদ আরও বাড়িয়ে তুলছে। গত ছয় মাসে অন্তত ১৫ ব্যক্তির প্রাণ গেছে রেললাইনে। ভুল সিগনালের কারণে গত ৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীতে ইঞ্জিনসহ সাগরিকা এক্সপ্রেসের দুটি বগি লাইনচ্যূত হয়।

জানা গেছে, রেলওয়েতে লেভেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা দুই হাজার ৫৬০টি। এর মধ্যে রয়েছে অন্তত ১৪০০ লেভেল ক্রসিংই অবৈধ। পূর্বাঞ্চলে এ সংখ্যা ছয়শোর বেশি। রেলবিভাগের হিসাবেই এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে অবৈধ গেইট কমপক্ষে ২১০টি। পকেট গেইটগুলোতে অস্থায়ী গেইটম্যানদের বেতন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে বহন করার রীতি থাকলেও সেটা নিয়মিত হয় না। ফলে ৪-৫ মাস বেতন বকেয়া থাকে প্রায়ই।

শীতে কুয়াশার কারণে ট্রেন দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায় বহুগুণ। ক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কে চালকদের আইন না মানার প্রবণতা ও গেইটম্যানদের অবহেলা তো রয়েছেই। এছাড়া রয়েছে জনবলের তীব্র সংকট। সবমিলিয়ে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে রেল যোগাযোগ।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর কৈবল্যধাম, সীতাকুণ্ড, ফরেস্ট গেইট ও ফৌজদারহাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, এসব জায়গায় ক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কে নেই রেল গেইট।

অন্যদিকে রেল পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগেই কেবল রয়েছে প্রায় ৩০০ অবৈধ রেল গেইট। যার ওপর দিয়ে যাওয়া বেশিরভাগ সড়কে নেই ন্যূনতম সতর্কতা। গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রতিদিনে এ নিয়ে ‘অনুমানে ভর করে ট্রেন আসার সংকেত দেন চট্টগ্রামের গেটম্যানরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশিস দাশগুপ্ত জনবল সংকট এবং অবৈধ রেল গেইট থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও চট্টগ্রামে অবৈধ গেইটের প্রকৃত সংখ্যা জানাতে পারেননি।

জানা গেছে, রেল গেইট অরক্ষিত থাকার কারণে দেশে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে গেইটকিপারের চাহিদা রয়েছে ২৪২ জন। এর বিপরীতে স্থায়ী গেইটম্যান আছেন মাত্র ৪৫ জন। অন্যদিকে অস্থায়ী গেইটম্যানের সংখ্যা ৪৫ জন। ঘাটতি রয়েছে ১৫২ জন গেইটম্যানের।

গেইটকিপার আকাশ মাহমুদ জানান, সিগনাল ছাড়াই অনুমানের ওপর ভর করে তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কোন্ দিক থেকে ট্রেন আসছে বোঝা যায়না। কখনও আউটার সিগনাল, আবার কখনও রেললাইনে উঠে ট্রেনের আলো দেখে গেইট ব্যারিয়ার ফেলতে হয়। রেললাইনে কোনো সমস্যা হলে তারা যোগাযোগ করতে পারেন না। দেওয়া হয়নি যোগাযোগ উপকরণও। এমনকি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ারও উপায় থাকে না। ফলে টানা ডিউটি করা এক গেইটম্যানের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

সরেজমিনে সীতাকুণ্ড ই/২২ গেইটে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, রেলক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল করলেও গেইটম্যানের কাছে নেই যোগাযোগ উপকরণ। চিনকি আস্তানা থেকে ভাটিয়ারী— এইটুকু অংশে গেইটম্যানদের কী করুণ হাল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফরেস্ট গেইট এলাকায় রেললাইনে নেই গেইট ব্যারিয়ার। সোমবার (২১ ডিসেম্বর) রেলের কর্তাব্যক্তিরা ট্রলিতে লাইন পরিদর্শন করে গেছেন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর পরিদর্শনে আসবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। ফরেস্ট গেইটের অরক্ষিত গেইট তাদের নজরে পড়ার কথা। তবু প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে— এমন বিশ্বাস কারোরই নেই। কারণ দিনের পর দিন এভাবেই চলে আসছে।

এছাড়া উন্নয়নমূলক কাজের ফলে রেললাইনের ওপর দিয়ে হঠাৎ গজিয়ে উঠে নতুন রাস্তা। রেল কর্তৃপক্ষের অনুমতির তোয়াক্কা না করে এসব অবৈধ রাস্তার কারণে রেলপথ রয়েছে আরও ঝুঁকিতে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশিষ দাশ গুপ্ত জানান, ৪৫ জন স্থায়ী ও ৪৫ জন অস্থায়ী গেইটকিপারসহ তার অধীনে এক হাজার ৩৯২ জন কর্মী কাজ করছে।

ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রকৌশলী (১) আবু হানিফ বলতে পারেননি তার অধীনে কয়টি গেইট বা কতোজন লোকবল রয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!