কুড়িয়ে পাওয়া বিচারকের টাকা ফিরিয়ে দিলেন কর্ণফুলীর নিঃস্ব নারী

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের শাহমীরপুর গ্রামের মোছাম্মৎ শাহিদা আকতার। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি রোগে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসা খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। মেয়ের চিকিৎসায় জমানো টাকা পয়সা শেষ। টাকার জন্য চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলেন। এসময় হাসপাতাল এলাকায় কুড়িয়ে ফেলেন ১৮ হাজার ৫৭২ টাকাসহ একটি ব্যাগ।

ব্যাগ খুলে দেখলেন টাকার সঙ্গে রয়েছে ক্রেডিট কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র। শাহিদা ব্যাগে থাকা কার্ডের নম্বরে ফোন করলেন। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করলেন না। পড়ে গেলেন মহা চিন্তায়। মেয়ের চিকিৎসার জন্য একদিকে টাকার প্রয়োজন, অন্যদিকে ব্যাগের মালিককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জানা গেল এই টাকা এবং ব্যাগের প্রকৃত মালিক চট্টগ্রাম জেলা দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জজ মুনতাসির রাসেল।

অবশেষে মঙ্গলবার (২২ জুন) বিকালে কর্ণফুলী থানা পুলিশের সহযোগিতায় সে ব্যাগ ও টাকাসহ ফিরিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কর্ণফুলীর মোছাম্মৎ শাহিদা আকতার।

মোছাম্মৎ শাহিদা আকতার জানান, আমার মেয়ের চিকিৎসার জন্য যখনই আমার টাকার প্রয়োজন ছিল। সে মুহূর্তে আমি ব্যাগটা কুড়িয়ে পাই। এটা পাওয়ার পর আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। মেডিকেলেও তো কেউ এমনি আসেন না। নিশ্চয়ই তিনিও আমার মত কোনো রোগি বা আত্মীয়-স্বজনের চিকিৎসার কারণে মেডিকেলে এসেছেন। ব্যাগের মধ্যে থাকা একটি কার্ড থেকে নম্বর নিয়ে ফোন দিতে থাকি উনাকে। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করলেন না। অবশেষে ফোন রিসিভ করলে জানতে পারি চট্টগ্রাম জেলা দায়রা জজ আদালতের একজন যুগ্ম জজ এ ব্যাগের প্রকৃত মালিক। তখনই কর্ণফুলী থানা পুলিশের সহযোগিতায় আমি উনার ব্যাগ আর টাকা ফিরিয়ে দিতে পেরে ভালো লাগছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম জেলা দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জজ মুনতাসির রাসেল
বুধবার (২২ জুন) সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘ওয়ালেট এবং মহানুভবতা’ আব্বার অসুস্থতার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই নিয়মিত মেডিকেলে যেতে হয়েছে। পনের দিন আগে সন্ধ্যায় মেডিকেলের গেইটে আমার ওয়ালেট হারিয়ে ফেলি। ওয়ালেটে বেশ কিছু নগদ টাকার সাথে আমার আইডেন্টিটি কার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ক্রেডিট কার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ছিলো। ধরেই নিয়েছি, পিক-পকেট হয়েছে! সাথে সাথেই হাসপাতলের পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জহির সাহেবকে জানালে তিনি পাঁচলাইশ থানায় জিডি করার ব্যবস্থা করেন এবং দেখেন সিসিটিভি ফুটেজ। কিন্তু মিলেনি কোন হদিস। কলসেন্টারে ফোন করে ক্রেডিট কার্ড উইথহেল্ড করি। পুলিশ কর্তৃপক্ষ উনাদের নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে যান। কিন্তু আমার ওয়ালেটের সন্ধান আর পাইনি। আব্বা কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে উনাকে বাসায় নিয়ে আসি।

তিনি ফেসবুক স্ট্যাস্টাসে আরও জানান, মঙ্গলবার (২২ জুন) দুপুরে একটা অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এক ভদ্রমহিলা আমার পরিচয় জানতে চান! আমি উনার পরিচয় জিজ্ঞেস করাতে নাম বলেননি। বারবার আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। পরে কিছুটা বিরক্ত হয়েই আমার নাম বলেছি। জিজ্ঞেস করলেন, আমার কিছু হারিয়েছে কিনা! মানিব্যাগ হারিয়েছে জানালাম। তিনি কিছু প্রশ্ন করে আমার পরিচয় নিশ্চিত হয়ে নিজের নাম ঠিকানা জানালেন। কর্ণফুলী থানার শাহমীরপুর গ্রামের শাহিদা। অপরিচিত এলাকা। তাই বন্ধু এডিশনাল সিএমএম মুরাদকে জানালাম। ও নিজেই কর্ণফুলী থানার ওসিকে জানালেন। ওসি সাহেব কথা বলে জানালেন, তিনি ওয়ালেট সংগ্রহ করবেন। বিকেলে শাহমীরপুর গ্রামে শাহিদার বাড়ি গিয়ে তিনি ওয়ালেট সংগ্রহ করে আমাকে পাঠালেন। শাহিদা তাঁর অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে ছিলেন। সেখানেই ওয়ালেট কুড়িয়ে পেয়েছেন। এরআগেও দুইদিন আমাকে ফোন করেছেন তিনি। আমি রিসিভ করিনি। শাহিদা চাইলেই ওয়ালেট রেখে দিতে পারতেন। আমার জানার কোন উপায়ই ছিলো না। কিন্তু তিনি মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে আমাকে খুঁজে বের করে জানিয়েছেন। তাঁর জন্য অনি:শেষ কৃতজ্ঞতা। আমি সব গুরুত্বপূর্ণ কার্ড, টাকা অক্ষত অবস্থায় পেয়েছি। শাহিদা এবং তাঁর সন্তানদের জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুন। আর সে সাথে ধন্যবাদ জানায় বন্ধু মুরাদ ও ওসি কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদসহ পুলিশের সকল সদস্যকে।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ জানান, খারাপ অবস্থায় থাকার পরও তিনি একটা টাকাও খরচ করেননি। আসলে দেশে এখনো ভালো মানুষ আছে, এটায় তার প্রমাণ। তিনি ব্যাগ ও টাকাসহ ফিরিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!