কুহেলিয়া নদী ভরাট করা যাবে না, হাইকোর্টের মানা

কক্সবাজার জেলার পেকুয়া ও মহেশখালীর কুহেলিয়া নদী ভরাটে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বেড়িবাঁধ এবং সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য নদীটি ভরাট করার উদ্যোগ নেওয়ার পর এই নিষেধাজ্ঞা এলো।

একই সঙ্গে নদী ভরাটের কারণে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণ ও প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং পরিবেশগত ছাড়পত্রের বর্তমান অবস্থার প্রতিবেদন তিন মাসের মধ্যে আদালতে জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কুহেলিয়া নদী রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

পাশাপাশি প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণে (ইআইএ) ও পরিবেশগত ছাড়পত্র কেন বাতিল, ভরাটকৃত মাটি অপসারণ ও নদীর মূল প্রবাহ পুনরুদ্ধার, সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা চিহ্নিতকরণ এবং কুহেলিয়া নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার নির্দেশ কেন করা হবে না তা রুলে জানতে চাওয়া হয়েছে।

রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আবেদন শুনানি নিয়ে রুল জারিসহ এ আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা।

আদালতে বেলার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবীর।

আইনজীবীরা জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের গত ২৫ জানুয়ারির নোটিশ অনুযায়ী মহেশখালী-মাতারবাড়ী এলাকায় রাজঘাট সংলগ্ন কুহেলিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে রাজঘাট ব্রিজ থেকে মোহিরাঘোনা পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ কি.মি. দীর্ঘ বেড়িবাঁধ কাম সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ভরাট করা হয় কুহেলিয়া নদী। নদী ভরাট ও রাস্তা নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় দৈনিকে একাধিক সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাওয়ার পথ তৈরি করতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এ নদীর সাড়ে সাত কিলোমিটার ভরাট করে নির্মাণ করতে যাচ্ছে চার লেনের সড়ক।

নদীর পূর্ব অংশ থেকে উত্তোলিত বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে নদীর পশ্চিম অংশ। প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে এ নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার ভরাট করে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে নদীর অস্তিত্ব। আরও সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এভাবে ভরাট করে তৈরি হবে সড়কটি।

ক্রমাগত ভরাট কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে নদীর তলদেশে জমেছে পলি ও চর। যেখানে আটকে যাচ্ছে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌকা। নদী সংকুচিত হয়ে পরিণত হয়েছে একটি মৃত প্রায় খালে।স্থবির হয়ে পড়েছে নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নৌ-যোগাযোগও। এ অবস্থায় কুহেলিয়া নদী রক্ষার জন্য জনস্বার্থে রিট আবেদন করে বেলা।

রিটের বিবাদীরা হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), পরিবেশ অধিদপ্তরের (চট্টগ্রাম অঞ্চল) পরিচালক, মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পেকুয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কক্সবাজার, কক্সবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, সওজ মাতারবাড়ি কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!