ঘূর্ণিঝড় ফণী’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৫ ফুট পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ফলে কক্সবাজারের উপকূল কুতুবদিয়া দ্বীপে জোয়ারে ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বলেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় প্লাবিত এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবারের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছিলো। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া লোকজনকে শুকনো খাবার বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।
কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর বলেন, আগে থেকে উপজেলা প্রশাসন সতর্ক থাকায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি, তবে মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
বড়ঘোপ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, দক্ষিণ মুরালিয়া, অমজাখালী, আজম কলোনীসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কৈয়ারবিল ইউপির চেয়ারম্যান জালাল আহমদ জানান, মলমচর, উত্তর কৈয়ারবিল, মহাজনপাড়া, মফজল ডিলার পাড়া প্লাবনের মুখে পড়েছে। দক্ষিণ ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দ আহমদ চৌধুরী জানান, বাতিঘর পাড়ায় পানি ঢুকেছে। উত্তর ধুরুং ইউপির চেয়ারম্যান আ স ম শাহরিয়ার চৌধূরী জানান, কাইছারপাড়া, নয়াকাটা, আকবরবলী ঘাট, ফয়জানিরবাপের পাড়া, পূর্ব নয়াকাটা, উত্তর সতর উদ্দিন প্লাবিত হয়েছে। লেমশীখালী ইউপির চেয়ারম্যান আলহাজ আকতার হোছাইন জানান, পেয়ারাকাটা, ক্রসডেম বিসিক এলাকায় জোয়ারের লোনা পানি ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পশ্চিম তাবলরচর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লুৎফরন্নেছা (৫৬) জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী আর অমাবশ্যার জোয়ারের প্রভাবে তাদের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। নিরুপায় হয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে চলে এসেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ জানান, ২ শতাধিক ঘরবাড়ি, শত শত একর পাকা ধানের ফসল প্লাবিত এবং শত শত একর লবণ চাষের কয়েক হাজার মেট্রিকটন লবণ তলিয়ে গেছে। এতে সাধারণ কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধূরী বলেন, কুতুবদিয়া উপকূলের কৃষকেরা বুঝতে পারেনি এভাবে জোয়ারের পানি লোকালয়ে চলে আসবে। জোয়ারের প্রভাবে উপকূলের কৃষক ও লবণচাষীদের কোটি কোটি টাকার ফসল ও লবণ নষ্ট হয়েছে। দ্বীপের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ ভাঙ্গা রয়েছে। সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, আগে থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৭১ পোল্ডারের কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গা ছিল। বিগত দুই বছর পূর্বে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় প্রায় একশ কোটি টাকা বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দিলেও যথাসময়ে কাজ করেনি। তবে বেশি ভাঙন এলাকায় জোয়ার রক্ষার জন্য জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে জোয়ার ঠেকানোর জন্য কিছু কিছু এলাকায় বাঁধ দেয়া হয়েছে। গত দুই দিন ধরে পশ্চিম তাবলরচর এলাকা ভাঙন বাঁধে জরুরিভিত্তিতে জোয়ার ঠেকানোর জন্য মাটি দিলেও ঘূর্ণিঝড় ফণী ও অমাবশ্যার জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে তা তলিয়ে গেছে।