চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নং চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হলেন, র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ আটক, কিশোর গ্যাং লিডার নুর মোস্তফা টিনু। কারাগারে বসেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা কামরুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মিষ্টি কুমরা প্রতীকে নূর মোস্তফা টিনু সর্বোচ্চ ৭৮৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাডমিন্টন প্রতীকের মো. আব্দুর রউফ পেয়েছেন ৭৭৩ ভোট। ভোটের ব্যবধান মাত্র ১৩। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে মাঠ চষে বেড়ানো ২০ প্রার্থীকে টপকে বিজয় ছিনিয়ে নিলেন কারাগারে বন্দি থাকা টিনু। যিনি একদিনের জন্যও ভোটারদের কাছে যাওয়ার সুযোগ পাননি।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সাবেক কাউন্সিলর মিন্টুর স্ত্রী ড্রেসিং টেবিল মার্কায় মেহেরুন্নিছা খানম পেয়েছেন ৫২৭ ভোট। এ ওয়ার্ডে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছেন মমতাজ খান। পানপাতা প্রতীকে তিনি মাত্র ৬ ভোট পান। গত ১৮ মার্চ চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু মারা যান। এতে করে কাউন্সিলর পদ শূন্য হলে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
টিনু চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার, পাঁচলাইশ ও বাকলিয়া এলাকার আলোচিত সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী আছে, আছে কিশোর গ্যাংও। এলাকার কোচিং সেন্টার, ক্লিনিক, প্রাইভেট হাসপাতালসহ যাবতীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মূলত তার কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে।
২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টায় নগরীর পাঁচলাইশ এলাকা থেকে টিনুকে একটি পিস্তল ও পাঁচ রাউন্ড গুলিসহ আটক করে র্যাব। পরে টিনুকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে একটি শর্টগান ও ৬৭ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র্যাব। পরদিন অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে টিনুকে নগরীর পাঁচলাইশ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকেই তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম কারাগারে।
নুর মোস্তফা টিনু চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তার ভাই শিপু চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। তাদের আরেক ভাই মোহাম্মদ সেলিম জামায়াত নেতা।
কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন
এই উপ-নির্বাচনে মোট ২১ জন কাউন্সিলর প্রার্থী মিন্টুর চেয়ারে বসার যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রয়াত কাউন্সিলর মিন্টুর স্ত্রী মেহেরুন্নিসা খানম ড্রেসিং টেবিল মার্কায় ভোট পান- ৫২৭, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন ফরহাদ (রেডিও) ৬১৭, মো. আলী আকবর হোসেন চৌধুরী মিন্টু (কাঁটা চামচ)-৭৩৫, এ কে এম সালাউদ্দীন কাউসার লাভু (হেডফোন)-৪৪৪, কাজী মো. ইমরান (লাটিম)-১৭৭, মোহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী (সূর্যমুখী ফুল)-২০৮, মোহাম্মদ সেলিম রহমান (ঠেলাগাড়ি)-৫২৮, মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী (ট্রাক্টর)-১১৪, মো. শাহেদুল আজম (ক্যাপ)-৫৯০, মো. নাজিম উদ্দীন (কাচি)-৪৪৩, মো. নুরুল হুদা (ঝুড়ি)-১৫০, মো. সামশেদ নেওয়াজ (ঘুড়ি)-২০২, শওকত ওসমান (এয়ারকন্ডিশনার)-৬২, মো. রুবেল সিদ্দিকী (করাত)-৭৩, মো. আজিজুর রহমান (হেলমেট)-৪৯, মো. আলাউদ্দীন (টিফিন ক্যারিয়ার)-১৫৯, মো. জাবেদ (স্ট্রবেরি)-৩৩, কায়সার আহম্মদ (প্রদীপ)-২৫৩, মো. নূর মোস্তাফা টিনু (মিষ্টি কুমড়া)-৭৮৯, মো. আবদুর রউফ (ব্যাটমিন্টন র্যা কেট)-৭৭৩ এবং মমতাজ খান (পানপাতা) ৬ ভোট।
উপ-নির্বাচনে মোট ভোট পড়ে ৬৯৩২টি, যদিও এই ওয়ার্ডের নারীপুরুষ মিলিয়ে ভোটার রয়েছে ৩২ হাজার ৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ২১৬ জন এবং নারী ভোটার ১৫ হাজার ৮২৫ জন। ১৫টি ভোটকেন্দ্রের ৮৬টি ভোটকক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন চকবাজারের ভোটাররা। নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির পরও ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটারদের জন্য অপেক্ষা করছে। সকাল ৮টায় ভোটগ্রহন শুরু হলেও দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১০% এর নিচে ভোটারদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। তবে বেলা বারার সাথে সাথে ভোটকেন্দ্রগুলো ভোটারশুন্য হয়ে পড়ে।
বিএস/কেএস