কিশোরী পলির মৃত্যু তাহলে ধর্ষণে নয়!

‘রিপোর্ট’ এল ৩ মাস পর, মানছেন না পরিবার

আলোচিত পলি হত্যা মামলার ফরেনসিক রিপোর্টে ধর্ষণের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। এমনকি আত্মহত্যাজনিত কারণে পলির মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে পাঠানো ওই ফরেনসিক রিপোর্টে। তবে হত্যার প্রায় সাড়ে ৩ মাস পর দেওয়া এই ফরেনসিক রিপোর্ট মানছেন না পলির পরিবারের সদস্যরা।

অন্যদিকে পলি হত্যার তদন্তকারী সংস্থা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, এই ফরেনসিক রিপোর্টের তথ্য আমলে নিয়ে আত্মহত্যার কারণ জানতে কাজ করবেন তারা।

চট্টগ্রাম নগরের বন্দর থানার দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহরে একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে স্কুল ছাত্রী রেবেকা সুলতানা পলির (১৩) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) চমেক হাসপাতাল থেকে ডিবি পুলিশকে ফরেনসিক রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানিয়েছেন সিএমপির উপ কমিশনার (ডিবি-বন্দর) মোস্তাইন হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ফরেনসিক রিপোর্টে পলির আত্মহত্যাজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া পলিকে ধর্ষণের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি বলেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। পলির আত্মহত্যার কারণ জানতে আমরা কাজ করবো।’

তবে এটিকে আর্থিকভাবে প্রভাবিত রিপোর্ট দাবি করে এর বিরুদ্ধে আদালতে পিটিশন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নিহত পলির পরিবারের সদস্যরা। পলির ভাই রাসেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ফরেনসিক রিপোর্টে বলা হয়েছে পলি আত্মহত্যা করেছে। তাহলে তার শরীরে যেসব আঘাতের চিহ্ন ছিল, তার বাম হাত ভাঙ্গা ছিল সেসবের কারণ কী? আর ঘটনার সাড়ে তিন মাস পর পরীক্ষা করলে ধর্ষণের আলামত কোত্থেকে থেকে পাওয়া যাবে। মামলার শুরু থেকেই টাকা দিয়ে মামলাটি তুলে নেয়ার একটা তৎপরতা ছিল। আমরা এই রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি দেবো।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, পলির বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সুষ্ঠু বিচার হবে তো? নাকি ফরেনসিক রিপোর্টে আলামত মেলেনি এই অজুহাতে রেহাই পেয়ে যাবে? ঘটনার ৩ মাস পর রিপোর্ট দেওয়ার সমালোচনা করে তারা বলেন, ‘ঘটনার সাড়ে তিন মাস পর ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে আলামত তো পাওয়া যাবেই না। এই মামলার ক্ষেত্রে আলামত নষ্ট করা হয়েছে কিনা সেই বিষয়ে তদন্ত হওয়া দরকার।

এদিকে পলি হত্যা মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে দাবি করে এ বিষয়ে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদ।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে পলির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে বন্দর থানা পুলিশ। পলি হালিশহর আহমদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের (সিটি কর্পোরেশনের স্কুলে) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। পরিবারের দাবি, পলিকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে বাড়িওয়ালা আবুল কাশেম খান। এই মামলার তদন্তে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল পলির মা সকিনা খাতুনের। সেসময় একটি মানববন্ধনে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি গরিব বলে প্রশাসন আমাকে সাহায্য করেনি। পুলিশ প্রশাসন টাকা খেয়ে হত্যাকারীর পক্ষে নিয়েছে। তারা ১৪ লাখ টাকা হত্যাকারীর কাছ থেকে নিয়েছে। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে বিচার চাইতে গেলে পাগল বলে বের করে দিয়েছে।’

এআরটি/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!