কাস্টমস কর্মকর্তাকে গালাগাল, ক্ষমতার দাপট দেখালেন সিএন্ডএফ নেতা বাচ্চু

খালাস করিয়ে নিলেন মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য

‘ক্ষমতার দাপট’ দেখিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তার কাছ থেকে মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্য খালাস করে নিয়ে গেলেন সিএন্ডএফ এজেন্ট নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, ছিলেন যুবলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্যও। এ চালান খালাসের সময় তিনি রাজস্ব কর্মকর্তা মো. দারাশিকোকে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কুমিল্লার হাইটেক কোম্পানি লি. চীন থেকে ২০ টন কপার টিউব আমদানির ঘোষণা দেন। কিন্তু ২০ টনের জায়গায় কপার টিউব আমদানি করা হয় সাড়ে ২৩ টন।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ পণ্য ছাড় করাতে গেলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা দারাশিকো আপত্তি জানিয়ে এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে বলেন। এতেই ক্ষিপ্ত হন চিটাগং ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়াডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামীলীগ নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এআইআর (অডিট ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ) ইউনিটের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. দারাশিকো বিষয়টি কাস্টমস কমিশনার মো. ফখরুল আলমকে জানালে কমিশনার আলতাফ হোসেনকে ডেকে তার সাথে কথা বলেন এবং কাগজপত্র দেখে ওই চালান খালাসের নির্দেশ দেন। তবে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার জন্য আলতাফকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দেন।

জানা যায়, চীন থেকে আনা ২০ টন কপার টিউবের চালানে শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় পাওয়া যায় সাড়ে ২৩ টন। ২০ টন ওজনের শুল্ক জমা দিলেও অতিরিক্ত সাড়ে ৩ টনের ৫ লাখ টাকা শুল্ক না দিয়েই জোর খাটিয়ে চালান নিয়ে যান আলতাফ।

সূত্র জানায়, কুমিল্লার হাইটেক কোম্পানি লি. চায়নার মংকং কোম্পানি থেকে আনা এক কনটেইনার কপার টিউবের চালানটি গত ১০ ডিসেম্বর এমসিসি টোকিও জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। ওই দিনই আলতাফ হোসেন বাচ্চুর মালিকানাধীন সিএন্ডএফ এজেন্ট ‘বিপ্লব ট্রেড ওভারসিস’ (লাইসেন্স নং ১৭৪৭) চালানটি খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে। একই দিন ওই ফাইলে আইজিএম করে লক করা হয়। পরে শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় ঘোষণা বহির্ভূত সাড়ে তিন টন কপার টিউব পাওয়া যায়। এ অবস্থায় চালান পণ্যটি লক থাকা সত্ত্বেও বারবার তদবির শুরু করেন আলতাফ হোসেন বাচ্চু।

ফাইলটি তদন্ত করেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের এআইআর (অডিট ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্স) ইউনিটের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. দারাশিকো। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ার) ফাইলটি ছাড়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন আলতাফ। একপর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই রাজস্ব কর্মকর্তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।

রাজস্ব কর্মকর্তা মো. দারাশিকো কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘ঘটনার আকস্মিকতায় আমি অবাক হয়েছি। আমি একজন কাস্টমস কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র। আমার সাথে এ ধরনের অশোভন আচরণকে আমি ক্ষমতার দাপট বলে মনে করি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার সাথে খারাপ ব্যবহারের কথা আমাকে জানানো হলে আমি দুইজনকে ডেকে এর একটা সমাধান করে দিয়েছি।’

চালান ছাড়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমে আলতাফ হোসেন প্রপার ডকুমেন্ট দিতে পারেননি। পরে ডকুমেন্ট দেওয়া হলে ছাড় দিতে বলেছি।’

এ ব্যাপারে আলতাফ উদ্দিন চৌধুরী বাচ্চুর মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জোর করে ফাইল স্বাক্ষর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিনি (আলতাফ) এ ধরনের কাজ করতেই পারেন না। জোর করে চালান খালাস করা সিএন্ডএফ এজেন্টের কাজ কাজ নয়। এআইআর শাখার কোন রাজস্ব কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা আমার জানা নেই।’

বিদেশে অর্থপাচার ও মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির সাথে আমদানিকারকের পাশাপাশি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টও সমানভাবে দায়ী এবং তাদের বিরুদ্ধে আমদানিকারকদের মতো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে গত ১২ জানুয়ারি চিঠি দেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কমিশনার। এই চিঠি পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজস্ব ফাঁকি রোধ এবং অনিয়মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু চিঠি পাঠানোর খবর পেয়ে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কর্মচারী এসোসিয়েশন একজোট হয়ে সেটি ঠেকাতে মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) হঠাৎ করেই কর্মবিরতি পালন শুরু করে। পরে কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যা ৬টা থেকে কাজ শুরু করেন সিএন্ডএফ এজেন্টরা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!