কাস্টমসে জালিয়াতি/ রাজস্ব কর্মকর্তা বেনজীনের দুই আইডিতে পণ্য খালাস!

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বেনজীন আক্তারের বিরুদ্ধে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারে (কাস্টমসের নিজস্ব সফটওয়্যার) ইউজার আইডি অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম অনুযায়ী কাস্টমসের যে কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তার একটি আইডি ব্যবহারের বিধান থাকলেও এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুটি আইডি ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বিষয়টি অবহিত করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ওই চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বেনজীন আক্তারের বিপরীতে ইস্যুকৃত অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যার সিস্টেমের ইউজার আইডি অপব্যবহার করে বিবিধ অনিয়ম সংঘটিত হচ্ছে। কাস্টম গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রাথমিক অনুসন্ধানে একাধিক আইডি ব্যবহারের সত্যতা পাওয়া গেছে।

পণ্য খালাস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই কাস্টমস কর্মকর্তার অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারের ইউজার আইডি দুটি হলো যথাক্রমে aropca4 ও benginakter09। ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির নানারকম তথ্যের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত দল। তদন্তকালে কয়েকটি বিল অব এন্ট্রি যাচাই করে এর সঙ্গে ইউজার আইডি mjalaluddinmian81-এর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। ওই ইউজার আইডি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কোন্ কর্মকর্তার নামে ইস্যু করা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ কর্মবণ্টন আদেশ মোতাবেক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব কী ছিল, ওই কর্মকর্তার বিপরীতে একাধিক ইউজার আইডি ইস্যু করা হয়ে থাকলে তার তথ্যও জানতে চায় কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের অফডকে কর্মরত সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বেনজীন আক্তার বলেন, ‘পণ্য খালাসে জালিয়াতির অভিযোগ সত্য নয়। আমি কাস্টম হাউজের দুটি শাখায় দায়িত্ব পালনের সময়ে কর্তৃপক্ষ দুটি আইডি খুলে দেয়। আমি ছুটিতে থাকাকালীন ওই আইডি অন্য কেউ হ্যাক (অবৈধ অনুপ্রবেশ) করে পণ্য খালাস করেছে।’

একজন কর্মকর্তার দুটি আইডি ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে বেনজীন আক্তার বলেন, ‘কর্তৃপক্ষই আমাকে দুটি আইডি দিয়েছে। এখানেও আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম বলেন, ‘একজন কর্মকর্তার দুটি আইডি ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। এ বিষয়ে আমি লিখিত কোন চিঠি এখনো পাইনি। তবে মৌখিকভাবে আমাকে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে আমি সিস্টেমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বলেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য।’

কাস্টমসে জালিয়াতি হয়েছে আগেও

এর আগে গত জানুয়ারিতেও চট্টগ্রাম কাস্টমসে দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় বহু সংখ্যক চালান খালাস করে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধরা পড়ে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের প্রাথমিক অনুসন্ধানে কমপক্ষে ৮৫০ কোটি টাকার চালান খালাসে জড়িত সাতটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয় সে সময়। এগুলো হচ্ছে এমআর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চাকলাদার সার্ভিস, স্মরণিকা শিপিং কাইজেন লি., মেসার্স লাইলা ট্রেডিং কোম্পানি, এমএন্ডকে ট্রেডিং কর্পোরেশন, লাবনী এন্টারপ্রাইজ লি. ও মজুমদার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ঢাকার রমনা থানায় মামলা হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি পাঁচটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়।

তদন্তে জানা যায়, ডিএএম মুহিবুল ইসলাম নামের এক অবসরপ্রাপ্ত রাজস্ব কর্মকর্তার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডের ইউজার আইডি ব্যবহার করে ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৬ বার কাস্টমস থেকে পণ্য খালাস করে নেওয়া হয়েছে। মুহিবুল ইসলাম ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমসে কর্মরত ছিলেন। ২০১৫ সালে অবসরে যান।

তৎকালীন আরেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফজলুল হকের আইডি ব্যবহার করে ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৮১ বার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে লগইন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পণ্যের খালাস নেয়া হয়েছে। ফজলুল হক বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটে কর্মরত আছেন।

এসসি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!