কারাগার থেকে ইয়াবা কারবারের কলকাঠি নড়ছে কক্সবাজারে

গডফাদারদের আত্মসমর্পণ, বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যেও কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে ইয়াবা পাচার। নিত্যনতুন কৌশলে ঠিকই মরণনেশা ইয়াবা মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। এই ইয়াবা পাচার বন্ধ না হওয়ার পেছনের কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।

মূলত চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ-উখিয়াসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের গডফাদাররা আত্মসমর্পণ করে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। অথচ তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার ও ব্যবসা। আর কারাগারে থাকা গডফাদারদের নির্দেশনায় মিয়ানমার থেকে এখনো ইয়াবা আসা অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাই এ মন্তব্য করেছেন।

সোমবার (১১ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত কক্সবাজার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি বলেন, গডফাদাররা কারাগারে বসেই আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছে মাঠ পর্যায়ের ইয়াবা কারবারিদের। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আহবান জানান তিনি। শুধু তা-ই নয়, সম্প্রতি মেডিকেলে অধিকাংশ ইয়াবা ব্যবসায়ীর অবস্থান এবং একটি নির্দিষ্ট সেলে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক এমপি আব্দুর রহমান বদির চার ভাই ও এক আত্মীয়ের থাকাসহ নানা অভিযোগের কারণে ইতোমধ্যে বদলি করা হয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ ও ডেপুটি জেলার অর্পণ চৌধুরীকে।

জানা গেছে, গত বছরের ৪ মে সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত অর্ধশতের উপরে ইয়াবা কারবারি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারপরও থেমে নেই ইয়াবার কারবার। টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে ইয়াবা। গেল অক্টোবর মাসেও প্রায় ২২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও মাঠপর্যায়ে ইয়াবার চাহিদা কমেনি। বরং ইয়াবাসেবীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরবরাহ রয়েছে আগের মতোই। বেচাকেনা ও বহনে নতুন কৌশল গ্রহণ করছে কারবারি ও বাহকরা। নানাভাবেই ইয়াবা ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজার কারাগারে বিশেষ কদর রয়েছে ইয়াবা কারবারিদের। কয়েদিদের মুঠোফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, দায়িত্বরত কারারক্ষীদের সহায়তায় অনেক সময় মুঠোফোনে কথা বলে বন্দিরা। এছাড়া ইয়াবা কারবারি ও গডফাদারদের সাথে দেখা করতে আসে তাদের সিন্ডিকেটের লোকজন। এতে কারাগারে নিরাপদ পরিবেশে থেকে ইয়াবার কারবার নিয়ন্ত্রণের অবাধ সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কারান্তরীণ থাকায় বরাবরই সন্দেহের বাইরে থাকছে এই গডফাদাররা।

এদিকে সোমবারের আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থিত জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, বর্তমানে কক্সবাজার কারাগারে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। তাদের অধিকাংশই ইয়াবা সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য প্রতিদিন প্রচুর লোকজন আসে। এত লোকজনের ভিড়ে ইয়াবা বা মাদক নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা কঠিন কাজ। এরপরও যে অভিযোগ এসেছে তা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখা হবে এবং কারাগারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরও কঠোর করা হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে ১০২ ইয়াবা কারবারি। এরমধ্যে ২৪ জন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় মাদক চোরাচালানের ‘গডফাদার’ হিসেবে চিহ্নিত। তাদের মধ্যে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির চার ভাইসহ অনেকেই আছেন।

সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!