কারখানা ও খামারের বিষ বয়ে শিকলবাহা খালের মরণদশা

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষও

কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরে গড়ে উঠা কর্ণফুলী উপজেলায় রয়েছে শতাধিক শিল্প কারখানা। রয়েছে কর্ণফুলী নদী থেকে বয়ে আসা বেশ কয়েকটি শাখা খাল। এসব খালের মধ্যে শিকলবাহা খাল অন্যতম। এক সময়ের খরস্রোতা এই খালটি এখন শিল্পকলকারখানা ও গরুর খামারের দূষিত বর্জ্যে বিষের খনিতে পরিণত হয়েছে। দূষণে খালের পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। আশপাশের বাতাসে ছড়াচ্ছে পচা পানির উৎকট গন্ধ। এতে শিকলবাহা ও চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন।

খালের দুই পাশে ভরাট করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা। অবৈধ দখল, কলকারখানার বর্জ্য ও ময়লায় খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের পানিপ্রবাহও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চাষাবাদ করতে পারছেন না উপজেলার কয়েক শতাধিক কৃষক।

বুধবার (২৪ জুন) দুপুরে সরেজমিনে শিকলবাহা খালের মুখে গিয়ে দেখা যায়, খালে বইছে বর্জ্যমিশ্রিত কালো রঙের ঘোলাটে পানির ধারা। আর এসব দূষিত পানি গিয়ে মিশছে কর্ণফুলী নদীতে। সঙ্গে নদীতে গিয়ে পড়ছে পলিথিন, প্লাস্টিকসহ অপচনশীল নানা সামগ্রী। শিকলবাহা মাজার গেইট এলাকা থেকে শুরু হয়ে আলী হোসেন মার্কেট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকার খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে অন্তত ৩০টি গরুর খামার। এসব খামারের পশুর বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে খালের বিভিন্ন অংশ। কোনও কোনও অংশে খালের অস্তিত্ব টিকে আছে মাত্র কয়েক ফুট।

কারখানা ও খামারের বিষ বয়ে শিকলবাহা খালের মরণদশা 1

স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও পশুর বর্জ্য খালের পানিতে মিশে খালটি বিষে খনিতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া দখলদারদের কবলে খালের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। এতে অল্প বৃষ্টিতেও দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন চরলক্ষ্যা ও শিকলবাহা ইউনিয়নের শতাধিক কৃষকও।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মো. বশির জানান, এই খালের পানি একসময় কৃষি কাজসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হতো। অনেকে মাছ শিকার করে জীবিকা চালাতো। আর এখন মাছ পাওয়া তো দূরের কথা, খালের আশপাশেও থাকা যায় না। বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্য ও খামারের গরুর বর্জ্য ফেলে খালের পরিবেশ দূষিত করে ফেলেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, কর্ণফুলী নদী থেকে আসা শাখা খালটি এ উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল। বর্তমানে খালের অবস্থা খুবই খারাপ। খালের অনেক অংশ ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে আগের মত জোয়ারভাটার পানিও চলাচল করতে পারছে না। বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও গরুর খামারের বর্জ্যে পানি দূষিত হয়ে গেছে। এই পানিতে জমির উবর্রতা শক্তিও নষ্ট হচ্ছে।

তিনি বলেন, এ খালকে দূষণমুক্ত রাখতে সমাজের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে শিল্পকারখানা ও খামারিদের বর্জ্য ফেলা। বর্জ্যগুলো কোনো না কোনোভাবে গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলী নদীতে। এ বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে নজর রাখতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, খালটি উপজেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেই সরেজমিনে দেখে এসেছি। খালের কিছু অংশ একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছিল। স্থানীয় সাংসদ ও ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশে সেটি উদ্ধার করা হয়েছে।

খালটি পুনরায় উদ্ধার করতে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা অবৈধভাবে খাল দখল ও খালে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শীঘ্রই খালের উদ্ধার কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!