কাপাসগোলায় গায়ের জোরে বিল্ডিং তুলতে গিয়ে সড়ক দেবে গেছে মাটির নিচে

সিডিএ-সিটি কর্পোরেশনকে পাত্তাই দিচ্ছেন না ভবনমালিক

চট্টগ্রাম নগরীতে সিডিএর নিষেধাজ্ঞা না মেনেই ‘গায়ের জোরে’ ভবন নির্মাণের কাজ চালানোর ফলে চকবাজার থেকে বহদ্দারহাট সড়কের বড় একটি অংশ মাটির নিচে দেবে গেছে। তাতে দেখা দিয়েছে বিশাল ফাটল। এ কারণে যে কোনো সময় এই সড়কে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর চকবাজার-বহদ্দারহাট কাপাসগোলা সড়কের তেলিপট্টি মোড়ে রাস্তার পাশে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নীতিমালা না মেনেই ব্যক্তি মালিকানাধীন বহুতল একটি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। সিডিএর পক্ষ থেকে কাজ বন্ধের নোটিশ দিলেও তা মানতে নারাজ ভবনটির মালিক। ভবনটির কাজের সুবিধার্থে পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রায় ১৫ ফুট নালা কেটে সেখানে পানির পাইপ সংযুক্ত করে ভবনমালিক।

দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে অবৈধভাবে নালা কাটার কারণে লম্বায় প্রায় ১০০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৫ ফুট রাস্তা দেবে গেছে। এর ফলে সাধারণ পথচারীদের ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে সড়কের ওপর দিয়েই। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে বাস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ছোট-বড় যানবাহন। দেবে যাওয়া রাস্তায় কোনো ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না করে কিছু বালুর বস্তা রাখা হলেও তা পরে অপসারণ করা হয়। বর্তমানে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যানবাহনসহ মানুষজন।

জানা যায়, নকশা বর্হিভূত ভবনটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে নকশা জমা দিতে সিডিএর অথরাইজড অফিসার-১ এর দপ্তর থেকে নোটিশ দেওয়া হলেও তার তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ভবনমালিক। দিনে কাজ চললেও সিডিএ পরিদর্শক টিম যাওয়ার আগে খবর পেয়ে কাজ বন্ধ করে দেয় ভবনমালিক। পরে আবার কাজ শুরু করা হয়।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিডিএর কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশেই ভবনমালিক বেপরোয়াভাবে ভবনটির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) অথরাইজড অফিসার-১ মোহাম্মদ ইলিয়াছের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে অপারগতা জানান। পরে সিডিএ ইমারত পরিদর্শক খোকনের কাছ থেকে এ ব্যাপারে তথ্য নিতে বলেন এই প্রতিবেদককে।

সিডিএর ইমারত পরিদর্শক খোকনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, নগরের কাপাসগোলায় ‘হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের’ কাজ করার সময় অতিরিক্ত মাটি কেটে ফেলার কারণে রাস্তার কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। পরিদর্শন করে সাথে সাথে আমরা নোটিশ পাঠিয়েছি। যাতে তারা কাজ বন্ধ রাখে। কারণ রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক কোনোভাবে বন্ধ রাখা সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, ভবন মালিকের ছেলে এরশাদই সবকিছু দেখাশোনা করছেন। আমরা তাদের কাজ বন্ধ রাখার জন্য বার বার নোটিশ দিয়েছি। তাও তারা কাজ চালু রাখলে তাদের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে চকবাজার ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু বলেন, হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের কাজে অতিরিক্ত মাটি কাটার ফলে রাস্তায় ফাটল দেখা দিয়েছে। রাস্তা ফাটলের খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি নিজে সিডিএকে খবর দিয়ে পরিদর্শনের জন্য এনেছি। তাদের আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অবগত করে আমার বরাবরও একটি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাও তারা রাতের আঁধারে কাজ চালিয়ে আসছিল। সেটাও প্রশাসন দিয়ে বন্ধ করেছি।

এদিকে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রুমকি সেন গুপ্ত বলেন, আল মারজান কনসালটেন্ট ও জায়গার মালিকরা অবৈধ নকশায় কাপাসগোলা সড়কের তেলিপট্টি মোড় সংলগ্ন আবাসিক হোটেল স্টার পার্কের লাগোয়া ব্যক্তি মালিকানাধীন বহুতল একটি ভবনের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে ১০০ ফিট রাস্তা দেবে যায়। তারা কোনো ধরনের সেফটি ব্যবস্থা ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি আমি সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে অবহিত করেছি। আমাদের চসিক ইঞ্জিনিয়ার দেবে যাওয়া সড়কটি পরিদর্শন করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভবন মালিককে ৭ লাখ টাকা জরিমানা করেন। জরিমানা করলেও জরিমানার টাকা তো দিচ্ছে না। বড় কথা হচ্ছে, তারা সরকারি দায়িত্বশীল দুটি দপ্তরকে পরোয়াই করছে না।

রুমকি সেন গুপ্ত আরও বলেন, চকবাজার ও বহদ্দারহাট একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এই সড়ক দিয়ে আমাদের সিটি মেয়রসহ লাখ লাখ মানুষের যাতায়াত। এখন দেবে যাওয়া সড়ক দিয়ে ঝুঁকি থাকার পরও মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। যে কোনো মূহুর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভবন কর্তৃপক্ষকে কাজ বন্ধ রেখে ভবনের নকশা দেখানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ভবন কর্তৃপক্ষ নোটিশ দেখাতে ব্যর্থ হলে আবার কাজ চালিয়ে গেলে জনসাধারণকে সাথে নিয়ে রাস্তায় প্রতিবাদ করা হবে।

আরএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!