কাতারের কাছে আক্ষেপের হারের আগে বাংলাদেশের লড়াই

বিশ্বকাপ বাছাই

বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপের বাছাইয়ের অ্যাওয়ে ম্যাচ শেষে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন কাতারের খেলোয়াড়রা। একে অপরকে করলেন আলিঙ্গন। খেলা না দেখে থাকলে বিশ্বাস করা কঠিন, র‍্যাঙ্কিংয়ে ১২৫ ধাপ এগিয়ে থাকা এক দলকে কী নাচই না নাচিয়ে ছেড়েছে বাংলাদেশ!

ম্যাচের আগেরদিন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডের প্রত্যাশা ছিল বৃষ্টি। তার ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে! বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই মেঘলা ছিল ঢাকার আকাশ। পরে হয়েছে মুষলধারে বৃষ্টি। প্রবল বর্ষণে ভারী হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের মাঠ।

তুলনামূলক শুষ্ক ও টার্ফে খেলে অভ্যস্ত কাতারের খেলোয়াড়দের অসুবিধার কথা ভেবেই বৈরি আবহাওয়া কামনা করেছিলেন স্বাগতিক কোচ! খেলা শুরু হতে সেটাই সত্যি হল। ভেজা, ভারী মাঠে নিজেদের গতিময় খেলায় বিঘ্ন ঘটল ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক কাতারের।

ভেজা মাঠে প্রতিপক্ষের অস্বস্তি কাজে লাগিয়ে শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। সপ্তম মিনিটে সাদের ক্রস নাগালে পাননি অন্য সতীর্থরা। নবম মিনিটে রায়হানের থ্রোতে ইয়াসিন খান হেড করতে পারলে এগিয়ে যেতেও পারতো স্বাগতিকরা। ফিরতি বলে জামাল ভুঁইয়া শট নিয়েছিলেন, তবে তা লক্ষ্য খুঁজে পায়নি।

ম্যাচের ২৫ মিনিটের মাথায় কাতারের ডিফেন্ডারদের ভুলে এসেছিল দারুণ এক সুযোগ। স্বাগতিকরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি।

খানিকপরে আচমকাই ম্যাচে ফেরে কাতার। বাংলাদেশ রক্ষণে জটলার সুযোগে ডি-বক্সের ডানপ্রান্ত থেকে পাওয়া পাসে বামপ্রান্ত দিয়ে জোরাল শটে গোল এনে ২৮ মিনিটে স্বাগতিক দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন অতিথি ফরোয়ার্ড ইউসুফ আব্দুরিসাগ।

ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে দ্বিতীয় গোল আসে কারিম বাউদিয়াফের পা ছুঁয়ে। দুটো গোলের ক্ষেত্র তৈরি হয় বাংলাদেশের ডিফেন্ডারদের ভুল বোঝাবুঝিতে। দুটো গোলই পায় কাতার ছোট ডি বক্সের ভেতর থেকে। এই দু’বারই বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশের রক্ষণভাগ।

ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট কাতার বা বাংলাদেশ দলের ফুটবল নয়, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রইলো খেলার মাঠ! বৃষ্টিতে-কাদায় পুরো মাঠের অবস্থা শোচনীয়। জায়গায় জায়গায় কালো কালো ছোপ পড়ে গেছে। বল আটকে যাচ্ছে কাদাপানিতে। দুই দলের ডাগআউট প্রান্তে মাঠের কিছু জায়গার এমনই বেহাল অবস্থা যে দেখে বোঝার উপায় নেই এটা ফুটবল খেলার মাঠ নাকি ধানক্ষেত!

নিরপেক্ষ বিচারে এমন মাঠ আর্ন্তজাতিক ফুটবলের জন্য কোনোমতেই গ্রহণীয় নয়। জায়গায় জায়গায় ঘাস উঠে মাটি বেরিয়ে পড়ছে। এমন পিচ্ছিল মাঠে ভারসাম্য রাখা কঠিন। বড় ধরনের ইনজুরির আশঙ্কা থাকে। প্রথমার্ধের বিরতির সময় উভয় দল যখন মাঠ ছাড়ছে তখন সব খেলোয়াড়দের জার্সি কাদাপানিতে একাকার। কাদামাঠে যেন কুস্তি করে আসা দল!

কাদাজলে একাকার হয়ে উঠা এমন মাঠে খেলার অভ্যাস নেই কাতারের। কিন্তু তারপরও তারা মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালালো বেশ। ছোট পাসে পজিশন ধরে রেখে খেলল। বলের নিয়ন্ত্রণ যাতে বেশি না হারায় সেই চেষ্টা চালাল। বেশি দৌড়ে শক্তি খরচ করল না। প্রথমে পরিস্থিতি বুঝল। তারপর কৌশল বদলে সামনে বাড়ল। মাঝলাইন বরাবর দুই ডিফেন্ডারকে রেখে পুরো দলই উপরে উঠে এলো। কখনো মাঝখান থেকে আবার কখনো উইং দিয়ে আক্রমণ সাজাল। তবে কর্দমাক্ত মাঠ কাতারের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়দের কাজ কিছুটা কঠিন করে দিল। তাল সামলে দৌড়ানো এবং কাদায় আটকে যাওয়া বল, সেই সঙ্গে ডি বক্সে দাঁড়ানো বাংলাদেশের ছয়জন খেলোয়াড়-এই জটিলতায় পড়ে শুরুর অর্ধে মাত্র একগোল নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় কাতারকে।

ম্যাচের বেশিরভাগ সময় আক্রমণেই ছিল কাতার। তবে যাকে বলে একেবারে তেড়েফুঁড়ে প্রতি মুহূর্তেই আক্রমণে থাকা- তেমন তেজ দেখায়নি কাতার। এমন মাঠে দম ফুরালে বড় বিপদ হতে পারে-এটা জেনেই কাতার এক গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর বাকি সময়টায় বিকালে পার্কে বেড়িয়ে আসার ভঙ্গিতে হেলদোল স্টাইলের ফুটবল খেলে!

যেখানে গোলের সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে বল নিজেদের পায়ে রাখার চেষ্টাই ছিল বেশি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!