কাট্টলী লকডাউনে করোনারোগী ১৪৫ থেকে নেমে এলো ১১ জনে

২১ দিনের জন্য লকডাউন করে মাত্র ১৪ দিনেই বড় সাফল্য এলো চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে। এর আগে মাত্র ১৪ দিনে ১৪৫ জন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় করোনা প্রতিরোধে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশদ্বার এই ওয়ার্ডটি লকডাউনের সুপারিশ করেছিল। ১৭ জুন থেকে লকডাউন করা হয় এই ওয়ার্ড।

জানা গেছে, লকডাউনের ১৪ দিনের মাথায় ওই ওয়ার্ডে আগের আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে গেছেন। তবে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন। এদের মধ্যে তিনজনের দ্বিতীয় টেস্টে নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে। তবে এই ১৪ দিনে ওই এলাকার আগের আক্রান্তদের মধ্যে তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন। সে হিসেবে ১৪ দিনে নতুন করোনা আক্রান্ত রোগী আছেন ১১ জন। তবে প্রশাসন যেভাবে হাঁকডাক দিয়ে লকডাউন শুরু করেছিল, তা পুরোপুরি কার্যকর করতে পারলে আরও ভালো ফলাফল আসতে বলে অনেকের ধারণা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামুসদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উত্তর কাট্টলীতে লকডাউনের চমৎকার সুফল আমরা পেয়েছি। যদিও শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় লকডাউনে বেগ পেতে হয়েছে। তবুও ১৪ দিনে নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ জন। এর আগের ১৪ দিনে আক্রান্ত ছিল প্রায় ১০ গুণ।’

কাট্টলী লকডাউনে করোনারোগী ১৪৫ থেকে নেমে এলো ১১ জনে 1

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন মঞ্জু জানান, ‘১৪ দিনে নতুনভাবে আক্রান্ত ১৪ জনের মধ্যে তিনজনের দ্বিতীয় দফা টেস্টে নেগেটিভ এসেছে। সেই হিসেবে নতুন রোগী ১১ জন। তবে আগের ১৪৫ জনের মধ্যে ৩ জন মারা গিয়েছেন। বাকিদের প্রায় সবারই নেগেটিভ এসেছে টেস্টে। কয়েকজনের ফলাফল এখনও না এলেও তাদের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ১৪ দিনে সাড়ে ৪ হাজার পরিবারের কাছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আমরা খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। দৈনিক তিন মণ তাজা মাছ নিয়ে আমাদের ভ্যানগাড়ি পুরো ওয়ার্ডে ঘোরে। যার প্রয়োজন হয় সর্বোচ্চ এককেজি নিতে পারেন। এছাড়া প্রতিদিন দুই হাজার ব্যক্তির মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছি আমার পক্ষ থেকে।’

প্রসঙ্গত, প্রথমে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ছিল ওই এলাকার সকল শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা হবে। কঠোরভাবে সব কিছুই বন্ধ রাখা হবে, এমনকি ওষুধের দোকানও। পরে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের আলোকে শিল্পকারখানাগুলো চালু রাখা হল। ওই ওয়ার্ডেই আছে প্রায় দেড়শ শিল্পকারখানা। পাশাপাশি ওষুধের দোকানও খোলা রাখা হয়। লকডাউন কার্যকর করার নিয়োজিত ব্যক্তিদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই লকডাউন মানেননি। ফলে কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পড়ে তাদের গুণতে হয়েছে জরিমানাও।

তবে ১৪ দিনের মাথায় এসে প্রশাসনই শিথিল করে দেয় লকডাউন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ওষুধের দোকানের পাশাপাশি মুদি দোকানগুলোও খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সরেজমিনে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সংলগ্ন সড়ক দিয়ে কর্নেল জোনস সড়কের শেষ মাথায় গিয়ে দেখা গেছে স্বর্ণের দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান এমনকি খেলনার দোকানও চালু করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কর্নেল জোনস সড়কের প্রবেশপথটি বাঁশ দিয়ে বন্ধ করা। তবে বাঁশের ফাঁক গলে ঠিকই মানুষজন কাট্টলীতে প্রবেশ করছেন ও বের হচ্ছেন। একই চিত্র পাশের মসজিদ গলি, ঈষাণ মহাজন সড়ক, বিশ্বকলোনিসহ অন্যান্য প্রবেশদ্বারেও।

পুরো ওয়ার্ড ঘুরে অযথা ঘুরোঘুরি, দলে দলে বিভক্ত হয়ে আড্ডাবাজি, রাস্তায় উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকা মানুষদের দেখে বোঝার কোন উপায় ছিল না করোনা ঠিকাতে এই এলাকা লকডাউন করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুল ওয়ারিশ বলেন, ‘এতটা ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। ১৪ দিন লকডাউনে আমরা যে সুফল পেয়েছি তা ধরে রাখতে হবে। আমরা মনিটরিং আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিচ্ছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!