কাজের টোপে মেয়েপাচার, পাতানো জালে পা দিলেই ঠিকানা যৌনপল্লী

পাচারচক্র ওঁৎ পেতে আছে চট্টগ্রামেও

কখনও বিয়ের প্রলোভন, কখনও কাজের লোভ দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকেও নারী, কিশোরী ও তরুণী পাচার হচ্ছে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। কাউকে না জানিয়ে রাতের আধারে এসব নারী ও কিশোরীরা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে দালালের হাত ধরে। এভাবে পাচার হওয়া খুব সামান্য সংখ্যক মেয়েকেই সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টায় দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। পাচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশি নারীদের সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত করে পাচারকারী সিন্ডিকেটগুলো। এর একটি গ্রুপে মধ্যবিত্তদের। আরেকটি গ্রুপে নিম্ন মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্ত নারীদের ভারত থেকে দুবাইয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়। আর নিম্ন মধ্যবিত্ত নারীদের ভারতে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়।

সবশেষ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম থেকে ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া এক কিশোরীকে ঢাকা থেকে উদ্ধার করেছে র‌্যাব। এ ঘটনায় ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী এলাকায় টানা তিন দিন অভিযান চালিয়ে ফাতেমা বেগম (৩০) নামের এক নারীসহ মো. নাঈম (২২), আসাদুজ্জামান (২৭) নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব জানিয়েছে, পাচার হতে যাওয়া ওই কিশোরী চট্টগ্রাম নগরীর এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করত। সেখানে এক তরুণীর মাধ্যমে নাঈমের সাথে তার পরিচয় হয়। নাঈমের বিয়ের প্রলোভনে গত ১৩ ডিসেম্বর ওই কিশোরী সেই বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। একদিন হাটহাজারীতে ফাতেমার বাসায় থেকে পরদিন ঢাকায় চলে যায়। যে বাসায় মেয়েটি কাজ করত, সেখান থেকে খবর পেয়ে তার বাবা হাটহাজারী থানায় জিডি করেন। পরে র‌্যাব তদন্তে নেমে বুধবার রাতে ঢাকার ফকিরাপুল এলাকার একটি বাস থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। এর আগে ঢাকায় ওই কিশোরীকে দারুস সালাম এলাকার একটি বাসায় এক দিন আটকে রাখা হয়েছিল।

সবচেয়ে বেশি পাচার ভারতে

বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি নারী পাচার হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা পাচারকারী সিন্ডিকেট চাকরিসহ নানা লোভ দেখিয়ে ২০-৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে নারীদের বিক্রি করে দিচ্ছে ভারতীয় সিন্ডিকেটের কাছে। সেখানে আবার নানা হাত ঘুরে অনেকেরই ঠিকানা হয় পতিতাপল্লী। তারা সেখানে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

বাংলাদেশ থেকে কত নারী প্রতিবছর পাচার হয়, সরকারিভাবে তার হিসাব না থাকলেও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৮টি রুট দিয়ে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার নারী, শিশু ও কিশোরী ভারতে পাচার হচ্ছে।

চলতি বছর ভারতের বিভিন্ন শহরে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে ২ থেকে ৫ বছর জেল খেটে দেশে ফিরেছেন কয়েক শত নারী, কিশোরী ও তরুণী। এর মধ্যে বেশিরভাগই কিশোরী। জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির তথ্য মতে, গত ১০ বছরে ভারতে পাচার হওয়া ২ হাজার নারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বেসরকারি সংস্থার তথ্য থেকে জানা যায়, ভারতে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সেখানকার সরকারি ও বেসরকারি সেফহোমে এখনও কয়েকশত বাংলাদেশী নারী রয়েছেন।

পাচারের শিকার বেশিরভাগ নারীই দরিদ্র পরিবারের। ভালো কাজের টোপ ফেলে ভারত ও আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। নানা কৌশলে সেখানে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় অত্যাচার। বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়। অবরুদ্ধ জীবনে দেশে ফেরার পথও পায় না তারা। শেষপর্যন্ত তাদের লাগানো হয় যৌনব্যবসায়।

ভারত থেকে ফিরে আসা এক নারী জানান, এক পাচারকারীর খপ্পরে পড়ে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে স্বামী-স্ত্রী মিলে ভারতের মুম্বাই শহরে যান। মুম্বাইয়ে কাপড়ের দোকানে ভালো বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে তাদেরকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতার এক দালাল ট্রেনে করে তাদেরকে মুম্বাই নেওয়ার তিনদিন পর বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার অপরাধ দেখিয়ে স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয় দালালরা। পরদিন রাতে সংঘবদ্ধ দালালচক্র তাকে পুনের বুধওয়ার পেথ নামক একটি নিষিদ্ধপল্লীতে মোটা অংকের টাকায় বিক্রি করে দেয়। নিষিদ্ধপল্লীতে অবস্থানকালে তাকে দেহব্যবসা করার জন্য মারধর করলে রাতের আধারে পালিয়ে কাছের এক থানায় আশ্রয় নেন তিনি। পুলিশ আদালতে পাঠালে তাকে দোষী করে আড়াই বছরের সাজা দেয়। সাজাভোগ শেষে দেশে ফেরার কাগজ তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় ৮০ দিন। তারপর স্বামীকে নিয়ে দেশে ফেরেন ওই নারী।

মধ্যপ্রাচ্যের যৌনবাণিজ্যের শিকার বাংলাদেশি তরুণীরা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা দুবাইপ্রবাসী আজম খান দুবাইয়ে চাকরির কথা বলে দেশ থেকে গত আট বছরে সহস্রাধিক কিশোরী-তরুণীকে দুবাই পাচার করেছেন। তিনি ও তার সহযোগীরা পাচার হওয়া এসব মেয়েদের অনেককে বাধ্য করেছেন যৌনকর্মী হিসেবে ও ডান্স ফ্লোরে কাজ করতে। গত বছরের জুলাইয়ে এই আজম খানকে দুই সহযোগীসহ রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। তার সঙ্গে পাচার হওয়া বেশ কিছু অডিও-ভিডিও ক্লিপও সিআইডি পেয়েছে, যেগুলোর একটিতে এক তরুণীকে অনুনয়-বিনয় করে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাইয়া আমার নাম…। ভাইয়া বাড়িতে আমার মা খুব অসুস্থ। আমি ছাড়া মাকে দেখার আর কেউ নেই। আমার ভিসার মেয়াদ তিন মাস হয়েছে। আমার ভিসার মেয়াদ আর বাড়াবেন না। আমাকে দেশে ফিরতে দেন।’

নারী নিয়ে ব্যবসা করেই আজম খান দুবাইয়ে তিনটি ফোর স্টার ও একটি থ্রি স্টার হোটেলের মালিক হয়েছেন। নিজের এসব হোটেলে কাজ দেওয়ার নাম করে দেশ থেকে ১৫-২০ বছরের মেয়েদের অর্থের লোভ দেখিয়ে দুবাই পাচার করতেন আজম খান। তাদের প্রথমে কিছুদিন কাজে রাখার পরই শুরু হতো নির্যাতন। নিয়ে যাওয়া হতো ডান্স বারে। পরে জোর করে দেহব্যবসায় নামানো হতো। আজম খানের এই অপকর্মের ইন্ধনদাতা হিসেবে তার ভাইও আছে। পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছে তার চক্রে।

জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত আজম খানের সহযোগী ডায়মন্ডসহ আরো অনেক দালাল ওই সব তরুণীকে সংগ্রহ করে নাচের প্রশিক্ষণ দিত। এরপর তাদের মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পাওয়ার কথা বলে দুবাই পাঠানো হতো। এ ক্ষেত্রে লোভে ফেলার জন্য ২০-৩০ হাজার টাকা অগ্রীমও দিত পাচারকারীরা। অগ্রিম টাকা দেওয়াসহ তাদের দুবাই যাওয়ার খরচও বহন করত পাচারকারীরা। কিন্তু দুবাইয়ের হোটেলে নেওয়ার পরই বদলে যায় দালালদের চেহারা।

তবে শুধু আজম খান একা নন, তার মতো আরও অনেকেই ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি দেশে পাচার করে যাচ্ছে বাংলাদেশি কিশোরী, নারী ও তরুণী। কাউকে কাউকে জিম্মি করে রেখে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণ। করোনার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক খানিকটা কমলেও পাচারকারীর বিভিন্ন কৌশলে সক্রিয় রয়েছে যথারীতি। গত অক্টোবরে নারী পাচারকারীচক্রের ১১ সদস্যকে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪। এরা হলেন মূল হোতা কামরুল ইসলাম জলিল ওরফে ডিজে কামরুল, রিপন মোল্লা, আসাদুজ্জামান সেলিম, নাইমুর রহমান, মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার চক্রের হোতা নুরুন্নবী ভুইয়া রানা, আবুল বাশার, আল ইমরান, মনিরুজ্জামান, শহিদ শিকদার, প্রমোদ চন্দ্র দাস ও টোকন। নাচ শেখানোর কথা বলে তরুণীদের প্রথমে তারা ড্যান্স ক্লাবে ভেড়ায়। এরপর সুযোগ বুঝে দেওয়া হতো বিদেশ যাওয়ার অফার। বিদেশে নাচ করলে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন হবে। এমন ফাঁদে পড়লেই নারীদের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পাচার করা হতো। এভাবে ভারতে পাচার করা হয়েছে শতাধিক নারীকে। অন্যদিকে সৌদি ও মধ্যপ্রাচ্যে গেলে শুধু বাগানের মালি বা বাসা-বাড়িতে বুয়ার কাজ করে প্রতি মাসে লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এজন্য বিদেশ যেতে কোনো খরচ হবে না। আর সব ব্যয় বহন করবে এজেন্সি— এমন প্রলোভন দেখিয়েও পাচার করা হয়েছে তিন শতাধিক নারীকে। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে চার শতাধিক নারীকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব ছাড়াও বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে পাচারকারী চক্রের হোতা ডিজে কামরুল ও নুরুন্নবী সিন্ডিকেট।

চট্টগ্রামেও সক্রিয় লিটন-আজাদের পাচার সিন্ডিকেট

রাজধানীর পাশাপাশি চট্টগ্রামেও সক্রিয় মানব পাচারকারী লিটন-আজাদের সিন্ডিকেট। ভালো বেতনে চাকরির লোভ দেখিয়ে ইরাকে মানব পাচার করছে এই চক্র। এর মধ্যে নারীদের সেখানে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। আর অন্যদিকে পুরুষদের আটকে রেখে দেশে থাকা তাদের স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা মুক্তিপণ। গত সাত বছরে এভাবে ইরাকসহ আশপাশের দেশে পাচার করা হয়েছে দুই শতাধিক নারী ও পুরুষকে। এর মধ্যে অন্তত ৪০ জন নারী। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে পাচারকারী চক্রের প্রধান লিটন মিয়া (৪৪) ও তার সহযোগী আজাদ রহমান খানকে (৬৫) গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য দিয়েছেন এই দুজন।

দেশে–বিদেশে এই চক্রের ১৫-২০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে। চক্রের সদস্যরা রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রামে সক্রিয় রয়েছে। চক্রটি ভালো চাকরির লোভ দেখিয়ে ইরাকে নেওয়ার জন্য একেকজনের কাছ থেকে তিন-চার লাখ টাকা নিত। ইরাকে নেওয়ার পর পুরুষদের ‘সেফ হোমে’ আটকে রেখে আরও দু-তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করত। অন্যদিকে নারীদের সেখানে নেওয়ার পর বিক্রি করে দেওয়া হতো। ইরাক ছাড়াও কিছু নারীকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে পাচার করেছেন তারা। চাকরিপ্রার্থীদের প্রথমে বাংলাদেশ থেকে টুরিস্ট ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে নেওয়া হত। সেখানে দুই একদিন অপেক্ষার পর ইরাকে পাচার করত। সেখানে কয়েকটি সেফ হাউসে রেখে সুবিধাজনক সময়ে বিক্রি করে দেওয়া হত।

র‌্যাব জানিয়েছে, লিটন মিয়া আজাদকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালের নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের প্রলোভনে ফেলতেন। এছাড়া পার্লারের কর্মী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেলসগার্ল বা নারী বিক্রয়কর্মীরাও তাদের লক্ষ্য ছিল। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের আকৃষ্ট করা হত। লিটন মিয়া অন্য এক কৌশলও নিতেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজের ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিয়ে করেছেন অন্তত ছয়টি। এদের মধ্যে পাঁচজনকেই চাকরি দেওয়ার কথা বলে ইরাকে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দিতেন লিটন। এমনই এক ‘স্ত্রী’ ইরাক থেকে পালিয়ে এসে জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে তাকে ইরাকে নিয়ে যাওয়ার পরই একটি ‘সেফ হোমে’ রাখা হয়। সেখানে তিনি আরও ৩৫ জন নারীকে দেখতে পান। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে ওই স্ত্রী পালিয়ে যান। পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন।

বিয়ের নামে পাহাড়ি তরুণীদের চীনে পাচার

পার্বত্য চট্টগ্রামের দরিদ্র তরুণীদের বিয়ের ফাঁদে ফেলছে চীনা নাগরিকরা। চীনে নিয়ে গিয়ে কয়েক মাস সংসার করার পর তাদের সেখানকার বিভিন্ন পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। এসব কাজে বাংলাদেশ ও চীনে একাধিক শক্তিশালী চক্র জড়িত রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অভিনব কায়দায় এই নতুন রুটে নারী পাচার হচ্ছে। ম্যারেজ মিডিয়ার আড়ালে চক্রের সদস্যরা এরই মধ্যে অনেক মেয়েকে চীনে পাচার করেছে।

২০১৮ সালের শুরুতে সুবর্ণ চাকমা নামের এক পাহাড়ি তরুণীকে পাচার করার সময় উদ্ধার করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সঙ্গে গ্রেপ্তার হয় এক চীনা নাগরিকসহ ৩ জন। সেই সূত্র ধরে বিয়ে করে চীনে যাওয়া মেয়েদের এক রহস্যের দরজা উন্মোচিত হয়। অনুসন্ধান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, চীনা নাগরিকরা বাংলাদেশে এসে বিয়ের পর চীনে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মাস পর তাদেরকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অন্ধকার জগতে বিক্রি করে দিচ্ছে। আর উন্নত জীবনের আশায় মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে পার্বত্য জেলার মেয়েরা পাচারের শিকার হচ্ছেন।

সুবর্ণ চাকমা নামের ওই পাহাড়ি তরুণীকে উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার চীনা নাগরিকসহ অন্যরা জানায়, মারশী চাকমা, ইলা চাকমা ও হেলেনা চাকমাসহ বেশ কয়েকজন নারীকে চীনে পাঠিয়েছে তারা।

ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরে তদন্ত করে জানতে পারে, বাংলাদেশের ম্যারেজ মিডিয়াগুলো এসব মেয়েদের তথ্য সংগ্রহ করে চীনা মিডিয়াগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে চীনা পুরুষরা বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশি ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে ওই সব মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বিয়ে করে। এছাড়া পার্বত্য জেলার মানুষ কম শিক্ষিত, সহজ-সরল এবং নিম্ন আয়ের। চীনা যুবকদের ফাঁদে তারা সহজেই পা দেয়, চেহারা ও ধর্মের মিল থাকায় বিয়েতে তেমন জটিলতা হয় না। কোর্টের মাধ্যমে বিয়ে করে চীনা দূতাবাসে নিয়ে যাওয়া হয় এসব মেয়েকে। পরে দূতাবাসের অনুমতি নিয়েই নববধূ হিসেবে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তিন থেকে চার মাস সংসার করে তাদের চীনের পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।

কয়েকজন চীনা নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে ডিবি জানতে পারে, সেদেশের পতিতালয়ে অধিকাংশ নারীই নেপাল এবং মিয়ানমারের। তবে চীনা পুরুষরা একরাতের সঙ্গী হিসেবে চীনা মুখ বেশি পছন্দ করে। বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকার মেয়েদের সঙ্গে চীনের মেয়েদের চেহারা মিলে যাওয়ায় তাদের চাহিদা বেশি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!