কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামে চলছে সবুজ মেলা

চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামে ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে ১৫ দিনব্যপী ‘সবুজ মেলা ২০১৯’। মেলা চলবে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নগরীর পরিবেশ রক্ষার জন্য ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’ শিরোনামে এই মেলায় সার্বিক সহযোগীতা করছে পরিবেশবাদি গ্রুপ-তিলোত্তমা চট্টগ্রাম। বিভিন্ন নার্সারির ৫২টি স্টল মেলায় অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে এই মেলা।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে পরিবেশ রক্ষায় আমাদের করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা এবং দ্বিতীয় পর্বে রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেলার মেয়াদ আরো ১ সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শণার্থী মো.শিহাবউদ্দীন বলেন, ‘বাসার কাছেই ‘সবুজ মেলা’ হচ্ছে শুনে কয়েকটা ফুল, ফল ও ভেষজ গাছ নিতে এসেছি ছাদ বাগানের জন্য। পরিবার নিয়ে এসেছি। আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করছি। খুব ভালো লাগছে। বিভিন্ন নার্সারির নানা রকম গাছ এক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে। বাচ্চারা নতুন নতুন গাছের সাথে পরিচিত হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে এরকম ভালো উদ্দ্যোগের জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’

৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের(চসিক) বনায়ন ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী চৌধুরী জয় বলেন, মেয়রের ঐকান্তিক আগ্রহ ও উদ্দ্যোগে গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন সিটি গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত সবুজ মেলার আয়োজন করায় আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবুজ মেলায় এসে মানুষ এক জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা পাচ্ছে এবং তাদের পছন্দমত চারা সংগ্রহ করতে পারছে। তারা বাড়ির আশেপাশে,আঙ্গিনায়, ব্যালকনিতে, ছাদে চারা লাগানোর মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। যারা নতুন বাড়ি করবেন তাদেরকে আহ্বান জানাবো প্রতিটি বাসায় এমন ভাবে ব্যালকনি তৈরি করবেন যাতে দুই-তিনটা ব্যালকনির মধ্যে একটা বাগানের জন্য ব্যবহার করা যায়। প্রতিটা বাসার ছাদে ফুুল-ফল ও ভেষজ গাছের বাগান করুন। এতে পরিবারের চাহিদা মিটার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।

তিলোত্তমা চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সাহেলা আবেদীন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও আগামী প্রজন্মের জন্য এই শহরকে সবুজের আবহে সাজিয়ে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের পথ চলা।

সাধারণ জনগণকে বাগান করায় উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন গাছের চারা বিতরণ করছি। ‘সবুজ মেলা ২০১৯’ প্রকল্পে একমাত্র সংগঠন হিসেবে আমরা দায়িত্ব পালন করছি।

প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম বলেন, এক সময় আমাদের এই চট্টগ্রাম সবুজ-শ্যামলে ভরা ছিল। যেদিকে দুচোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। কিন্তু আমাদের অপরিণামদর্শী পদক্ষেপের কারণে দিন দিন সেই দৃশ্য পাল্টে যাচ্ছে। এখন চারিদিকে শুধু ইট-কংক্রিটের বিল্ডিং, নোংরা-আবর্জনার স্তুপ ছাড়া কিছুই চোখে পড়ে না । মানুষ গাছ, পাহাড় উজাড় করে বিল্ডিং ও রাস্তাঘাট বানাচ্ছে। যেই পরিমাণ গাছ কাটছে সেই পরিমাণ গাছ লাগাচ্ছে না। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য

এ সময় সিটি কর্পোরেশন মেয়রের উদ্যোগে বৃক্ষ মেলা বা সবুজ মেলা সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে তিনি মনে করেন।

আগামি প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়ার জন্য গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নাই বলে মনে করেন আলকরণ (৩১ নম্বর ওয়ার্ড) এর কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম। তাই চট্টগ্রাম সিটি করর্পোরেশনের সবুজ মেলার আয়োজন সময়োপযোগী । মানুষের বাঁচার জন্য অক্সিজেনের কোন বিকল্প নেই আর এই অক্সিজেন আমরা গাছ থেকে পাই। তাই গাছ লাগানোর কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন বয়সী বৃক্ষপ্রেমী দর্শণার্থীদের আগমনে জমে উঠেছে মেলা।

সবাইকে সবান্ধব মেলায় এসে বেশি বেশি গাছ কেনার আহ্বান জানান মেলার আয়োজকরা। চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ, সুন্দর,সমৃদ্ধ এবং বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত করার লক্ষ্যে মেয়র কর্তৃক ‘মেয়র গ্রীন এন্ড ক্লিন সিটি এওয়ার্ড’ ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এই অ্যওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

ক্যাটাগরি গুলো হলো-
১) পরিচ্ছন্নতা অ্যাওয়ার্ড,
২) সেরা বাগানি অ্যাওয়ার্ড,
৩) সেরা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান অ্যাওয়ার্ড,
৪) সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অ্যাওয়ার্ড ও
৫) সেরা সামাজিক সংগঠন অ্যাওযার্ড।

সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্বাচিত জুরিবোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগ থেকে অ্যাওয়ার্ড সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি ও ফরম সংগ্রহ করা যাবে।

অনুষ্ঠানের তথ্য পেতে

অনুষ্ঠান সম্পর্কিত আপনারা তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে ০১৮১৮৯০৬০৩৮ নম্বরে। এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং তিলোত্তমা চট্টগ্রামের যৌথ উদ্দ্যোগে ‘মেয়র গ্রীন এন্ড ক্লিন সিটি অ্যাওয়ার্ড’ ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরিতে আবেদন করার জন্য চট্টগ্রামবাসীকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এসবি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!