কাউন্সিলরের পরিকল্পনায় সোহেল হত্যা, চার্জশিটে ৫২ আসামি

প্রকাশ্য দিবালোকে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন সোহেলকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী থেকে শুরু করে হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী মোট ৫২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে পুলিশ।

যদিও হত্যার পর ঘটনাটিকে ‘গণপিটুনি’ বলে দাবি করেছিলেন সিটি করপোরেশনের সরাইপাড়ার কাউন্সিলর সাবের আহমেদ ও জাপা নেতা ওসমান খান। অভিযোগপত্রে তাদের দুজনকেই হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে এক ও দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে সরাইপাড়ার কাউন্সিলর সাবের আহমেদ ও জাপা নেতা ওসমান খানকে এক নম্বর ও দুই নম্বর আসামি করে বাকি ৫০ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অভিযোগপত্রে ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে আদালতে তা ফরওয়ার্ড করেছি। পরবর্তী ধার্য্য তারিখে সে বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।’

ডবলমুরিং থানা পুলিশ জানিয়েছে, মামলাটি তদন্ত করেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম। প্রথমদিকে এটিকে গণপিটুনি বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও পরে তদন্তে একে একে ৫২ জনের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজ, প্রত্যক্ষদর্শীসহ ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং গ্রেপ্তার দুই আসামির আদালতের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে এই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে ৩৫ জন চার্জশিটভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এরমধ্যে ২৩ এপ্রিল এই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. জাবেদ নগরীর আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। অভিযোগপত্র থেকে তাকে বাদ দেওয়ার আবেদনের পাশাপাশি এজাহারভুক্ত হালিম ও সোহেল নামের দুই আসামির খোঁজ না পাওয়ায় তাদেরও অব্যাহতির আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবের আহাম্মেদ এবং পাহাড়তলী রেলওয়ে বাজার সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাতীয় পার্টির নগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ওসমান খানকে। উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন শাহাদাত খান রাসেল, শওকত খান রাজু, শরীফ খান, আবদুর রহমান, সালাউদ্দিন ওরফে রাসেল মির্জা, আবদ্ল্লুাহ আল মামুন ওরফে জুয়েল মির্জা, আজাদ হোসেন, দিদারুল আলম, নুর মোহাম্মদ, মামুন, মাকসুদুর রহমান, মঞ্জুর আলম, আলাউদ্দিন, পারভেজ, বুলবুল আহম্মদ, মোবারাক হোসেন, শরিফুল আলম স্বপন, সাহাবুদ্দিন, রেদোয়ান ফারুক, খাইরুদ্দিন খান, সিরাজ, মো. লিটন, মহসীন, ফকির আহম্মদ, আলী ভান্ডারি, আবদুর রশিদ।

এ বছরের ৭ জানুয়ারি পাহাড়তলী বাজারে ‘গণপিটুনি’ দিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেলকে হত্যা করা হলেও পরের দিন ৮ জানুয়ারি বাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক সাবের হোসেন বলেছিলেন, ‘সোহেল মাদক ব্যবসাও করতেন। বিপরীতে সোহেলের পরিবারের দাবি, ওই বাজারে থাকা ওসমান খানের মাদকের আখড়া ভেঙ্গে দিয়েছিলেন সোহেল। সেজন্য তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন ওসমান। তার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সোহেলকে হত্যা করা হয়। ওই বাজারে আগে ওসমান খানের একটি জুয়ার আড্ডা ছিল বলেও জানিয়েছিলেন কাউন্সিলর সাবের আহমেদ।’

এ ঘটনায় নিহত সোহেলের ভাই শাকেরুল ইসলাম ৮ জানুয়ারি সাবের আহম্মেদ ও ওসমান খানসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও দেড়শ জনকে আসামি করে হত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে ডবলমুরিং থানায় মামলা করেছিলেন।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!